ছবি: সংগৃহীত
ইসলামী ব্যাংকের শাখা ব্যবস্থাপকরা (ব্রাঞ্চ ম্যানেজার) এখন থেকে আর কোনো ঋণ দিতে পারবেন না। একই সাথে ঋণের সীমাও বাড়াতে পারবেন না তাঁরা। কেবল কৃষি খাতে তাঁদের ঋণ দেওয়ার ক্ষমতা বহাল রাখা হয়েছে। তবে ব্যাংকটির মোট ঋণের মাত্র ৩ শতাংশ দেওয়া হয় কৃষিতে।
ঋণ অনুমোদন সংক্রান্ত এক চিঠিতে এসব তথ্য জানানো হয়েছে। এতে আরো জানানো হয়, ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত যেকোনো ধরনের নতুন ঋণ বা ঋণের সীমা বৃদ্ধির অনুমোদন করবেন এমডি। ৫০ লাখ টাকার বেশি ঋণ বা ঋণের সীমা বৃদ্ধির অনুমোদন দেবে ব্যাংকের নির্বাহী কমিটি। তবে ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত কৃষিঋণের ক্ষেত্রে আগের ক্ষমতাই শাখা ব্যবস্থাপকদের হাতে বহাল থাকবে।
আর খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের পুনঃ অর্থায়নের আওতায় ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ অনুমোদন করতে পারবেন এমডি। এর বেশি হলে তা নির্বাহী কমিটি ও পরিচালনা পর্ষদে যাবে।
আগে সবক্ষেত্রে শাখা ব্যবস্থাপক ও জোন প্রধানেরা পদক্রম ভেদে সর্বোচ্চ ৭০ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ অনুমোদন করতে পারতেন, যার বড় অংশই যেত গ্রামীণ উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ীদের কাছে। নতুন সিদ্ধান্তের ফলে গ্রামীণ উদ্যোক্তাদের ঋণ পাওয়ার সুযোগ কমে এসেছে। এখন সব ঋণ দেওয়া হবে প্রধান কার্যালয়ের অনুমোদনে। এর মধ্যে ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ অনুমোদন করতে পারবেন ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি)।
গত ১৯ জুন ইসলামী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের ৩২৪তম সভায় এই সিদ্ধান্ত হয়। ওই সভাতেই পরিচালক ও চেয়ারম্যান হিসেবে যোগ দেন আহসানুল আলম। তিনি চট্টগ্রামভিত্তিক এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাইফুল আলমের ছেলে। এর আগে আহসানুল আলম ইউনিয়ন ব্যাংকের চেয়ারম্যান ছিলেন। ২০১৭ সালে ইসলামী ব্যাংকের মালিকানা নেওয়ার পর এবারই প্রথম পরিবারের সদস্যদের ব্যাংকে যুক্ত করে এস আলম গ্রুপ
ঋণ অনুমোদনসংক্রান্ত পর্ষদের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের জন্য ২০ জুলাই শাখা পর্যায়ে চিঠি দেন ব্যাংকটির এমডি মোহাম্মদ মুনিরুল মওলা ও মানবসম্পদ বিভাগের প্রধান মোস্তাফিজুর রহমান সিদ্দিকী। নানা অনিয়মের কারণে তারল্যসংকটে পড়ার পর বেসরকারি খাতের ইসলামী ব্যাংক এমন সিদ্ধান্ত নেয় বলে জানা গেছে।
এব্যাপারে খুলনার একটি শাখার ব্যবস্থাপক নাম প্রকাশ না করার শর্তে গণমাধ্যমকে বলেন, ‘এই অঞ্চলের নিম্নমধ্যম ও মধ্যম শ্রেণির অর্ধেক ব্যবসায়ী ইসলামী ব্যাংকের গ্রাহক। আগে তাঁরা কাঁচামাল কেনার জন্য সর্বোচ্চ ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ নিতেন। আমরাই স্বল্প সময়ে তা অনুমোদন করে দিতাম। এখন ১ টাকাও দিতে পারছি না। প্রধান কার্যালয়ে ফাইল পাঠালেও তাতে কোনো সাড়া মিলছে না।’
এব্যাপারে চট্টগ্রামের একটি শাখার একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আগে ভালো গ্রাহকেরা অল্প সময়েই ঋণ পেতেন। আমরা তাঁদের কোনো ঋণ দিতে পারছি না। এখন অনেক আমানতকারী এসে তাঁদের জমানো টাকার খোঁজখবর নিচ্ছেন।
ইসলামী ব্যাংকের জ্যেষ্ঠ মুখ্য কর্মকর্তা শাখা ব্যবস্থাপক পদে কর্মরত থাকলে আগে সর্বোচ্চ ১০ লাখ টাকা ঋণ দিতে পারতেন। এর ওপরের পদের ব্যবস্থাপকদের ২০ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ অনুমোদনের ক্ষমতা ছিল। আর বিভিন্ন অঞ্চলের প্রধান বা জোনাল প্রধানদের ঋণ অনুমোদনের সীমা ছিল ৭০ লাখ টাকা পর্যন্ত। সারা দেশে ইসলামী ব্যাংকের শাখা রয়েছে ৩৯৪টি। প্রতিটি শাখার অধীনে আছে একাধিক উপশাখা।
তবে এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে ইসলামী ব্যাংকের এমডি মুহাম্মদ মুনিরুল মওলা বলেন, ব্যাংকের সার্বিক অবস্থা বিবেচনা করে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। পরবর্তী সময়ে প্রয়োজন হলে আবার চালু করা হবে। বেসরকারি ও বিদেশি অনেক ব্যাংকেরই শাখা ও বিভাগীয় পর্যায়ে ঋণ অনুমোদনের ক্ষমতা নেই।
এম.এস.এইচ/
খবরটি শেয়ার করুন