সোমবার, ১৮ই আগস্ট ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
৩রা ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সর্বশেষ

*** হায়দরাবাদে বাংলাদেশি কিশোরী উদ্ধার, বেরিয়ে আসছে ভারত–বাংলাদেশ মানব পাচার চক্রের তথ্য *** হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার মাই টিভির চেয়ারম্যান নাসির উদ্দীন *** বাংলাদেশে ঢোকার অপেক্ষায় রাখাইন সীমান্তে আরও ৫০ হাজার রোহিঙ্গা *** অধ্যাপক আবুল বারকাতের জামিনে মুক্তি চেয়ে ১২২ নাগরিকের বিবৃতি *** যুদ্ধ বন্ধে পুতিনের প্রস্তাবের ‘পক্ষে’ ট্রাম্প *** অর্থ পাচার করে বিদেশে গড়ে তোলা ৪০ হাজার কোটি টাকার সম্পদের সন্ধান *** বাংলাদেশ যাতে মৌলবাদের অভয়ারণ্যে পরিণত না হয়: তারেক রহমান *** আওয়ামী লীগের সরকারের বিষয়ে জুলাই সনদে দাবিটা অতিরঞ্জিত: ডেভিড বার্গম্যান *** সাড়ে ৫ মাস পর হিলি স্থলবন্দর দিয়ে ভারতীয় পেঁয়াজ আমদানি *** পরিবেশ ছাড়পত্র নেওয়ার শর্তে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় প্রকল্প পাস

ডেইলি স্টারের অনুসন্ধানে রামপুরা-বনশ্রীতে বিজিবির হত্যাযজ্ঞ

এসএম শামীম

🕒 প্রকাশ: ০৩:৩৩ অপরাহ্ন, ৯ই আগস্ট ২০২৫

#

১৯শে জুলাই ২০২৪, সকাল ৯টা ৪৬ মিনিট। রামপুরার ওয়াপদা রোডে ভিড়ের মধ্যে দাঁড়িয়ে ২৪ বছরের তরুণ রমজান, গায়ে কমলা রঙের টি-শার্ট। সে জানত না—ভিড়ের দিকে তাক করা ছিল একটি মিলিটারি গ্রেড রাইফেল। ভিডিও ফুটেজের ২ মিনিট ৩৮ সেকেন্ডে শোনা যায় গুলির শব্দ। ওই দিন রামপুরা ও বনশ্রীতে অন্তত ২৩ জন মানুষ নিহত হন।

গত বুধবার (৬ই আগস্ট) ইংরেজি পত্রিকা দ্য ডেইলি স্টারের ইউটিউব চ্যানেলে প্রকাশিত অনুসন্ধান প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়েছে। রাষ্ট্রীয় বাহিনীর ভূমিকা, গুলিবর্ষণ ও দায়-দায়িত্ব নিয়ে তাদের বিস্তৃত অনুসন্ধানের ভিডিও, সাক্ষাৎকার ও তথ্য-উপাত্ত এখানে উপস্থাপন করা হয়েছে। শনিবার (৯ই আগস্ট) দুপুর ২টা ৩৪ মিনিটে এই প্রদিবেদন লেখা পর্যন্ত ভিডিওটি ২ লাখ ২১ হাজার ২৬৫ ভিউ হয়। 

প্রাথমিক তথ্য ও তদন্ত পদ্ধতি

দ্য ডেইলি স্টার বলছে, ‘অনুসন্ধান চালিয়ে দেখা গেছে—ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে রাষ্ট্রীয় বাহিনীগুলো কীভাবে নির্বিচারে বেসামরিক জনতার ওপর গুলি চালায়। প্রত্যক্ষদর্শীর বিবরণ, ফরেনসিক তদন্ত, সরকারি নথি ও প্রযুক্তিগত বিশ্লেষণ ব্যবহার করে ১৯শে জুলাইয়ের প্রতিটি ঘটনা বিশ্লেষণ করা হয়েছে।’

‘প্রযুক্তি অধিকার বিষয়ক গবেষণা সংস্থা টেক গ্লোবাল ইনস্টিটিউটের সঙ্গে যৌথভাবে, রামপুরা থেকে সংগৃহীত দুই শতাধিক ছবি ও ভিডিও বিশ্লেষণ করে, পোশাকের ডিজাইন, অস্ত্রপ্রয়োগ ও ভৌগোলিক অবস্থান অনুসারে ঘটনাপ্রবাহ পুনর্গঠন করেছে দ্য ডেইলি স্টার।’

আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন ও নেতৃত্ব

সেদিন রামপুরায় মোতায়েন ছিল বিজিবির ৫ ও ২৬ নম্বর ব্যাটালিয়ন। ২৬ নম্বর ব্যাটালিয়নের নেতৃত্বে ছিলেন লেফটেন্যান্ট কর্নেল রেদওয়ানুল ইসলাম। ডেইলি স্টার বলছে, ‘সেদিন তিনি সরাসরি জনতার দিকে গুলি চালিয়েছেন।’

প্রশাসনিক প্রস্তুতি

দ্য ডেইলি স্টারের অনুসন্ধান অনুযায়ী, ‘১৯শে জুলাইয়ের আগে নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা বাহিনীগুলোকে প্রস্তুত করতে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের নেতৃত্বে একটি কোর কমিটি গঠন করা হয়। ১৮ই জুলাই সেই কমিটির এক সভায় সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী (পলাতক) ও বর্তমান বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকীকে প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের নির্দেশ দেওয়া হয়।’

প্রত্যক্ষদর্শীর বয়ান

ডেইলি স্টারের সাংবাদিক ইব্রাহিম খলিল জানিয়েছেন-

‘সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার পর বিজিবির একটি নতুন প্লাটুন রামপুরা এলাকায় আসে। হাতিরঝিল থেকে ফায়ারিং শুরু করে, রামপুরা খালি করতে থাকে এবং বিটিভি ভবন দখল করে।’ ডেইলি স্টার বলছে, ‘এই ঘটনার বর্ণনা সরকারের অবস্থান ও বাহিনীর ব্যবস্থাপনা স্পষ্ট করে।’

সামাজিক প্রেক্ষাপট ও ছাত্র আন্দোলন

দ্য ডেইলি স্টার বলছে, ‘১৯শে জুলাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বানে আন্দোলনকারীরা, দেশের অন্যান্য এলাকার মতো রামপুরাতেও পূর্ণ শাটডাউন পালনের সিদ্ধান্ত নেন। তারা জানতেন না—স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়ংকর দিনগুলোর একটি অপেক্ষা করছিল তাদের জন্য।’

রমজানের ঘটনা—ভিডিও ফুটেজ ও সংযোগের বিশ্লেষণ

'১৯শে জুলাই ২০২৪: রমজানকে কে গুলি করেছিল তা ভিডিওতে দেখা যায় না, কিন্তু একই ভিডিওতে দেখা যায়, রমজানের গায়ে গুলি লাগার সময় ওয়াপদা রোডের মুখে টহল দিচ্ছিলেন বিজিবি ও পুলিশ সদস্যরা। সেই দিন দুপুরের আগে আন্দোলনে যোগ দিয়েছিলেন ১৭ বছর বয়সী কলেজ শিক্ষার্থী সমুদ্র।’

নিহত সমুদ্রের বাবা তাজুল ইসলামের বর্ণনা:

‘তখন বাজে বেলা ১১টা কী সোয়া এগারোটা। ওর আম্মুকে বললাম, সমুদ্রকে উঠতে দিও না। তার আম্মু সমুদ্রকে ডেকে বলল, তোমার আব্বু বাইরে দুজন মানুষকে মরতে দেখে এসেছেন, তুমি বের হয়ো না। আমিও বললাম, বাবা, বাইরে দেখে আসছি—দুজনকে গুলি করে মেরে ফেলেছে, তুই বের হস না।’

সমুদ্রের মা মাসুদা জামানের বর্ণনা:

‘শেষবার ফোন ধরেছিল সে আড়াইটায়। এরপর আমি আরও চারবার ফোন দিয়েছি—দুইবার ধরেনি। আড়াইটার পর আমি গোসল করেছি, নামাজ পড়েছি, তখন আনুমানিক পৌনে তিনটা বাজে। শেষবার যখন আমি চারটা চার মিনিটে ফোন দিই, তখন বলা হয়- ‘আপনার ছেলে গুলি খেয়েছে, আপনি ডেল্টা হাসপাতালে আসেন।’

ডেইলি স্টার বলছে, নিহত সমুদ্রের গায়ে সরাসরি গুলি লাগার কোনো ফুটেজ তাদের হাতে নেই।

