শুক্রবার, ৫ই ডিসেম্বর ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
২০শে অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সর্বশেষ

*** অনিবার্য কারণ ছাড়া বিএনপি নির্বাচনি মাঠে থাকবে: নজরুল ইসলাম খান *** নিবন্ধন পাচ্ছে ‘আমজনতার দল’, প্রতীকের বিষয়ে যা জানা গেল *** এয়ার অ্যাম্বুলেন্স আসতে দেরি হতে পারে, জুবাইদা রহমান ঢাকায় আসছেন *** খালেদা জিয়াকে দেখতে হাসপাতালে আইজিপি ও ডিএমপির কমিশনার *** আগামীকাল লন্ডনে নেওয়া হতে পারে খালেদা জিয়াকে *** তারেক রহমান এসএসএফ নিরাপত্তা পাবেন কিনা, যা জানালেন সৈয়দা রিজওয়ানা *** কিশোরগঞ্জের ইউএনও হিসেবে নিয়োগ পেলেন সাবেক লাক্স সুন্দরী *** ডোনাল্ড ট্রাম্পের মুখে ‘বর্ণবাদের দুর্গন্ধ’ *** আগামীকাল সকালে দেশে পৌঁছানোর চেষ্টা করবেন জোবাইদা রহমান *** তেলের দাম বাড়ানো ব্যবসায়ীদের ‘কারণ দর্শানোর’ নোটিশ দিয়ে বৈঠকে ডেকেছে সরকার

যেসব মূল্যবান রত্নপাথর গহনায় ব্যবহৃত হয়

লাইফস্টাইল ডেস্ক

🕒 প্রকাশ: ০১:৪২ অপরাহ্ন, ৮ই অক্টোবর ২০২৩

#

ছবি: সংগৃহীত

প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে জীবনে রয়েছে বিলাসিতার পরশ। হীরার উজ্জ্বল মোহন থেকে শুরু করে নীলকান্তমণির রঙ গহনার মাধুর্যে এনেছে আভিজাত্যের ছোঁয়া। গহনায় ব্যবহৃত সেই মূল্যবান রত্নপাথরগুলো নিয়ে সাজানো হয়েছে  নিবন্ধটি। চলুন, গহনা তৈরির শিল্পে যুগান্তকারী অবদান রাখা চিত্তাকর্ষক পাথরগুলোর ব্যাপারে জেনে নেয়া যাক:-

বিশ্বের অতি মূল্যবান রত্ন পাথরগুলো

হীরা

হীরা যুক্তিযুক্তভাবে পরিচিত সবচেয়ে বিখ্যাত এবং উচ্চ মূল্যের রত্নপাথর। এগুলো একটি স্ফটিক জালি কাঠামোতে সাজানো কার্বন পরমাণু দ্বারা গঠিত, যা এদের মন্ত্রমুগ্ধ উজ্জ্বলতা তৈরির জন্য অবদান রাখে। প্রাথমিকভাবে হীরা বর্ণহীন হলেও এদের অভিনব রঙের সংস্করণের খ্যাতি আছে। যেমন লাল রঙের হীরা সবচেয়ে দামি।

হীরার উৎপত্তি কোটি কোটি বছর আগে, এবং তীব্র চাপ ও তাপমাত্রার কারণে ধীরে ধীরে সেগুলো ভূ-ত্বকের গভীরে গঠিত হয়েছে। হীরার আদিম উৎস ছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। বর্তমানে রাশিয়া, বতসোয়ানা, কানাডা এবং অস্ট্রেলিয়াতে পাওয়া যায়।

রুবি

আকর্ষণীয় লাল রঙের রুবি আবেগ এবং ভালবাসার প্রতীক। ক্রিস্টাল গঠনে ক্রোমিয়ামের উপস্থিতিতে সৃষ্টি রুবি লাল রঙের। পাথরটির সবচেয়ে দামি এই সংস্করণের রঙটিকে প্রায়ই ‘কবুতরের রক্ত লাল’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়। মায়ানমার হচ্ছে ঐতিহাসিকভাবে সর্বোত্তম রুবিগুলোর প্রাথমিক উৎস। এখন এগুলো শ্রীলঙ্কা, থাইল্যান্ডসহ বিশ্বের অন্যান্য অংশেও পাওয়া যায়।

