ছবি: সংগৃহীত
স্বপ্নের দেশ কাশ্মীরে যাওয়ার ইচ্ছা অনেকেরই। তবে স্বপ্ন থাকলেও সাধ্য না থাকায় অনেকের জীবনেই কাশ্মীর ভ্রমণ আর সত্যি হয়ে ওঠে না। তবে যদি প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপরূপ লীলাক্ষেত্র কাশ্মীর ভ্রমণের সাধ আপনার থাকে তবে আজকের আয়োজন আপনারই জন্য।
আপনার স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে পারেন আপনি অনায়াসেই। কারণ বেশি টাকা খরচ করতে হবে না আপনার এই কাশ্মীর ভ্রমণে। একটু বুদ্ধি খাটালেই মাত্র ৩ হাজার টাকায় আপনি কাশ্মীর ভ্রমণ করতে পারবেন।
ভাবছেন কীভাবে? যেখানে ঢাকা টু কাশ্মীরের শ্রীনগরে রাউন্ড ওয়েতে এয়ার টিকেটের দাম পড়ছে সাধারণত ৪৮ থেকে ৫০ হাজার টাকা। সেখানে ৩ হাজার টাকায় কীভাবে কাশ্মীর ভ্রমণ সম্ভব?
‘ইচ্ছা থাকলেই উপায় হয়’ ছোটবেলার বইতে পড়া এই বাক্যকে কাজে লাগাতে পারেন। প্রথমে এয়ার টিকিটের ভাড়ার কথাতেই আসা যাক। আপনি কি জানেন রাউন্ড ওয়েতে এয়ার টিকেটের দাম পড়ছে সাধারণত ৪৮ থেকে ৫০ হাজার টাকা থাকলেও আপনি এর দাম কমাতে পারেন।
ভাবছেন, বিমানের টিকিটের দাম আবার কমানো যায় কীভাবে? তাহলে শুনুন, আপনি যদি বিমানের টিকিট দাম কমাতে চান তবে ভ্রমণের তারিখ থেকে ১ মাস থেকে ২ মাস আগে টিকিট কেটে রাখুন। যেমন ধরুন, এখন জুলাই মাস চলছে। এ মাসে টিকিট কাটলে আপনার ঢাকা থেকে কাশ্মীরের বিমান টিকিট পড়বে ৪৮ হাজার। কিন্তু আপনি আগস্ট মাসে টিকিট কাটেন তবে বিমান টিকিট ভাড়া এক ধাক্কায় কমে যাবে ১০ হাজার টাকা। মানে বিমান টিকিট হবে ৩৭ হাজার। যদি সেপ্টেম্বরে কাটেন তবে বিমান টিকিটের দাম আরও কম হবে।
বিমান পথে ৩ থেকে ৪ ঘন্টার মধ্যেই আপনি কাশ্মীর পৌঁছে যাবেন। তবে এতে করে আপনার টাকা যেমন বেশি খরচ হবে তেমনি বিমানের ভেতরে থাকায় যাত্রা পথে বাইরে কোথায় ভ্রমণের সুযোগও হারাবেন। তাই বাই রোডে কাশ্মীর যেতে পারেন। এতে করে আপনার কাশ্মীর ভ্রমণের খরচ পড়বে মাত্র ৩ হাজার টাকা।
পাসপোর্ট, ভিসা কনফার্ম হওয়ার পর বাই রোডে কাশ্মীর যেতে চাইলে প্রথমে আপনাকে যেতে হবে যশোরের বেনাপোলে। সায়দাবাদ, কল্যাণপুর, শ্যামলী, গাবতলীর বাসগুলো সরাসরি বেনাপোলে আসে। ভাড়া নন এসি ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা। এসি ৮০০ থেকে ১৫০০ টাকা। সন্ধ্যা ৬ থেকে ১২ টার মধ্যে এসব গাড়ি যশোরে যাওয়ার উদ্দেশ্যে রওনা হয়। পরদিন ভোর ৬ টার মধ্যেই বেনাপোলে পৌঁছে যায়।
এখানে নামলেই বাস কাউন্টার থেকে ফ্রেশ হতে পারবেন। একটু ফ্রেশ হয়ে সকালের নাশতা শেষ করে পাশে থাকা ইমিগ্রেশন অফিসে গিয়ে পাসপোর্ট ও ভিসার যাবতীয় তথ্য দিয়ে একটি ফরম পূরণ করুন। ৫০০ টাকা ট্রাভেল ট্যাক্স এবং পোর্ট ফ্রি ৪০ টাকা জমা দিয়ে বাংলাদেশের ইমিগ্রেশ্রন কমপ্লিট করুন। এরপরই চলে যান তার পাশে থাকা ইন্ডিয়ার ইমিগ্রেশনে।
