ছবি: সংগৃহীত
ফিলিস্তিনের গাজা অভিমুখী নৌবহরে ইসরায়েলি সেনাদের হস্তক্ষেপের আশঙ্কা করা হচ্ছে। ‘গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা’ নামের ওই নৌবহর থেকে জানানো হয়েছে, সাড়ে ৫ কিলোমিটার দূরত্বের মধ্যে ২০টিরও বেশি নৌযান দেখা গেছে। অল্প সময়ের মধ্যেই নৌবহরে হস্তক্ষেপ করতে পারে ইসরায়েলি সেনারা। খবর আল–জাজিরা ও রয়টার্সের।
ইসরায়েলের হুমকি উপেক্ষা করেই ফিলিস্তিনিদের জন্য ত্রাণ নিয়ে গাজার উপকূলের দিকে এগিয়ে চলে এই নৌবহর। বহরে থাকা আলমা নামের জাহাজটি এরই মধ্যে ইসরায়েলিদের ঘেরাওয়ের মধ্যে পড়েছে বলে ফ্লোটিলার স্টিয়ারিং কমিটির সদস্য ইয়াসেমিন আকর আল–জাজিরাকে জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ইসরায়েলিরা দুই দিক থেকে আলমা নৌযানকে ঘিরে ফেলেছে। কিছুক্ষণের মধ্যেই তারা হস্তক্ষেপ করতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
‘গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা’ সমুদ্রপথে গাজায় ত্রাণ নিয়ে যাওয়ার একটি বৈশ্বিক প্রচেষ্টা। এই নৌবহরে রয়েছে ৪০টির বেশি বেসামরিক নৌযান। এই বহরে প্রায় ৪৪টি দেশের ৫০০ মানুষের মধ্যে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, স্পেন, আয়ারল্যান্ড, ফ্রান্স, বেলজিয়ামসহ ইউরোপীয় পার্লামেন্টের নির্বাচিত প্রতিনিধিরা, আইনজীবী, অধিকারকর্মী, চিকিৎসক ও সাংবাদিক।
বহরে আছেন সুইডিশ জলবায়ু অধিকারকর্মী গ্রেটা থুনবার্গ। আরও রয়েছেন বর্ণবাদবিরোধী অবিসংবাদিত নেতা নেলসন ম্যান্ডেলার নাতি ম্যান্ডলা ম্যান্ডেলা।
এই বহরে থাকা ‘মিডিয়া ফ্লোটিলায়’ বাংলাদেশ থেকে অংশ নিয়েছেন আলোকচিত্রী শহিদুল আলম। তিনি গত মঙ্গলবার ইতালির একটি বন্দর থেকে ফ্লোটিলার প্রধান নৌযান ‘কনশানস’-এ ওঠেন। যাত্রা শুরুর পর নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে পোস্ট করা এক ভিডিও বার্তায় তিনি এ তথ্য জানিয়েছেন।
গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলার প্রথম বহর ৩১শে আগস্ট স্পেনের বার্সেলোনা থেকে যাত্রা শুরু করে। এরপর ১৩ই থেকে ১৫ই সেপ্টেম্বর তিউনিসিয়া ও ইতালির সিসিলি দ্বীপ থেকে আরও নৌযান এই বহরে যুক্ত হয়।
এ ছাড়া গ্রিসের সাইরাস দ্বীপ থেকে পরবর্তী সময়ে আরও কিছু নৌযান ত্রাণ নিয়ে বহরে যুক্ত হয়। সব মিলিয়ে বহরের নৌযানের সংখ্যা ৫০ ছাড়িয়ে যায়। তবে ইসরায়েলের ড্রোন হামলায় বিকল হয়ে এবং যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে পরে এ সংখ্যা ৪০–এ নেমে আসে।
এর আগে গত জুন মাসে গাজার দিকে ত্রাণ নিয়ে যাওয়া একটি নৌযান আটক করে ইসরায়েলি সেনারা। গাজা থেকে প্রায় ১৮৫ কিলোমেটার দূরে আন্তর্জাতিক জলসীমায় ‘ম্যাডলিন’ নামে নৌযানটি আটক করা হয়। ওই নৌযানে গ্রেটা থুনবার্গসহ ১২ জন অধিকারকর্মী ছিলেন।
পরে জুলাই মাসে নৌযান ‘হান্দালা’কে আটক করে নিয়ে যাওয়া হয়। নৌযানটিতে ১০টি দেশের মোট ২১ জন ছিলেন। পরে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়। ইসরায়েলের এসব পদক্ষেপ সে সময় ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ে।
ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস ২০০৭ সালে গাজায় ক্ষমতায় এলে সমুদ্রপথে অবরোধ শুরু করে ইসরায়েল। এর পর থেকে কয়েকবার এই অবরোধ ভাঙার চেষ্টা হয়। ২০২৩ সালের ৭ই অক্টোবরের পর থেকে গাজায় নির্বিচার হামলার পাশাপাশি সর্বাত্মক অবরোধ আরোপ করে ইসরায়েল।
তবে আন্তর্জাতিক চাপের মুখে কিছু ত্রাণ প্রবেশ করতে দেয় ইসরায়েল। সর্বশেষ যুদ্ধবিরতি ভেঙে ১৮ই মার্চ থেকে আবার সর্বাত্মক হামলা শুরু করে ইসরায়েল। পাশাপাশি অবরুদ্ধ এ উপত্যকায় ত্রাণ প্রবেশও বন্ধ করে দেয় দেশটি।
খবরটি শেয়ার করুন