কিন্তু প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা এবং অনুসন্ধানে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, সমুদ্র যেখানে এবং যে সময় গুলিবিদ্ধ হয়, সেই সময় রামপুরা টিভি সেন্টারের কাছেই বিজিবির একটি এপিসির পাশে দাঁড়িয়ে টাইপ ফিফটি সিক্স সাবমেশিন গান থেকে গুলি করতে দেখা যায় লেফটেন্যান্ট কর্নেল রেদোয়ানকে।’

নাদিমের স্ত্রী তাবাসসুম আক্তার নেহার বর্ণনা:

‘যখন স্টুডেন্টরা থানায় হামলা করেন, তখন আমার হাজবেন্ড ওখানেই সামনে ছিল। টিভি সেন্টারের এখানে থাকা বিজিবি সদস্যদের ফোন দিয়ে এখানে আসার আহ্বান জানায় পুলিশ। পুলিশ জানায়, এখানে অনেক ভাঙচুর করছে ছাত্ররা। তখন বিজিবিরা এগিয়ে যায় এবং গুলি করতে করতে যায়। প্রথম গুলিটা একটা বাচ্চার গায়ে লেগে ওই বাচ্চার দাদুর গায়েও লাগে—তখনই স্পট ডেড হয়ে যান। তারপরই আমার হাজবেন্ডের গায়ে গুলি লাগে।’

আহত কামরুল হাসানের বর্ণনা:

‘আমরা একত্রিত হয়ে ছাত্র ভাইয়েরা—প্রায় দুই-তিনশ মানুষ—স্লোগান দিয়ে মেরাদিয়া বাজারের দিকে এগোচ্ছিলাম। রোডের পাশে একটি ফাঁকা মাঠে ঢুকে পড়ি, ভাবলাম—ওরা যদি ওই দিক থেকে গুলি করে, তাহলে আমাদের শরীরের দিকে লাগবে না। আমরা আফতাব নগরের দিকে দেখি—ওদিকেও বিজিবির একটি টিম আক্রমণ করছে। হঠাৎ দেখি, আমার চারপাশে চার-পাঁচজন গুলিতে পড়ে গেছে। আমার পায়েও একটি গুলি এসে লাগে। যেদিকে হেঁটে গিয়েছিলাম, সেদিকে রক্তে ভরে যায়। আমি গুলি খাওয়ার ৪৮ ঘণ্টা পরে হাসপাতালে যেতে পেরেছি। অপারেশনে ঢুকে আমার পা কেটে ফেলতে হয়েছে।’

বনশ্রীর ঘটনার বিস্তারিত: লাল হেলমেট ও গুলির সাক্ষ্য

সন্ধ্যা ৬টা ১৪ মিনিট। ডেইলি স্টার বলছে, তাদের সংগ্রহ করা একটি ভিডিওতে দেখা যায়—বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের দুই সদস্য বনশ্রী জি ব্লকে প্রবেশ করছেন। তাদের একজনের মাথায় লাল হেলমেট, হাতে ডাল ও লাঠি। অন্যজন বিজিবি লেখা ট্যাকটিক্যাল ব্যাজ পরা, তার হাতে টাইপ ফিফটি সিক্স সাবমেশিন গান।

ভিডিওর ৯ সেকেন্ডে দেখা যায়, তিনি প্রথমে বাঁ দিকে গুলি চালান, এরপর কয়েক পা এগিয়ে ডানদিকে আরও একটি গুলি ছোড়েন।

আরেকটি ছবিতে দেখা যায়, যেখানে দ্বিতীয় গুলি ছোড়া হয়েছিল, সেখানে একজন নিথর হয়ে পড়ে আছেন। এরপর সেই অফিসার জি ব্লকের এভিনিউ রোডে ফায়ারিং পজিশনে দাঁড়িয়ে, জি ব্লক রোড ১-এর দিকে গুলি ছোড়েন।

প্রযুক্তিগত বিশ্লেষণ: একই অফিসার বনশ্রীর গুলির পেছনে

দ্য ডেইলি স্টার বলছে, ট্যাকটিক্যাল ব্যাজ পরা ওই বিজিবি সদস্য কে ছিলেন তা শনাক্তের চেষ্টা করা হয়। টেক গ্লোবাল ইনস্টিটিউটের বিশ্লেষণে দেখা গেছে—তার ইউনিফর্মের ডিজাইন ও ক্যামো প্যাচের সঙ্গে ১৯শে জুলাই রামপুরার ডিআইটি রোডে টহলরত একজন বিজিবি সদস্যের মিল পাওয়া যায়।