বিষয়টি প্রথম হলে ঘাবড়ে না গিয়ে আপনার মতো যারা বাংলাদেশ থেকে ইন্ডিয়া বা ভারতে যাচ্ছেন তাদের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করুন। তবে ঝামেলা এড়াতে দালাল থেকে অবশ্যই আপনাকে দূরে থাকতে হবে।
এবার ভারতের সাইডে পেড্রোপল বর্ডারে দাঁড়ান। এখানের আশেপাশে অনেক মানি এক্সচেন্জার দোকান থেকে টাকা রুপিতে কনভার্ট করুন। এ সময় সব টাকা রুপিতে ভাঙাতে যাবেন না। কারণ কলকাতার নিউমার্কেট এরিয়ায় আপনি টাকার মান একটু বেশি পাবেন। তাই বাকি টাকা সেখান থেকে ভাঙিয়ে নিবেন।
টাকা রুপিতে কনভার্ট করার পর বনগাওয়ের রেলস্টেশন উদ্দেশে অটো ধরুন। ভাড়া ৩০ রুপি। ৩০ মিনিটেই রেল স্টেশনে পৌঁছে যাবেন। এখান থেকে শিয়াল দা স্টেশনের টিকিট কাটুন। ভাড়া ২০ রুপি।
টিকিট কাটার পর ফ্লাইওভার দিয়ে বনগাও রেলস্টেশনের প্লাটফর্মের ওপারে চলে যান। এখানে কোনো ট্রেন আসতে সর্বোচ্চ ২০ মিনিট অপেক্ষা করতে হয়। ট্রেন আসলে তাতে উঠে শিয়াল দার স্টেশনে নামুন। এবার হলুদ ট্যাক্সিতে সর্বোচ্চ ১০০ রুপির মধ্যে চলে আসুন নিউমার্কেট মারেকুয়েস্টিক এরিয়ায়।
এখানে আপনি হোটেল, মোটেল, মানি এক্সচেন্জার দোকান পাওয়ার পাশাপাশি পেয়ে যাবেন বিভিন্ন ধরনের ট্রাভেল এজেন্সি। তাদের সাথে কথা বলে সবচেয়ে কম দামে পাওয়া টিকিট কাটুন জম্বু তাওয়ারের। দ্রুত যেতে চাইলে হাম সাফার এক্সপ্রেস অথবা হিমগিরি এক্সপ্রেসের টিকিট কাটুন।
আপনি চাইলে কলকাতায় এসে হাওড়া হয়েও জম্বুতে আসতে পারেন। দুই জায়গা থেকেই মাত্র ৩৫ ঘন্টায় চলে আসতে পারবেন আপনার গন্তব্যে। ট্রেনের ভাড়া নন এসি পড়বে ৭৯০ রুপি, এসি ২ হাজার রুপি। দুই দিনের মধ্যে পৌঁছে যাবেন স্বপ্নের দেশ কাশ্মীরে।
ট্রেনে খাবার পাওয়া যায় তাই সেখান থেকেই খাবার খেতে চেষ্টা করুন। বাইরের খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। ট্রেন জম্বুতে পৌঁছলে এখান থেকেই শ্রীনগরে যাওয়া উদ্দেশ্যে বাসে উঠুন। ভাড়া নিবে ৮০০ রুপি।
আরো পড়ুন: ভিসা ছাড়াই ঘুরে আসুন ৪১টি দেশ থেকে
এবার হিসাব করুন, বেনাপোল ভাড়া নন এসি ৫০০ টাকা, ৫০০ টাকা ট্রাভেল ট্যাক্স, পোর্ট ফ্রি ৪০ টাকা, অটো ভাড়া ৩০ রুপি, শিয়াল দা স্টেশন ভাড়া ২০ রুপি, হলুদ ট্যাক্সি ১০০ রুপি, জম্বুর ট্রেনের ভাড়া নন এসি ৭৯০ রুপি, শ্রীনগর বাস ভাড়া ৮০০ রুপি। সব মিলিয়ে একজনের ভ্রমণ খরচ মাত্র ৩ হাজার টাকা।
একবার ভাবুন, মাত্র তিন হাজার টাকার মধ্যেই স্বপ্নের দেশে পৌঁছানোর পথে কত কিছু দেখার সুযোগ পেলেন। আবার কাশ্মীরের সৌন্দর্যও মন ভরে উপভোগ করলেন। তাহলে দেরী না করে শরত কিংবা বসন্তের সিজনে ঘুরে আসুন কাশ্মীর। কারণ তীব্র ঠান্ডা কিংবা বরফ যদি পছন্দ না করেন তবে শরতের স্নিগ্ধতা আর বসন্তের ফুলের সৌন্দর্যের আভিজাত্য দেখতে শরত কিংবা বসন্তের সিজনেই আপনাকে ঘুরে আসতে হবে স্বপ্নের দেশ কাশ্মীরে।
এম এইচ ডি/