রবিবার, ২২শে ডিসেম্বর ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
৮ই পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সর্বশেষ

*** সাধারণ মানুষ সংস্কার বোঝে না, তারা বোঝে যেন ভোট ঠিকভাবে দিতে পারে : ফখরুল *** বাংলাদেশকে আরও ৪০ কোটি ডলার দেবে বিশ্বব্যাংক *** নিষিদ্ধ পলিথিনের বিরুদ্ধে যৌথ অভিযান চলবে : পরিবেশ উপদেষ্টা *** ‘মহাকালের পাতায় হাসান আরিফের কৃত্তি লেখা থাকবে’ *** দুদক চেয়ারম্যান নিজের সম্পদের হিসাব দিলেন *** ওয়েজ বোর্ড সিস্টেম বাতিল করে সাংবাদিকদের নূন্যতম বেতন চালু করা উচিত : শফিকুল আলম *** রেমিট্যান্সে সুখবর : ২১ দিনেই এলো ২০০ কোটি ডলার *** রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ আটকানো খুব কঠিন হয়ে পড়েছে : পররাষ্ট্র উপদেষ্টা *** সন্ধ্যার মধ্যেই ৩ বিভাগে নামবে বৃষ্টি! *** মেছো বিড়াল হত্যার অভিযোগে মামলা, গ্রেফতার ২

কানাডা

কেন বিচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নিলেন ট্রুডো-সোফি দম্পতি

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

🕒 প্রকাশ: ০৫:৪৬ অপরাহ্ন, ৩রা আগস্ট ২০২৩

#

বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা শেষে জাস্টিন ট্রুডো ও নববধূ সোফি গ্রেগোয়ার - ছবি: সংগৃহীত

১৮ বছরের দাম্পত্য জীবন। তিন সন্তানের মা-বাবা তাঁরা। আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও সুপরিচিত এই জুটি। হঠাৎই তাঁদের বিচ্ছেদের ঘোষণা অনেককে বিস্মিত করেছে। অনেকের মনেই একটি প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে, কেন বিচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নিলেন কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো ও সোফি গ্রেগরি দম্পতি।

জাস্টিন পিয়েরে জেমস ট্রুডোর জন্ম ১৯৭১ সালের ২৫ ডিসেম্বর। কানাডার ২৩তম প্রধানমন্ত্রী তিনি। সোফি গ্রেগরি বেড়ে উঠেছেন মন্ট্রিয়লে। শৈশব থেকেই তাঁরা একে অন্যের পরিচিত ছিলেন। তিনি ছিলেন ট্রুডোর এক ভাইয়ের বন্ধুর সহপাঠী। পরে ২০০৩ সালে একটি দাতব্য প্রতিষ্ঠানের তহবিল সংগ্রহের অনুষ্ঠানে আবার দুজনের দেখা হয়। তখন তাঁরা প্রাপ্তবয়স্ক।


স্ত্রী, তিন সন্তানসহ তাজমহলের সামনে জাস্টিন ট্রুডো - ছবি: সংগৃহীত

এর বেশ কয়েক মাস পর তাঁরা মেলামেশা শুরু করেন। ২০০৪ সালে এই জুটির বাগ্দান হয়। পরের বছর (২০০৫ সাল) ট্রুডো ও সোফি বিয়ে করেন। এ দম্পতির তিন সন্তান। বড় ছেলে জাভিয়ারের জন্ম ২০০৭ সালে। মেয়ে এলা গ্রেসের জন্ম ২০০৯ সালে। আর ছোট ছেলে হ্যাড্রিয়েনের জন্ম হয়েছে ২০১৪ সালে।

২০১৫ সালে মাত্র ৪৩ বছর বয়সে প্রধানমন্ত্রী হন ট্রুডো। সুদর্শন এই প্রধানমন্ত্রী তাঁর প্রগতিশীল নীতিমালার জন্য দ্রুতই আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মনোযোগ টানতে সমর্থ হন। তিনি নারী অধিকারের পক্ষে কথা বলেন। গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ কমানো এবং জলবায়ুর পরিবর্তন মোকাবিলায় কাজ করারও অঙ্গীকার করেছেন তিনি।

