সোমবার, ২১শে জুলাই ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
৬ই শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সর্বশেষ

*** ১০ দিনের মধ্যে জুলাই সনদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে: আলী রীয়াজ *** জুলাই যোদ্ধাদের জন্য সরকারি চাকরিতে কোটা থাকছে না *** কুমিল্লা বোর্ডে স্থগিত এইচএসসি পরীক্ষা ১২ই আগস্ট *** এবার তিন নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করা কর্মকর্তাদের তথ্য চেয়ে ডিসিদের চিঠি *** ৪৮তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষার ফল প্রকাশ, উত্তীর্ণ ৫২০৬ *** খাদ্যে বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত নেতানিয়াহু *** বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক: গোপালগঞ্জে প্রশাসন চাইলে রক্তপাত এড়ানো যেত *** পাকিস্তানকে উড়িয়ে ৯ বছর পর জিতল বাংলাদেশ *** এক ব্যক্তি প্রধানমন্ত্রী, সংসদ নেতা ও দলীয় প্রধান হওয়ার বিষয়ে তিন দলের ভিন্ন প্রস্তাব *** এত ‘নির্দোষ, নিরপরাধ, নিষ্পাপ’ সরকার আমি দেখিনি: দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য

কিছু পণ্যে ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ক কমানো স্বস্তির সংবাদ

বিশেষ প্রতিবেদক

🕒 প্রকাশ: ০৭:৩৫ অপরাহ্ন, ২২শে জানুয়ারী ২০২৫

#

অবশেষে কিছু পণ্য–সেবায় ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ক কমিয়েছে এনবিআর। ভ্যাট বাড়ানোর দুই সপ্তাহের মধ্যে মুঠোফোন সেবা, রেস্তোরাঁ, নিজস্ব ব্র্যান্ডের পোশাক, মিষ্টি, নন–এসি হোটেল, ওয়ার্কশপ, ওষুধসহ আরো কয়েকটি খাতে কমানো হয়েছে। এনবিআরের এ সিদ্ধান্ত নিশ্চয় দেশবাসী এবং ব্যবসায়ীদের জন্য নি:সন্দেহে স্বস্তির সংবাদ। সরকার জনমতকে সম্মান জানিয়েছে। এতে গনতন্ত্রের সৌন্দর্য প্রকাশ পেয়েছে। 

বুধবার (২২শে জানুয়ারি) এ সংক্রান্ত চারটি আদেশ জারি করে এনবিআর। এনবিআরের পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এতে এসব পণ্য ও সেবার দাম বাড়বে না। সাধারণ মানুষ ও ব্যবসায়ীদের সমালোচনা ও প্রতিবাদের মুখে ভ্যাট বাড়ানোর দুই সপ্তাহের মধ্যে এ সিদ্ধান্ত নেয় এনবিআর। 

২০২৪-২৫ অর্থবছরের মাঝপথে এসে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) শর্ত পূরণে ৯ই জানুয়ারি এক অধ্যাদেশের মাধ্যমে শতাধিক পণ্য ও সেবায় ভ্যাট ও শুল্ক বাড়ানো হয়। উচ্চ মূল্যস্ফীতির এ সময়ে হঠাৎ বিপুলসংখ্যক পণ্য ও সেবায় ভ্যাট বাড়ানোর এ সিদ্ধান্তে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ে। বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠনও ভ্যাট বাড়ানোর সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানায়। পণ্য ও সেবার তালিকায় চাল, ডাল, আটা, ভোজ্য তেলের মতো পণ্য না থাকলেও যেসব পণ্য ও সেবার শুল্ক-কর বাড়ানো হয়েছে, এগুলোর বেশির ভাগ বর্তমান সময়ে প্রয়োজনীয় হওয়ায় তা খাদ্য বহির্ভূত মূল্যস্ফীতি উসকে দেবে বলে মনে করেছিলেন অর্থনীতিবিদ ও রাজনীতিকরা।

অর্থনীতিবিদরা অভিযোগ করেছিলেন, রাজস্ব আদায় বাড়াতে সরকার আগের সরকারের মতো শুল্ক-কর বাড়ানোর সহজ পথ বেছে নিয়েছে। সরকারের এ সিদ্ধান্তকে ‘গণবিরোধী' বলেও মন্তব্য করেছেন অনেকে। তারা বলেছেন, ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ক বৃদ্ধিতে নিত্যপণ্যের মূল্যে বিরূপ প্রভাব এখন অনিবার্য। মানুষের উপর আরো চাপ বাড়বে। তারা পরোক্ষ করের চিন্তা না করে প্রত্যক্ষ করের উপর জোর দেয়ার পরামর্শও দিয়েছিলেন। 