পান্না

বিভিন্ন খনিজ উপাদানে সম্বলিত পান্না তার চোখ ধাঁধানো সবুজ রঙের জন্য বিখ্যাত। সবুজ রঙের তীব্রতা এবং স্পন্দনের সঙ্গে সঙ্গে পরিবর্তিত হয় পান্নার মান। পান্নার ভেতরের প্রাকৃতিক উপাদানগুলোকে ‘জার্ডিন’ বা বাগান হিসেবে উল্লেখ করা হয়। জার্ডিনের রকমফের প্রতিটি পাথরকে অনন্য বৈশিষ্ট্য দেয়। সবচেয়ে মূল্যবান পান্না আসে কলম্বিয়া থেকে, বিশেষ করে দেশটির মুজো এবং চিভোর খনি থেকে। অন্যান্য উৎসগুলোর মধ্যে রয়েছে জাম্বিয়া, ব্রাজিল এবং জিম্বাবুয়ে।

নীলা

উজ্জ্বল নীল রঙের জন্য ব্যাপকভাবে স্বীকৃত রত্নপাথরটি হলো নীলা বা নীলকান্তমণি। কাঠামোতে উপস্থিত ট্রেস উপাদানগুলোর উপর নির্ভর করে এগুলো হলুদ, গোলাপী এবং সবুজসহ বিভিন্ন রঙের হয়ে থাকে। কাশ্মীরের নীল নীলকান্তমণি বিশ্বের সবচেয়ে বেশি চাহিদার রত্নগুলোর মধ্যে একটি। নীলকান্তমণির অন্যান্য উৎসগুলোর মধ্যে রয়েছে শ্রীলঙ্কা, মায়ানমার, থাইল্যান্ড, মাদাগাস্কার এবং অস্ট্রেলিয়া।

আলেকজান্ড্রাইট

আলেকজান্ড্রাইট একটি দুষ্প্রাপ্য এবং অসাধারণ রত্নপাথর, যা এর মনোমুগ্ধকর রঙ পরিবর্তনকারী বৈশিষ্ট্যের জন্য পরিচিত। দিনের আলোতে এটি সবুজ থেকে নীল-সবুজ দেখায়। লালিমার আলোয় এটি বেগুনি-লাল বা প্রায় বেগুনি রঙে রূপান্তরিত হয়। এর অভ্যন্তরে ক্রোমিয়াম এবং ভ্যানাডিয়ামের সংমিশ্রণ এই বিস্ময়কর ঘটনার জন্য দায়ী। আলেকজান্ড্রাইট প্রথম আবিষ্কৃত হয় রাশিয়ার উরাল পর্বতমালায় ১৮৩০ সালে এবং রাজা আলেকজান্ডার-২-এর নামে নামকরণ করা হয়েছিল। বর্তমানে এটি রাশিয়া, ব্রাজিল, শ্রীলঙ্কা এবং পূর্ব আফ্রিকাতেও এর সন্ধ্যান মেলে।

গয়নাতে ব্যবহৃত আরো কিছু মূল্যবান পাথর :-

তানজানাইট

১৯৬৭ সালে আবিষ্কৃত হয় উত্তর তানজানিয়ার মিররানি পাহাড়ের ছোট একটি খনিতে। গভীর নীল-বেগুনি রঙের জন্য পরিচিত তাঞ্জানাইট গহনা শিল্পে জনপ্রিয়তা পায় টিফানি এ্যান্ড কোং কোম্পানির মাধ্যমে চালু হওয়ার পর। এর মোহাচ্ছন্ন রঙের বর্ণালী অভিজাত বেগুনি-নীল থেকে বেগুনি আভার তীব্র নীল পর্যন্ত বিস্তৃত। তানজানাইটের প্রাথমিক উৎস এখনও সেই তানজানিয়ার মিররানি পাহাড়েই সীমাবদ্ধ।

