সোমবার, ১৮ই আগস্ট ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
৩রা ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সর্বশেষ

*** হায়দরাবাদে বাংলাদেশি কিশোরী উদ্ধার, বেরিয়ে আসছে ভারত–বাংলাদেশ মানব পাচার চক্রের তথ্য *** হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার মাই টিভির চেয়ারম্যান নাসির উদ্দীন *** বাংলাদেশে ঢোকার অপেক্ষায় রাখাইন সীমান্তে আরও ৫০ হাজার রোহিঙ্গা *** অধ্যাপক আবুল বারকাতের জামিনে মুক্তি চেয়ে ১২২ নাগরিকের বিবৃতি *** যুদ্ধ বন্ধে পুতিনের প্রস্তাবের ‘পক্ষে’ ট্রাম্প *** অর্থ পাচার করে বিদেশে গড়ে তোলা ৪০ হাজার কোটি টাকার সম্পদের সন্ধান *** বাংলাদেশ যাতে মৌলবাদের অভয়ারণ্যে পরিণত না হয়: তারেক রহমান *** আওয়ামী লীগের সরকারের বিষয়ে জুলাই সনদে দাবিটা অতিরঞ্জিত: ডেভিড বার্গম্যান *** সাড়ে ৫ মাস পর হিলি স্থলবন্দর দিয়ে ভারতীয় পেঁয়াজ আমদানি *** পরিবেশ ছাড়পত্র নেওয়ার শর্তে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় প্রকল্প পাস

নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ গ্রেপ্তার: তথ্য, বিতর্ক ও গণমাধ্যমের ভূমিকা

এসএম শামীম

🕒 প্রকাশ: ০৪:১৫ অপরাহ্ন, ১২ই আগস্ট ২০২৫

#

রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) সাবেক উপাচার্য ড. নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহকে দুর্নীতির অভিযোগে গত বৃহস্পতিবার (৭ই আগস্ট) রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করেছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। 

দুর্নীতির অভিযোগে তার গ্রেপ্তারের ঘটনা দেশজুড়ে আলোড়ন তুলেছে। তবে এই গ্রেপ্তার শুধু একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, বরং এর সঙ্গে জড়িত আছে রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট, গণমাধ্যমের ভূমিকা এবং উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে চলমান অনিয়মের চিত্র।

এই প্রেক্ষিতে আমেরিকায় বাংলাদেশ দূতাবাসের প্রেস মিনিস্টার ও জেষ্ঠ সাংবাদিক গোলাম মোর্তোজা গত শুক্রবার (৮ই আগস্ট) তার ভেরিফায়েড ফেসবুক আইডিতে একটি ভিডিও বার্তা প্রকাশ করেন, যা মঙ্গলবার (১২ই আগস্ট) এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত ১১ হাজারের বেশি মানুষ দেখেছেন। 

তার বক্তব্যে উঠে এসেছে—কেন নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ একজন ঘৃণ্য প্রতীক হয়ে উঠেছেন এবং কীভাবে গণমাধ্যম কিছু ক্ষেত্রে তার মতো ব্যক্তিকে সামাজিকভাবে ‘পুনর্বাসিত’ করতে ভূমিকা রেখেছে।

উপাচার্যের দায়িত্বে থেকেও অনুপস্থিত ১২৫০+ দিন!

গোলাম মোর্তোজার বক্তব্য অনুযায়ী, চার বছরের উপাচার্য হিসেবে কলিমুল্লাহর মোট কর্মদিবস ছিল ১৪৬০ দিন। এর মধ্যে তিনি সাড়ে বারোশোরও বেশি দিন বিশ্ববিদ্যালয়ে উপস্থিত ছিলেন না। প্রতিদিন সকালে ফ্লাইটে সৈয়দপুর গিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের গাড়িতে ক্যাম্পাসে ঢুকে আবার বিকেলে ঢাকায় ফিরে আসতেন তিনি—এমন অভিযোগ কেবল দায়িত্বে অবহেলার নয়, এটা সুস্পষ্ট প্রশাসনিক ব্যর্থতা এবং দুর্নীতির ইঙ্গিত দেয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, যিনি ক্যাম্পাসে অবস্থান না করে ঢাকায় অফিস বসিয়ে দায়িত্ব পালন করেন, সেটি প্রাতিষ্ঠানিক নিয়ম এবং শিক্ষার্থীদের স্বার্থ—দুটোই লঙ্ঘন করে।

