ছবি : সংগৃহীত
গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলার বিনিরাইল গ্রামে অনুষ্ঠিত হলো জামাই মেলা। মেলায় চলে জামাই-শ্বশুরের মধ্যে বড় মাছ কেনার প্রতিযোগিতা। নতুন বা পুরোনো জামাইরা বড় মাছ কিনে শ্বশুর বাড়িতে যাবে, শ্বশুর বড় মাছ কিনে জামাইকে আপ্যায়ন করবে—এটাই এ মেলার মূল বৈশিষ্ট্য। পাশাপাশি শ্বশুর বাড়িতে চলে জামাইয়ের মাছ ঘিরে নানা আয়োজন। এছাড়া মেলা জুড়ে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের মুখরোচক খাবার।
প্রতি বছর মাঘ মাসের প্রথম দিন এ মেলা বসে। দিনটির জন্য সারা বছর অপেক্ষায় থাকে গাজীপুরসহ আশপাশের কয়েকটি জেলার মানুষ। জেলার বিভিন্ন গ্রামের জামাই শ্বশুর এ মেলার মূল ক্রেতা।
মেলায় গিয়ে দেখা যায়, গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলার জাঙ্গালীয়া, মোক্তারপুর ও জামালপুর ইউনিয়নের ত্রি-মোহনার বিনিরাইল গ্রামের বিরাট এলাকাজুড়ে মাছের পসরা সাজিয়ে মেলা বসিয়েছেন অস্থায়ী প্রায় ২ হাজার দোকানিরা। দুই হাজারেরও বেশি স্টলে দেশের বিভিন্ন জায়গার মাছ বিক্রেতারা এখানে মাছ বিক্রির জন্য ছুটে এসেছেন। তারা নানা অঙ্গভঙ্গি করে সুরে সুরে ডেকে ক্রেতা জামাইদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছেন। কেউ কেউ বড় আকৃতির মাছ তুলে ধরে ক্রেতাদের ডাকছেন।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শুধু উপজেলার লোকই নয়, আনন্দের এ মেলা উপভোগ করতে টাঙ্গাইল, নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদী, ভৈরব, কিশোরগঞ্জ, ময়মনসিংহ থেকেও ছুটে এসেছে অনেকে। এবারের মেলায় প্রায় দুই শতাধিক মাছ ব্যবসায়ী বাহারি প্রজাতির মাছ নিয়ে এসেছেন।
মাছের মধ্যে ছিল সামুদ্রিক চিতল, বাঘাইড়, আইড়, বোয়াল, কালিবাউশ, পাবদা, গুলশা, গলদা চিংড়ি, বাইম, কাইক্কা, রূপচাঁদাসহ নানা জাতের দেশি ও সামুদ্রিক মাছ।
স্থানীয় বাসিন্দা মুসফিকুর রহমান আকন্দ বলেন, শীতকালীন বিভিন্ন উৎসব হয় আমাদের গ্রামের। এর মধ্যে জামাই মেলা অন্যতম। গাজীপুরের বিভিন্ন গ্রামে এই দিনটিতে অনেক আনন্দ উল্লাস করেন। বিশেষ করে নতুন জামাইরা বেশ আনন্দ করে। কক্সবাজার থেকে মেলায় আসা মাছ ব্যবসায়ী শেখ সোহাগ ইসলাম ৫৫ কেজি ওজনের একটি পাখি মাছ ১ লাখ ২৭ হাজার টাকা দাম হাঁকেন।
গোপালগঞ্জের বাসিন্দা স্থানীয় জামাই কামাল হোসেন জানান, মাছটি ৭৫ হাজার টাকা দাম বলেছেন। তারপরও ব্যবসায়ী মাছটি ছাড়ছেন না। কামাল জানান, এবারই প্রথম এ মেলায় এসেছেন। পাখি মাছটি তার খুব পছন্দ তাই মাছটি ৭৫ হাজার টাকা দাম বলেছেন।
আরো পড়ুন: হেলিকপ্টারে বউ নিয়ে বাড়ি ফিরলেন প্রবাসী যুবক
টাঙ্গাইলের বাসিন্দা স্থানীয় জামাই আনোয়ার হোসেন জানান, ৩০ কেজি ওজনের একটি বোয়াল মাছ ২০ হাজার টাকা দাম বলেছি। কিন্তু মাছ বিক্রেতা বোয়ালটি এক দাম ৪০ হাজার টাকা বলে দেন। সেজন্য কেনা সম্ভব হয়নি। মেলায় বিভিন্ন ধরনের মিষ্টির পসরা সাজিয়ে বসেন দোকানি মো. আমিন মোড়ল। তিনি বলেন, ৪০ বছর যাবৎ এই মাছের মেলায় একদিনের জন্য দোকান বসিয়ে আসছি। এইবার তিনটি দোকান দিয়েছি। তিনটি দোকানে মোট ২০ জন শ্রমিক কাজ করছেন।
মেলার আয়োজক কমিটির সভাপতি কিশোর আকন্দ বলেন, মেলা ঘিরে এখন এই অঞ্চলের উৎসবে পরিণত হয়েছে। এই মেলা প্রায় আড়াইশ বছরের পুরোনো। বিভিন্ন প্রকার বড় বড় আকারের মাছ কিনতে হাজার হাজার মানুষের সমাগম হয় এখানে। মাছ ছাড়াও ফার্নিচার, মিষ্টান্ন, লোকজ অনুষ্ঠান হয়ে থাকে। তবে মেলাটি মাছের জন্যই বেশি পরিচিত।
এ মেলা প্রথম অনুষ্ঠিত হতো খুবই ক্ষুদ্র পরিসরে। অগ্রহায়ণের ধান কাটা শেষে পৌষ-সংক্রান্তি ও নবান্ন উৎসবের আয়োজন করা হতো। প্রায় ২৫৫ বছর যাবৎ আয়োজন হয়ে আসছে মেলা। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এ মেলা একটি সর্বজনীন উৎসবে রূপ নিয়েছে।
তারা জানান, মেলা এখন ঐতিহ্যে রূপ নিয়েছে। এ মেলা গাজীপুর জেলার সবচেয়ে বড় মাছের মেলা হিসেবে স্বীকৃত। মেলাটি এ অঞ্চলের ঐতিহ্যের ধারক। মেলায় বেচাকেনা যতই হোক, আমাদের ঐতিহ্য আর কৃষ্টি-কালচারকে বহন করছে; এটাই সবচেয়ে বড় কথা।
এইচআ/ আই. কে. জে/