ছবি: সংগৃহীত
পদ ছেড়েছেন ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির চেয়ারম্যান রিচার্ড শার্প। গতকাল শুক্রবার পদত্যাগের ঘোষণা দেন তিনি। নিয়োগের বছর দুয়েকের মাথায় হঠাৎ কেন এমন কঠিন সিদ্ধান্ত, কী ঘটেছিল গত কয়েক দিনে—এমন প্রশ্ন উঠেছে।
জানা গেছে, পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে শার্পের পশ্চিম লন্ডনের বাসায় গিয়েছিলেন বিবিসির মহাপরিচালক টিম ডেভি। পরিস্থিতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন তাঁরা। এ সময় সাংবাদিকেরা শার্পের বাসার সামনে জড়ো হন। গুঞ্জন ওঠে শার্প পদ ছাড়ছেন, আর এটা নিয়ে আলোচনা করতেই টিম ডেভি তাঁর বাসায় এসেছেন।
পরে এ গুঞ্জন সত্যি হয়। আরও শোনা যায়, শার্পকে নিয়ে অ্যাডাম হেপিনস্টল কেসি কমিটির প্রতিবেদন প্রকাশ হতে যাচ্ছে। ধারণা করা হচ্ছে, শার্পের পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নেওয়ার পেছনে এ পরিস্থিতি ও আলোচনা ভূমিকা রেখেছে।
তবে এমনটাও জানা গেছে, কয়েক দিন ধরেই পদত্যাগের কথা ভাবছিলেন শার্প। বিবিসির ভেতরে–বাইরে অনেকের সঙ্গেই তিনি পদত্যাগের বিষয়ে আলোচনা করেছিলেন। এরপর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, ‘নিজেকে কোনো গোলমালের মধ্যে জড়িয়ে রাখবেন না। বিবিসিকেও ঝামেলায় জড়াবেন না।’
২০২১ সালে বিবিসির চেয়ারম্যান পদে নিযুক্ত হন শার্প। এর আগে তিনি গোল্ডম্যান স্যাকসে ব্যাংকার ছিলেন।
শার্প যখন বিবিসিতে যোগ দেন, তখন যুক্তরাজ্যে ক্ষমতায় ছিল বরিস জনসন সরকার। শার্পের বিরুদ্ধে অভিযোগ, বিবিসির চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার আগে বরিস জনসনকে ১০ লাখ ডলার ঋণ পাইয়ে দিয়েছিলেন তিনি। আর নিয়োগ পাওয়ার সময় স্বার্থের দ্বন্দ্বসংক্রান্ত নথিতে সেই ঋণের সঙ্গে তাঁর সম্পৃক্ততার তথ্য প্রকাশ করেননি।
ব্রিটিশ সরকার শার্পকে কোন প্রক্রিয়ায় বিবিসির চেয়ারম্যান পদের জন্য নির্বাচিত করেছে, তা নিয়ে দেশটির সরকারি নিয়োগসংক্রান্ত পর্যবেক্ষক সংস্থা তদন্ত করেছে। সংস্থার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রিচার্ড শার্প তাঁর নিয়োগের সময় সম্ভাব্য স্বার্থের দ্বন্দ্ব প্রকাশ করতে ব্যর্থ হয়েছেন। আর এতে সরকারি নিয়োগসংক্রান্ত বিধির লঙ্ঘন হয়েছে।
শার্পের পদত্যাগের সিদ্ধান্তের পেছনের কারণ এটাই। তবে বিবিসির সংস্কৃতি ও সংবাদমাধ্যমবিষয়ক সম্পাদক কেটি রাজাল মনে করছেন, শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত হয়তো পদ ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিতে প্রস্তুত ছিলেন না শার্প।
আরো পড়ুন: বড় মেয়ে রাঘাদের চোখে কেমন ছিলেন সাদ্দাম হোসেন?
যদিও পদত্যাগের ঘোষণা দেওয়ার সময় শার্প বলেছেন, বিবিসির চেয়ারম্যান হিসেবে তাঁর নিয়োগ অবৈধ ছিল না। তবে তিনি মনে করেন, চেয়ারম্যান পদ না ছাড়লে সম্প্রচারমাধ্যমটি ভালোভাবে কাজ করতে পারবে না। কিন্তু ঘটনার পরম্পরায় অনেকে ভেবেছিলেন, তদন্ত ঘিরে যা ঘটছে, তাতে শার্পের ওপর খড়্গ নেমে আসতে পারে।
ধারাভাষ্যকার গ্যারি লিনেকার গত মাসে তাঁর পদ হারিয়েছিলেন। বিবিসি তাঁর বিরুদ্ধে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল যে লিনেকার তাঁর নিরপেক্ষ অবস্থান হারিয়েছেন। শার্পের পদত্যাগের ঘোষণার পর লিনেকার টুইটে বলেছেন, বিবিসির চেয়ারম্যান নিয়োগে সরকারের কখনোই সম্পৃক্ত হওয়া উচিত নয়।
যাহোক, পদত্যাগের ঘোষণা দিলেও জুন মাসের শেষ পর্যন্ত বিবিসির চেয়ারম্যান থাকছেন শার্প। তত দিন বিবিসির নতুন চেয়ারম্যান নিয়োগের প্রক্রিয়া চলমান থাকবে।
সূত্র: বিবিসি
এম/ আই. কে. জে/