এরপর ওপেন সোর্স ফেসিয়াল রিকগনিশন প্রযুক্তির মাধ্যমে ওই অফিসারের একাধিক ছবি বনশ্রীর ভিডিওর ছবির সঙ্গে তুলনা করে মিল পাওয়া যায়।

ডেইলি স্টারের অনুসন্ধান অনুযায়ী, এই অফিসার ছিলেন লেফটেন্যান্ট কর্নেল রেদোয়ান। তিনি গুলি ছুড়েছিলেন বনশ্রী জি ব্লকের ১ নম্বর রোড লক্ষ্য করে। সেখান থেকে ৮৫ মিটার দূরে এক ফুটেজে দেখা যায়, ১৪ বছর বয়সী আশিকুলের দেহ তার বাসার উল্টো পাশে পড়ে আছে, কয়েকজন তাকে সরিয়ে নিচ্ছে।

প্রত্যক্ষদর্শী শাহ আলমের বক্তব্য:

‘আমার যতটুকু মনে পড়ে, একটা গুলি করেছে বিজিবি এদিক থেকে। আমার ধারণা—ওটাই আশিকুলের মাথায় লেগেছে। ও সাথে সাথে রাস্তায় পড়ে গেছে।’ 

ডেইলি স্টার বলছে, হাসপাতালে নেওয়ার পর একটি ভিডিওতে দেখা যায়—আশিকুলের বাম কানের নিচ দিয়ে গুলি ঢুকে ডান পাশ দিয়ে বেরিয়ে গেছে। চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। আশিকুল ইসলামের বয়স ছিল ১৪ বছর, সে নিব্রাস মাদ্রাসার অষ্টম শ্রেণির ছাত্র ছিল।

শাস্তি ও প্রশাসনিক কৌশল

ডেইলি স্টার বলছে, আমাদের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, সামারি কোর্ট মার্শালের মাধ্যমে লেফটেন্যান্ট কর্নেল রেদোয়ানের চাকরির জ্যেষ্ঠতা ছয় মাস পেছানো হয়েছে।

আইএসপিআর-কে এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে তারা বলেছে, ‘যেহেতু মামলাটি আদালতে চলমান, এ বিষয়ে আমাদের কোনো মন্তব্য নেই।’

গুলির প্রকৃত উৎস ও পরিস্থিতির পুনর্মূল্যায়ন

১৯শে জুলাইয়ের প্রতিটি হত্যাকাণ্ড ক্যামেরায় ধরা না পড়লেও, বিজিবির গতিবিধি ম্যাপ করে এবং নিহতদের অবস্থান ও সময় বিশ্লেষণ করে দেখা যায়—নিহত ও আহতরা ওই সব এলাকায় ছিলেন, যেগুলো বিজিবির নিয়ন্ত্রণে ছিল এবং যেখানে তারা মিলিটারি গ্রেড অস্ত্র নিয়ে টহল দিচ্ছিল।

আইন ভঙ্গ ও কর্তৃত্বের অপব্যবহার

ডেইলি স্টার বলছে, বাংলাদেশের ফৌজদারি কার্যবিধির নবম অধ্যায় অনুযায়ী, বেসামরিক জনসমাবেশে প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করার জন্য বিজিবি বা অন্য বাহিনীকে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট বা পুলিশ কমিশনারের উপস্থিতি বাধ্যতামূলক।

ঢাকা জেলা প্রশাসকের দপ্তর থেকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে পাঠানো এক নথিতে দাবি করা হয়—১৯শে জুলাই বিজিবির সঙ্গে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট উপস্থিত ছিলেন এবং সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত সাবমেশিন গান ও রাইফেল থেকে অন্তত ৯৭২ রাউন্ড গুলি চালানো হয়। এই নথিতে লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. রেদোয়ানুল ইসলাম-এর নাম উল্লেখ রয়েছে। তবে, ভিডিও ফুটেজ বিশ্লেষণে এসব দাবি পুরোপুরি মেলে না।