কলিমুল্লাহর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ

গোলাম মোর্তোজা উল্লেখ করেন, কলিমুল্লাহর বিরুদ্ধে প্রায় ৩০ কোটি টাকার দুর্নীতির সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে। এসব অভিযোগের মধ্যে আছে নিয়োগ বাণিজ্য, নির্মাণ কাজে অনিয়ম, নিজের পছন্দমতো ব্যক্তিদের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে বসানো ইত্যাদি।

এত বড় মাত্রার অনিয়মের প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও তাকে এতদিন ধরে বিচারের মুখোমুখি করা হয়নি—এটি প্রশাসনের দীর্ঘসূত্রতা ও বিচার ব্যবস্থার গতি নিয়ে প্রশ্ন তোলে।

গণমাধ্যম ও টকশোতে ‘পুনর্বাসন’!

সমালোচনার অন্যতম বড় অংশ ছিল গণমাধ্যমের প্রতি। গোলাম মোর্তোজা প্রশ্ন তুলেছেন—কেন একটি দুর্নীতিবাজ, দায়িত্বজ্ঞানহীন এবং গুজব রটনাকারী ব্যক্তিকে দেশের মূলধারার গণমাধ্যম বারবার টকশোতে আমন্ত্রণ জানিয়ে সামাজিকভাবে প্রতিষ্ঠিত করতে সহায়তা করেছে?

গণমাধ্যমের মূল দায়িত্ব হলো তথ্য যাচাই করে জনসাধারণকে সত্য অবহিত করা, গুজব বা ভুল তথ্য প্রচার নয়। কলিমুল্লাহর অতীত ও কাজকর্ম যাচাই না করে তাকে 'সত্যবাদী বুদ্ধিজীবী' হিসেবে উপস্থাপন করা গণমাধ্যমের গৌরবজনক দায়িত্বকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।

সমালোচনা বনাম গুজব: একটি গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্য

গোলাম মোর্তোজা পরিষ্কার করে বলেন—সরকারের সমালোচনা অবশ্যই গণতন্ত্রের অংশ। কিন্তু সমালোচনার নামে যদি গুজব ছড়ানো হয়, সেটি হয়ে দাঁড়ায় রাষ্ট্রবিরোধী কাজের শামিল। কলিমুল্লাহর বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, তিনি ভুয়া তথ্য ছড়িয়ে দেশ-বিদেশে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করতেন, সেনাবাহিনী এবং সরকারের বিরুদ্ধে অসত্য তথ্য প্রচার করতেন।

এগুলো যদি সত্য প্রমাণ হয়, তবে তা শুধু একটি অপরাধ নয়, বরং এটি একটি অনৈতিক কর্মকাণ্ড, যা দেশের নিরাপত্তা ও গণতান্ত্রিক কাঠামোকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।

তাহলে অন্য অভিযুক্তরা কোথায়?

গোলাম মোর্তোজার বক্তব্যে যুক্তি আছে—যদি কলিমুল্লাহ দুর্নীতির কারণে গ্রেপ্তার হন, তাহলে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলেও কেন তাদের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি?

আইনের চোখে সবাই সমান। যদি আইনের প্রয়োগ বাছবিচার করে করা হয়, তবে সেটি সুশাসনের সংকেত নয়, বরং পক্ষপাতমূলক আচরণের প্রমাণ।

গোলাম মোর্তোজা বলেন, নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ গ্রেপ্তার হয়েছেন দুর্নীতির অভিযোগে, কিন্তু গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সেটিকে ‘সরকারবিরোধী অবস্থানের’ প্রতিশোধ হিসেবে ব্যাখ্যা করার প্রবণতা সত্য এবং তথ্যের প্রতি মানুষের আস্থাকে দুর্বল করে।

গোলাম মোর্তোজা নাজমুল হাসান কলিমুল্লাহ

সুখবর এর নিউজ পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

খবরটি শেয়ার করুন