মঙ্গলবার, ৭ই অক্টোবর ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
২১শে আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

এক কেজি মসলার দাম দেড় লাখ টাকা!

নিউজ ডেস্ক

🕒 প্রকাশ: ০৪:১০ অপরাহ্ন, ২রা ডিসেম্বর ২০২৩

#

ছবি-সংগৃহীত

দামের কারণে কেশরকে ‘লাল সোনা’ বলা হয়ে থাকে। কেউ কেউ একে ‘সোনার মশলা’ বলেও উল্লেখ করেন। কেশর কিনতে গিয়ে পকেটে ছ্যাঁকা লাগে মধ্যবিত্ত পরিবারের। দেখতে সোনার কোনও চিহ্ন নেই। গুণেও নেই স্বর্ণের বাহার। তবে দামে সোনার কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছে কাশ্মীরের একটি মশলা। ছাড়িয়ে গিয়েছে রুপাকেও।

ভারত মশলার দেশ। প্রাচীন কাল থেকেই বিদেশে মশলার ব্যবসার জন্য বিখ্যাত ভারত। দেশের সেই মশলার সাম্রাজ্যে অন্যতম অবদান রয়েছে কাশ্মীরের।

কথা হচ্ছে কেশর নিয়ে। একগুচ্ছ সরু সুতোর মতো লাল বস্তুটিকে দেখলে মশলা বলে মনেই হয় না। অথচ, স্বাদে, গন্ধে রান্নায় তার কদরই আলাদা।

বিরিয়ানি থেকে শুরু করে মণ্ডা-মিঠাই, হেঁশেলে কেশরের ব্যবহার অনেক পুরনো। যত দিন গিয়েছে, দর আরও বেড়েছে এই মশলার। ভাল রান্নায় কেশর না হলে যেন চলেই না। সাধারণের সাধ্যাতীত কেশর। কারণ, এর দাম আকাশছোঁয়া। এক কেজি কেশরের দাম প্রায় দেড় লক্ষ টাকা। তাই সমস্ত রান্নায় ইচ্ছা থাকলেও কেশর ব্যবহার করা যায় না।

কেন এত দাম কেশরের? দুর্গম পাহাড়ি অঞ্চল কেশরের উৎপাদন ভূমি। কাশ্মীরের প্যামপোর শহরকে ‘কেশরের শহর’ বলা হয়ে থাকে। মূলত সেখানেই কেশর গাছের চাষ হয়। ক্রোকাস গাছ থেকে কেশর পাওয়া যায়। এই গাছে বেগুনি রঙের যে ফুল ফোটে, তার গর্ভদণ্ডগুলিই কেশর। সরু সুতোর মতো সেই কেশর পেতে ব্যবসায়ীদের অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়।

এক কিলোগ্রাম কেশর পেতে দুই থেকে তিন লক্ষটি ক্রোকাস ফুল লাগে। উৎপাদন প্রক্রিয়াও বেশ জটিল। সারা বছর ফুল মেলে না। তাই নানা কারণে কেশরের দাম বেড়ে গিয়েছে।

শুধু রান্নায় স্বাদ নয়, কেশরের স্বাস্থ্যগুণও রয়েছে। এতে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে। যা স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। এ ছাড়া কেশরের ক্রোসিন আর ক্রোসেটিন নামক দুই অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট ওজন কমাতে সাহায্য করে। মানসিক অবসাদও কমায়। নিয়ন্ত্রণে রাখে রক্তে শর্করার পরিমাণ।

সম্প্রতি কাশ্মীরে কেশরের উৎপাদন কমে এসেছে। ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, আগে একটি মরসুমে তিন থেকে পাঁচ বার গাছে ফুল হত। তা থেকে অনেক কেশর পাওয়া যেত। কিন্তু এখন মরসুমে মাত্র দুই থেকে তিন বার ফুল ফোটে।

আরো পড়ুন: ঐতিহ্যবাহী কালাই রুটি বিক্রি করে কুষ্টিয়ায় অনেক নারীর জীবিকা অর্জন

আবহাওয়ার পরিবর্তনকেই কেশরের উৎপাদন কমে যাওয়ার জন্য দায়ী করছেন ব্যবসায়ীরা। অনিয়ন্ত্রিত বৃষ্টি, অসময়ে বৃষ্টি এবং অত্যধিক গরম এই উৎপাদনের পথে প্রধান প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়িয়েছে।

বিজ্ঞানীদের মতে, কাশ্মীরে বৃষ্টি এবং তুষারপাতের ধরন বদলেছে। ১০ বছর আগেও যে সময়ে যে পরিমাণে তুষারপাত বা বৃষ্টি হত, এখন তা হয় না। যা কেশর ব্যবসাকে প্রভাবিত করেছে।

পাশাপাশি, নাগরিক সভ্যতার বিকাশও কেশর উৎপাদন হ্রাসের জন্য দায়ী। কেশরের ক্ষেতে ক্রমে ঢুকে পড়ছে নগর। ক্ষেত একটু একটু করে কমে আসছে। তার ফলেও আগের চেয়ে উৎপাদন কমেছে বলে দাবি।

পাহাড়ের বুকে কেশর ফোটাতে অত্যন্ত যত্ন এবং ধৈর্যের প্রয়োজন। পরিশ্রম অনুযায়ী চাহিদা কম এই মশলার। দামের কারণেই অনেকে তা কিনতে চান না। তাই কেশর ব্যবসায় আগ্রহ হারাচ্ছেন অনেকে।

এসি/ আই.কে.জে/

এক কিলো মসলা

সুখবর এর নিউজ পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

খবরটি শেয়ার করুন

Footer Up 970x250