কালো ওপাল

কালো ওপাল প্রধানত অস্ট্রেলিয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের লাইটিং রিজ এলাকা থেকে উৎসারিত হয়। এর অদ্ভূত রঙ মূলত বিভিন্ন রঙের প্রাণবন্ত ছটাসহ কতক গাঢ় রঙের মিশ্রণ। আর এই ব্যতিক্রম রঙ এগুলোকে অত্যন্ত আকাঙ্খিত এবং মূল্যবান করে তুলেছে। রঙের অনন্য ইন্টারপ্লেতে রয়েছে নীল, সবুজ, লাল এবং বেগুনি, যা প্রায়ই কালো পটভূমিতে ঝিলমিল করে। বর্তমান বিশ্বের অধিকাংশ কালো ওপাল আসে সেই নিউ সাউথ ওয়েলসের লাইটিং রিজ থেকে।

পারাইবা ট্যুরমালাইন

প্যারাইবা ট্যুরমালাইন প্রথম ১৯৮০-এর দশকে ব্রাজিলের প্যারাইবা রাজ্যে আবিষ্কৃত হয়। তামা এবং ম্যাঙ্গানিজের উপস্থিতির কারণে এদের মন্ত্রমুগ্ধ নিয়ন নীল থেকে সবুজ-নীল রঙ প্রদর্শিত হয়। এছাড়া এদের অভাবনীয় শেডগুলো ফিরোজা থেকে উজ্জ্বল নীল-সবুজ পর্যন্ত বিস্তৃত। মূল উৎস ব্রাজিল হলেও মোজাম্বিক এবং নাইজেরিয়াতেও এদের যথেষ্ট মজুদ রয়েছে।

ক্রাইসোপ্রেস

ক্রাইসোপ্রেস প্রথমে পোল্যান্ড থেকে উৎসারিত হলেও বর্তমানের প্রাথমিক সরবরাহ আসে পশ্চিম অস্ট্রেলিয়া থেকে। এই রত্নপাথরটি আপেল-সবুজ রঙের, তবে প্রায়ই নির্মল স্বচ্ছ চেহারা প্রদর্শন করে। এর সবুজ শেড ফ্যাকাশে প্যাস্টেল সবুজ থেকে গভীর পান্না রঙ পর্যন্ত বিস্তৃত।

মুনস্টোন

শ্রীলঙ্কা, ভারত, মায়ানমার এবং মাদাগাস্কারসহ বিভিন্ন স্থান থেকে সংগ্রহ করা হয় এই মুনস্টোন। তবে উচ্চ মানের পাথরগুলোর জন্য সুপরিচিত শ্রীলঙ্কা। মুনস্টোনের আসল স্বকীয়তা হচ্ছে এদের অ্যাডুলারেসেন্স। এটি হচ্ছে একটি নরম আভা, যা বিভিন্ন কোণ থেকে দেখলে পাথরের পৃষ্ঠ জুড়ে চলে যায় বলে মনে হয়। এদের বিভিন্ন রঙের মধ্যে সবচেয়ে অবিস্মরণীয় ও মূল্যবান হলো নীলাভ আভা।

সর্বসাকূল্যে, গহনায় ব্যবহৃত মূল্যবান রত্নপাথরগুলো তাদের চকচকে নয়নাভিরাম উপস্থিতির মাধ্যমে সমৃদ্ধ করেছে গহনার জগতকে। প্রতিটি মণির অনন্য লোভনীয়তা, ঐতিহাসিক তাৎপর্য এবং অন্তর্নিহিত প্রতীকী অর্থ পরবর্তী প্রজন্মের জন্য মূল্যবান স্মৃতিচিহ্ন করে তোলে। প্রকৃতির এই মূল্যবান উপহারগুলো যেন অবলীলায় প্রচার করে চলেছে অবিস্মরণীয় সৌন্দর্য্যের চিরন্তণ বাণী।

এস/ আই. কে. জে/ 


গহনা রত্নপাথর মূল্যবান

সুখবর এর নিউজ পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

খবরটি শেয়ার করুন

Footer Up 970x250