১৫ই আগস্ট বঙ্গবন্ধুর শাহাদাতবার্ষিকীতে সামাজিক মাধ্যমে শোক প্রকাশ করায় দেশের একদল শিল্পী, মিডিয়া ব্যক্তিত্ব ও সামাজিক নেতাকে ‘কালচারাল ফ্যাসিস্ট’ হিসেবে অভিযুক্ত করার ঘটনায় সরব হয়েছেন গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব, উপস্থাপক ও লেখক ডা. আবদুন নূর তুষার।
গতকাল শনিবার (১৬ই আগস্ট) ইউটিউব চ্যানেল ‘মানচিত্র’-এর এক কথোপকথনভিত্তিক আলোচনায় তিনি এই আখ্যার বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেন এবং এই বিতর্ককে ‘নিউ ফ্যাসিজম’ প্রতিষ্ঠার একটি ষড়যন্ত্র হিসেবে অভিহিত করেন। আজ রোববার (১৭ই আগস্ট) দুপুর দেড়টা পর্যন্ত ইউটিউবে প্রকাশিত ভিডিওটি প্রায় ১ লাখ ৩৫ হাজার বার দেখা হয়েছে।
‘কালচারাল ফ্যাসিস্ট’ কেন?
আলোচনায় তুষার বলেন, ‘একটা অযৌক্তিক ফ্যাসিবাদী সমাজ তৈরি করার প্রক্রিয়া চলছে... যাদের মুখে বাকস্বাধীনতার বুলি, তারাই এখন মানুষের বাকস্বাধীনতা হরণ করছে।’ তিনি সরাসরি দাবি করেন, একটি চক্র চায় সমাজকে মবতন্ত্র ও ভয়ভীতি দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করতে। ‘হাঁসের মাংস খাওয়ার নাম করে দুর্নীতির দোসর যারা, তারাই এখন শ্রদ্ধা প্রকাশেও বাধা দিচ্ছে,’—এমন ভাষ্য দিয়ে তুষার ক্ষমতাসীন মহলের নির্লজ্জ দ্বিচারিতা তুলে ধরেন।
‘তাহলে তারাও ফ্যাসিস্ট?’
তুষার বলেন, ২০২৪ সালের ১৯শে জুলাই যখন ‘অধিকাংশ গর্তে লুকিয়ে ছিল,’ তখন তিনি এবং অধ্যাপক আসিফ নজরুল মিলে শাহবাগে দাঁড়িয়ে বক্তৃতা দিয়েছিলেন। সে প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ‘আজ যারা চুপ, তারাও একদিন প্রশ্নের মুখে পড়বে।’
তুষার তার বক্তব্যে স্পষ্ট করে বলেন, যারা আজ তাকে ‘কালচারাল ফ্যাসিস্ট’ বলছেন, তারা নিজেরাই বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে স্ট্যাটাস দিয়েছেন। তার মতে, তাহলে সরকারে থাকা সংশ্লিষ্ট দুই উপদেষ্টাকেও একইভাবে অভিযুক্ত করা উচিত।
অধ্যাপক আসিফ নজরুল, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা। তুষারের মতে, তিনি বহু বছর ধরে ১৫ই আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে স্মরণ করে সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট করে এসেছেন।
মোস্তফা সরোয়ার ফারুকী, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কৃতি উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তুষারের দাবি অনুযায়ী, উপদেষ্টা হওয়ার আগে তিনি ‘৩২ নম্বর’ বঙ্গবন্ধুর বাসভবন ভাঙার পর পুনর্নির্মাণের আহ্বান জানিয়েছিলেন। তুষার বলেন, ‘আমি যদি কালচারাল ফ্যাসিস্ট হই, তাহলে তারা আমার চাইতেও বড় ফ্যাসিস্ট।’
বাকস্বাধীনতা বনাম মবতন্ত্র
ডা. তুষার আলোচনাজুড়ে রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে তীব্র হুঁশিয়ারি দেন। তিনি প্রশ্ন তোলেন— ‘আমি কাকে ভালোবাসব, কাকে স্মরণ করব, সেটাও কি এখন নির্দেশ দিয়ে দেবে?’ তিনি বলেন, এই সমাজ ‘ভালোবাসাহীন, মমতাহীন, শ্রদ্ধাহীন’ হয়ে উঠছে। আর এই ভয়ংকর দিকটাই তার স্ট্যাটাসের মূলবার্তা।
তিনি আরও বলেন—‘আমি আওয়ামী লীগ করি না, কিন্তু বঙ্গবন্ধুকে শ্রদ্ধা জানানো আমার অধিকার। কেউ সেটা রুখতে পারে না।’
১৫ই আগস্টে ডিজে পার্টি
আলোচনায় উল্লেখ করা হয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এলাকায় ১৫ই আগস্ট রাতে ডিজে পার্টির আয়োজন হয়েছিল, যা প্রশ্ন তোলে শোক দিবসের পবিত্রতা নিয়েও। তুষার বলেন, ‘আমি শোক পালন করব, কেউ ডিজে পার্টি করলে করুক—তাদের আনন্দের স্বাধীনতা থাকলে, আমার শোক প্রকাশের স্বাধীনতাও থাকবে।’
জনগণই দেখাবে সত্যিকার ফ্যাসিস্ট
তুষার বলেন, ‘গণতন্ত্রের মানে হচ্ছে মানুষের মতপ্রকাশের অধিকার রক্ষা করা। কে ফ্যাসিস্ট, সেটা রাস্তায় নয়—ভোটের বাক্সে ঠিক করবে মানুষ।’
তিনি স্পষ্ট করে বলেন, ‘আমি কারো কাছ থেকে কোনো সুবিধা নেইনি, আমাকে কেনার মতো মানুষ পৃথিবীতে নেই।’
খবরটি শেয়ার করুন