ম্যাজিস্ট্রেটের প্রভাব ও স্বাক্ষরের চাপ

নথিতে স্বাক্ষরকারী একাধিক নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তারা জানান—তালিকাটি সিভিল প্রশাসন নয় বরং বিজিবি তৈরি করে জেলা প্রশাসকের দপ্তরে জমা দেয়। তারা আরও বলেন, ২৬শে থেকে ২৮শে জুলাইয়ের মধ্যে বিজিবির কর্মকর্তারা তাদের ওপর চাপ প্রয়োগ করে নথিতে স্বাক্ষর করিয়ে নেন।

তবে, ভিডিও ফুটেজ বিশ্লেষণ ছাড়া এই দাবির স্বতন্ত্র যাচাই সম্ভব হয়নি বলে জানায় ডেইলি স্টার।

সরকারের স্বীকারোক্তি ও সাময়িক শাস্তিমূলক পদক্ষেপ

ডেইলি স্টার বলছে, বিজিবির পক্ষ থেকে স্বীকার করা হয়—‘রামপুরা এলাকায় ১৯শে জুলাই তারা ৯৭২ রাউন্ড প্রাণঘাতী গুলি ব্যবহার করেছে।’

মেজর জেনারেল (অব.) এ এন এম মনিরুজ্জামান, সভাপতি, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অফ পিস অ্যান্ড সিকিউরিটি স্টাডিজ, বলেন‘বিজিবি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীন একটি বাহিনী। তাদের নিজস্ব কর্মকর্তা নেই। সব নেতৃত্ব সেনাবাহিনী থেকে আসা কর্মকর্তারা দিয়ে থাকে। মহাপরিচালকের অধীনে ডিডি থাকেন—যিনি সেকেন্ড ইন কমান্ড। মহাপরিচালকের রিপোর্টিং লাইন সরাসরি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে।’

ঘটনাস্থলে মহাপরিচালক

ডেইলি স্টারের অনুসন্ধান অনুযায়ী, ১৯শে জুলাই বিজিবি যখন রামপুরায় নির্বিচারে গুলি চালাচ্ছিল, তখন ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন মেজর জেনারেল আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী। একটি ছবিতে লেফটেন্যান্ট কর্নেল রেদোয়ানের পাশে তাকেও দেখা যায়।

সরকারি ব্যাখ্যা ও সীমিত পদক্ষেপ

৫ই আগস্ট, বিজিবির মহাপরিচালক এক ব্রিফিং-এ বলেন, ‘সরকারি আদেশ ছিল। বিজিবির সর্বোচ্চ চেষ্টা ছিল যাতে একটি প্রাণও তাদের হাতে না যায়। এক-দুটো ঘটনা ঘটেছে, আপনারা দেখেছেন—একজন অফিসার এভাবে গুলি চালাচ্ছে। পরদিনই তাকে অপসারণ করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে ডিপার্টমেন্টাল ইনকোয়ারি হয়েছে। সর্বোচ্চ শাস্তির সুপারিশ করা হয়েছে যেন সেনাবাহিনীর অধীনে তা কার্যকর হয়।’

তবে ডেইলি স্টার জানায়, লেফটেন্যান্ট কর্নেল রেদোয়ান ছাড়া আরও অনেক বিজিবি সদস্যকে জনতার দিকে গুলি করতে দেখা যায়।

দৃশ্যমান প্রমাণ ও প্রত্যক্ষ গুলির চিত্র

ডেইলি স্টারের সাংবাদিক ইব্রাহিম খলিল বলেন: ‘আমার সামনে বিজিবি ও পুলিশ ফায়ার করতে করতে আবুল হোটেলের দিকে আসছিল। একরামুন্নেসা স্কুল পার হওয়ার পর ডেল্টা হাসপাতালের সামনে গিয়ে দেখি ডান পাশে একটি লাশ পড়ে আছে। পরে জানি, তার নাম ইসমাইল হোসেন—তিনি পেশায় রিকশাচালক।’

বিচারের অপেক্ষায় পরিবার ও অসমাপ্ত জবাবদিহি

এক বছর পার হলেও ১৯শে জুলাইয়ের আহত ও নিহতদের পরিবার এখনো জানে না—কবে তারা সুবিচার পাবে।

বিজিবি ডেইলি স্টার হত্যাযজ্ঞ

সুখবর এর নিউজ পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

খবরটি শেয়ার করুন