দেশের রাজনীতিতে প্রতীকের ভূমিকা, স্মৃতিনির্ভর ভোটার মনস্তত্ত্ব এবং মুক্তিযুদ্ধের রাজনৈতিক ব্যবহার নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্য করেছেন বিশিষ্ট সাংবাদিক ও দৈনিক যুগান্তরের জ্যেষ্ঠ সহকারী সম্পাদক মাহবুব কামাল।
গত রোববার (১০ই আগস্ট) বেসরকারি গ্লোবাল টেলিভিশনের টকশোতে অংশ নিয়ে পাঠকনন্দিত কলামিস্ট ও টকশো তারকা মাহবুব কামাল বলেন, আওয়ামী লীগ নিবন্ধন হারিয়েছে, ‘নৌকা’ তো তাদের নেই। এখন এনসিপি (জাতীয় নাগরিক পার্টি) নির্বাচন কমিশনকে বুঝিয়ে- ‘নৌকা মার্কা নিয়ে নির্বাচন করলে জিতে যাবে।’ তার ভাষায়, ‘গ্রামের মানুষ মনে করে, নৌকা মানেই বঙ্গবন্ধুর দল। প্রতীকের সঙ্গে আবেগ জড়িয়ে আছে।’
আজ মঙ্গলবার (১২ই আগস্ট) দুপুর আড়াইটায় এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত টেলিভিশনটির ইউটিউব চ্যানেলে টকশোর ভিডিও ক্লিপটি ২ লাখ ১৭ হাজার ৯৯ বার দেখা হয়।
স্মৃতি ও প্রতীকের প্রভাব
'কলামিস্টদের কলামিস্ট' হিসেবে পরিচিত মাহবুব কামাল বলেন, ‘মানুষ স্মৃতি ছাড়া বাঁচে না।’ এ কারণেই প্রতীকের পরিবর্তন বা ভুল ব্যাবহার জনগণকে সহজেই বিভ্রান্ত করে দিতে পারে। তিনি তুলে ধরেন, বহু ভোটার রয়েছেন যারা ১৯৫৪ সাল থেকে একটানা নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আসছেন, এবং তারা প্রতীকের মাধ্যমে দলের পরিচয় নির্ধারণ করেন, নাম দিয়ে নয়।
মুক্তিযুদ্ধকে ‘ক্যাশ’ না করার আহ্বান
আলোচনায় তিনি মুক্তিযুদ্ধকে বারবার রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করাকে ‘ক্যাশ করা’ এবং ‘সেলিং পয়েন্ট’ বানানোর প্রবণতা বলে চিহ্নিত করেন। তার মতে, ‘আমরা মুক্তিযুদ্ধকে গ্যাস করতে চাই না। এটা একটা জঘন্য ব্যাপার।’
তিনি বলেন, পূর্ববর্তী সময়ের সরকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি ও পরিচিতি ব্যবহার করে অতিরিক্ত প্রতীকায়নের পথে হেঁটেছে, যা এক পর্যায়ে ‘অশ্লীল কর্মকাণ্ডে’ পরিণত হয়েছে। মাহবুব কামাল বলেন, '‘আমি একসময় বিরক্ত হয়ে লিখেছিলাম—ঢাকার নাম বদলে ‘মুজিব সিটি’ করে দেন।’'
তিনি বলেন, ''আমি বলেছিলাম, সবকিছু থেকে বঙ্গবন্ধুর নাম সরিয়ে শুধু ঢাকা সিটির নাম ‘মুজিব সিটি’ করেন। যেমন- হো চি মিন সিটি, ওয়াশিংটন ডিসি ইত্যাদি। আর কোনো কিছুতে বঙ্গবন্ধুর নাম রাখা যাবে না।"
মুক্তিযুদ্ধের স্মারক ভাঙা ও রাজনৈতিক নিরবতা
২০২৪ সালের ৫ই আগস্টের পর দেশের বিভিন্ন স্থানে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিস্তম্ভ ধ্বংসের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এনসিপিও এতে অংশ নিয়েছে, তবে বিএনপিসহ প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর চুপ থাকা দুঃখজনক। এটি একটি জাতীয় স্মৃতির প্রতি অবহেলা বলেই তিনি মনে করেন।
এছাড়াও, বর্তমান সময়ে প্রতিটি রাজনৈতিক ইস্যুকে অতিরিক্ত দার্শনিক ব্যাখ্যায় উপস্থাপনের প্রবণতাকে ব্যঙ্গ করে তিনি বলেন, ‘এ দেশে এত ফিলোসফার জন্মেছে, মনে হয় আমরা কিছুই জানি না, কিছুই বুঝি না।’
খবরটি শেয়ার করুন