কেন ট্রুডো ও সোফির বিচ্ছেদ

ট্রুডোর সঙ্গে সোফির কেন বিচ্ছেদ হলো, তার কারণ স্পষ্টভাবে এখনো কিছু জানা যায়নি। হয়তো কখনোই জানা যাবে না।

এই যুগলের বিচ্ছেদের খবরটি প্রথম প্রকাশ হয়েছে ইনস্টাগ্রামে। গতকাল বুধবার ট্রুডো ও সোফির নিজ নিজ ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে বিবৃতিতে বিচ্ছেদের ঘোষণা দেওয়া হয়।


যুক্তরাজ্যের রাজা চার্লস ও রানি ক্যামিলার রাজ্যাভিষেক অনুষ্ঠানে জাস্টিন ট্রুডো ও সোফি গ্রেগোয়ার - ছবি: সংগৃহীত

ট্রুডো ইনস্টাগ্রামে বলেন, ‘সোফি ও আমি আপনাদের জানাতে চাই, অনেক খোলামেলা ও গঠনমূলক আলোচনার পর আমরা আলাদা হয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। সব সময়ের মতো আমরা ঘনিষ্ঠ পরিবার হিসেবে থাকব। আমাদের মধ্যে গভীর ভালোবাসা থাকবে।

একে অপরের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ থাকবে। আমরা যা কিছু গড়ে তুলেছি এবং যা কিছু গড়ব, সবকিছুর প্রতি শ্রদ্ধাবোধ বজায় থাকবে। আপনাদের প্রতি অনুরোধ, আমাদের সন্তানদের মঙ্গলের কথা ভেবে আপনারা আমাদের এবং তাদের ব্যক্তিগত গোপনীয়তার প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকবেন।’

ট্রুডোর কার্যালয়ের বরাতে রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই দম্পতি বিচ্ছেদ–সংক্রান্ত আইনি নথিতে স্বাক্ষর করেছেন। ট্রুডোর কার্যালয়ের মুখপাত্রের বরাতে ডেইলি মেইল জানিয়েছে, বিচ্ছেদের খবর প্রকাশের আগেই সোফি পারিবারিক বাড়ি ছেড়ে অটোয়াতে আরেকটি বাড়িতে উঠেছেন।


করোনার টিকা নেওয়ার পর অভিব্যক্তি প্রকাশ করছেন কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো, সঙ্গে সোফি গ্রেগোয়ার - ছবি: সংগৃহীত

ট্রুডোর কার্যালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়, ‘বিচ্ছেদের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের জন্য তাঁরা সব ধরনের আইনি ও নৈতিক পদক্ষেপ নিয়েছেন এবং সামনেও সে অনুযায়ী কাজ করবেন। তাঁরা ঘনিষ্ঠ পরিবারের মতোই থাকবেন। সোফি ও প্রধানমন্ত্রী তাঁদের সন্তানদের নিরাপদ, প্রেমময় এবং সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে বড় করার ওপর বেশি জোর দিচ্ছেন। আগামী সপ্তাহে শুরু হতে যাওয়া ছুটিও তাঁরা একসঙ্গে কাটাবেন।’

বিচ্ছেদের আগে নিজেদের সম্পর্ক নিয়ে যা বলতেন

নিউইয়র্কভিত্তিক গণমাধ্যম স্টাইল কাস্টারের এক খবরে বলা হয়, ২০১৬ সালের জানুয়ারিতে ভোগ সাময়িকীতে এই দম্পতির একটি সাক্ষাৎকার প্রকাশিত হয়েছিল। ওই সাক্ষাৎকারের সঙ্গে এ যুগলের অন্তরঙ্গ একটি ছবিও প্রকাশ হয়। ওই নিবন্ধে বলা হয়েছিল, স্ত্রীর প্রতি ট্রুডোর এমন ভালোবাসার দৃশ্য দেখে অনেকেই বিস্মিত হবেন। ওই সময় সোফি বলেছিলেন, তাঁর স্বামীর গভীর দৃষ্টিশক্তি আছে। আর স্বামীর দিকটিকে তিনি সবচেয়ে বেশি পছন্দ করেন।