সরকারের এই সিদ্ধান্তের বিষয়ে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ অবশ্য বলেছিলেন, এতে ভোক্তার বাড়তি মূল্য গুণতে হবে না। নিত্যপণ্যের বাজারে ‘প্রভাব পড়বে না'। এনবিআরও একই সুরে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়ে দাবি করেছিল, মূল্যস্ফীতিতে ‘প্রভাব পড়বে না'। কিন্তু বাস্তবতা বলছে ভিন্ন কথা। ভ্যাট ও শুল্ক বাড়ানোর প্রভাব বাজারে এবং দৈনন্দিন জীবনে ঠিকেই পড়বে এবং সরকারের এই সিদ্ধান্তে মানুষের জীবনযাত্রা আরো ব্যয়বহুল হয়ে পড়বে এমন আশংকা শুরু থেকেই করা হয়। 

সরকারের এই সিদ্ধান্তের পেছনে কারণ হিসাবে জানা গিয়েছিল ঋণ দিতে আইএমএফ বাংলাদেশকে কর-জিডিপি অনুপাত ০.২ শতাংশ বাড়ানোর শর্ত দিয়েছে, টাকার অংকে যা ১২ হাজার কোটির বেশি। এই অর্থ ২০২৪-২৫ অর্থবছরের রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা চার লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকার সঙ্গে যোগ হবে। জুলাই-আগস্টের আন্দোলন ও ব্যবসা-বাণিজ্যে নানাবিধ সংকটে রাজস্ব আদায়ের পরিস্থিতি ভালো নয়। চলতি অর্থ বছরের চার মাসে রাজস্ব ঘাটতি প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা। এমন অবস্থায় বাড়তি রাজস্ব আদায়ের জন্যই এই পদক্ষেপ। সরকার আইএমএফের তৃতীয় কিস্তির টাকা পেতেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম অবশ্য বলেছিলেন, আইএমএফের চাহিদার সঙ্গে এ সিদ্ধান্তের কোন সম্পর্ক নেই।

তিনি বলেন, ‘বিশ্বের মধ্যে বাংলাদেশে ট্যাক্স আদায় সবচেয়ে কম। সরকার চায় ট্যাক্স, জিডিপি এমন জায়গায় থাক, যাতে বাংলাদেশের অর্থনীতির উন্নয়ন ঘটে। তাহলে সামনে দেশের মানুষেরও উন্নয়ন হবে। ম্যাক্রো ইকোনমি বাড়ানোর জন্য ট্যাক্স বাড়াতে হবে। এ ক্ষেত্রে আইএমএফের চাহিদার সঙ্গে এর কোনো সম্পর্ক নেই।’ 

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)-র সম্মানিত ফেলো ড. গোলাম মোয়াজ্জেম ডয়চে ভেলেকে বলেছিলেন, ‘সরকারের জন্য আইএমএফের তৃতীয় কিস্তির টাকাটা খুবই প্রয়োজন। এই কারণে হয়তো সরকার সবচেয়ে সহজ পথ হিসেবে এটা করেছে। আর্থিক পরিস্থিতি সামাল দিতে এটা করা হচ্ছে। কিন্তু সরকার আবার সরকারি কর্মচারীদের মহার্ঘ্য ভাতা দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। তাহলে তো স্ববিরোধিতা হয়ে গেলো। টাকা নেই বলেই তো আপনি এটা বাড়ালেন, তাহলে আবার খরচ বাড়াতে চাচ্ছেন কেন? নিচের গ্রেডে যারা চাকরি করেন, তাদের জন্য মহার্ঘ্য ভাতার প্রয়োজন হয়তো কিছুটা থাকতেও পারে। কিন্তু এই সুবিধা যারা বেশি পাবেন, তারা তো উপরের গ্রেডে চাকরি করেন। তাহলে অর্থ সাশ্রয় হবে কিভাবে? বরং রাজস্ব বাড়াতে সরকার বিকল্প পথ খুঁজতে পারতো।’

যা হোক স্বস্তির বিষয় হচ্ছে, সরকার অবশেষে বিশিষ্টজনদের সমলোচনা এবং যুক্তি আমলে নিয়েছে। জনগণের ভাষা বুঝতে পেরেছে। অতীতের  সরকারগুলোর মতো নিজ সিদ্ধান্তে গোঁ ধরে বসে থাকেনি। সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করতেও বেশি কালক্ষেপণ করেনি। মানুষের মনের ভাষা পড়তে পেরেছে এবং জনমতকে সম্মান জানিয়েছে। এর আগে সরকার যে অপারগ হয়ে ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ক বাড়িয়েছিল এটা সহজে অনুমেয়। সবাইকে নিশ্চয় তা অনুধাবন করতে হবে। এখন এই ঘাটতি মোকাবেলায় নতুন পরিকল্পনা করতে হবে। যারা ট্যাক্স দিচ্ছে তাদের উপর চাপ না বাড়িয়ে, এর আওতা বাড়াতে হবে। এ ক্ষেত্রে প্রত্যক্ষ করের আওতা যেমন বাড়াতে হবে, তেমনি কর ফাঁকির সংস্কৃতিও বন্ধ করতে হবে। বিদেশে পাচার হয়ে যাওয়া বিপুল পরিমাণ অর্থও দেশে ফিরিয়ে আনতে হবে। 

কেসি/কেবি


ভ্যাট প্রত্যাহার

সুখবর এর নিউজ পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

খবরটি শেয়ার করুন