জাস্টিন ট্রুডো, সঙ্গে স্ত্রী-সন্তানেরা - ছবি: সংগৃহীত

ট্রুডো প্রধানমন্ত্রী পদের জন্য নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সময় সোফিকে এক সাক্ষাৎকারে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, তাঁর প্রস্তুতি কেমন। জবাবে সোফি বলেন, জীবনসঙ্গী হিসেবে তিনি ব্যক্তিগতভাবে সব সময়ই ট্রুডোর পাশে আছেন। তাঁকে সমর্থন দিচ্ছেন। এটিকে পারিবারিক বিষয় হিসেবেই দেখেন তিনি।

জাস্টিন ট্রুডোর বাবাও ছিলেন কানাডার প্রধানমন্ত্রী। সে সুবাদে ট্রুডো বরাবরই জনগণের কাছে পরিচিত মুখ। দেশের জনগণ যেমন তাঁর সাফল্যে আনন্দিত হয়েছেন, তেমনি আবার তাঁর খারাপ সময় তাঁদের মর্মাহত করেছে। তবে জাস্টিন ট্রুডো তাঁর জীবনের অনেক কথাই প্রকাশ করেছেন ‘কমন গ্রাউন্ড’ নামে তাঁর লেখা স্মৃতিকথায়। ২০১৪ সালে ‘কমন গ্রাউন্ড’ বইয়ে জাস্টিন ট্রুডো লিখেছিলেন, তাঁর মা–বাবার বিচ্ছেদ হওয়ার কারণে তিনি কতটা যন্ত্রণা পেয়েছেন।


এইডস, যক্ষ্মা ও ম্যালেরিয়া অবসানে গ্লোবাল সিটিজেন কনসার্টে জাস্টিন ট্রুডো ও সোফি গ্রেগোয়ার - ছবি: সংগৃহীত

বলেছিলেন, মা-বাবার বিচ্ছেদ হওয়ার কারণে তিনি হীনম্মন্যতায় ভুগতেন। বইটি প্রকাশিত হওয়ার পর এক সাংবাদিক ট্রুডোকে বিয়েবহির্ভূত সম্পর্ক নিয়ে জিজ্ঞেস করেছিলেন।

আরো পড়ুন: প্রথম ডেটে ট্রুডো বলেছিলেন, সোফির সঙ্গে বাকি জীবন কাটাতে চান

কানাডার গ্লোবাল নিউজকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সেই প্রসঙ্গ টেনে সোফি বলেছিলেন, ‘আমাদের জীবনে যা ঘটছে, তা নিয়ে জিজ্ঞেস করুন। আমি বলছি না, যা–ই কিছু ঘটুক বা না ঘটুক—সবকিছু নিয়ে আমরা জবাব দেব।’


সোফি গ্রেগোয়ার সঙ্গে আনন্দ ভাগ করে নিচ্ছেন জাস্টিন ট্রুডো - ছবি: সংগৃহীত

কিছুক্ষণ বিরতি নিয়ে সাক্ষাৎকারে সোফি বলেন, ‘আমি এ মুহূর্তে আপনাদের বলতে পারি, কোনো বৈবাহিক সম্পর্কই মসৃণ নয়। আমি একরকম গর্ববোধই করি যে আমাদের মধ্যেও কষ্ট আছে। হ্যাঁ, এই কষ্ট আছে, কারণ আমরা পরষ্পরের প্রতি বিশ্বাসযোগ্যতা চাই। সত্য জানতে চাই। আজীবন একে অপরের পাশে থাকতে চাই। আমরা দুজনই স্বপ্ন দেখতে ভালোবাসি। যত দিন সম্ভব আমরা একসঙ্গে কাটাতে চাই।’

এম/


কানাডা জাস্টিন ট্রুডো সোফি গ্রেগোয়ার

সুখবর এর নিউজ পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

খবরটি শেয়ার করুন