ছবি-সংগৃহীত
কক্সবাজার থেকে সেন্টমার্টিন যেতে ৬ ঘণ্টা সময় লেগে যেত, কিন্তু এখন লাগছে ৩ ঘণ্টা। এতে সময়-খরচ দুটোই কমেছে। জাহাজ চলায় জেলার পর্যটন শিল্পে নতুন একটি দ্বারও উন্মোচন হয়েছে। প্রথমবারের মতো কক্সবাজারের ইনানী সৈকত থেকে সেন্টমার্টিনে সাগরপথে জাহাজ চলাচল শুরু হয়েছে রোববার (৩১শে ডিসেম্বর) সকাল সাড়ে ৯টায় । এর মাধ্যমে সেন্টমার্টিন ভ্রমণে সময় ও খরচ দুটোই কমলো।
পাথুরে সৈকত ইনানী উপকূলে আছড়ে পড়ছে স্বচ্ছ নীল জলরাশি। সাগরের চারদিকে নীল আর নীল। এই নীল জলে ভাসছে পর্যটকবাহী জাহাজ, যা প্রথমবারের মতো এসেছে ইনানী সৈকতে। ইনানী সৈকতের নীল জলরাশিতে নির্মিত হয়েছে দৃষ্টিনন্দন জেটি, যার দৈর্ঘ্য প্রায় ১ কিলোমিটারের কাছাকাছি। ওই নীল জলরাশিতে দেখা মিলছে ডিঙি নৌকার খেলা।
রোকেয়া রহমান নামে এক পর্যটক বলেন, এই প্রথম ইনানী থেকে জাহাজে করে সেন্টমার্টিন ভ্রমণে যাচ্ছি। ২০২৪ সালের প্রথম দিন সেন্টমার্টিনে কাটাবো বলে ভ্রমণে যাওয়া। খুবই ভালো লাগছে, কারণ সেন্টমার্টিন যেতে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে না। বাসে করে কলাতলীর মোড় নামলাম তারপর গাড়ি করে মাত্র ৪৫ মিনিটের মধ্যে ইনানী জেটি পৌঁছালাম। খরচ ও সময় দুটোই বাঁচলো আর মেরিন ড্রাইভও দেখা হলো।
আরেক পর্যটক ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, ইনানী টু সেন্টমার্টিন জাহাজে প্রথম যাত্রা খুবই ভালো লাগছে, আরও বেশি ভালো লাগছে প্রথম যাত্রী হতে পেরে।
হৃদয় নামে এক পর্যটক বলেন, কক্সবাজার থেকে টেকনাফ থেকে ২ থেকে আড়াই ঘণ্টা সময় লেগে যেত। কিন্তু এখন ইনানীতে আসতে সময় লাগছে মাত্র ৪৫ মিনিট। আর কক্সবাজার শহর থেকে জাহাজে করে সেন্টমার্টিন যেতে সময় লাগতো ৬ ঘণ্টা, কিন্তু এখন লাগে মাত্র ৩ ঘণ্টা। সেই হিসেবে ইনানী থেকে সেন্টমার্টিন যাত্রাটা অনেক আরামদায়কও হয়েছে।
জাহাজটি কক্সবাজার ইনচার্জ হোসাইন ইসলাম বাহাদুর জানান, প্রতি বছরই টেকনাফ-সেন্টমার্টিন, চট্টগ্রাম-সেন্টমার্টিন ও কক্সবাজার শহর-সেন্টমার্টিনে জাহাজ চলাচল করে আসছে। এর মধ্যে ‘এমভি কর্ণফুলি এক্সপ্রেস’ শহরের বাঁকখালী নদীর ঘাট থেকে চলাচল করলেও এ বছর তা শুরু করা যায়নি।
ইতিমধ্যে সব ধরনের অনুমতি গ্রহণ করে ওই জাহাজ ইনানীর নৌবাহিনীর জেটি থেকে সাগর পথে সেন্টমার্টিনে চলাচল শুরু করেছে।
হোসাইন ইসলাম বাহাদুর বলেন, সকাল সাড়ে ৯টায় জাহাজটি প্রথমবারের মতো ইনানী থেকে সেন্টমার্টিনের উদ্দেশ্যে রওনা হয়। প্রথম দিন জাহাজটি ১৩৯ জন পর্যটক যাত্রী ছিলেন। এ ছাড়াও জাহাজ সংশ্লিষ্ট, প্রশাসনিক লোকজন যারা জাহাজটি প্রথম যাত্রা নিরাপদ কিনা দেখেন এমন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা, গণমাধ্যমকর্মী এবং পর্যটন সংশ্লিষ্টরা ছিলেন।
দুপুর সাড়ে ১২টায় সেন্টমার্টিনে গিয়ে পৌঁছায় জাহাজটি। দ্বীপ থেকে এটি বিকাল ৩টায় রওনা হয়েছে এবং সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় ইনানী জেটিতে পৌঁছাবে। তিনি বলেন, এই জাহাজটি ৭৫০ জন ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন। জাহাজটিতে দ্বীপে আসা ও যাওয়ার ক্ষেত্রে টিকিট মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ১৮০০ টাকা থেকে ৩২০০ টাকা।
পর্যটকরা মেরিন ড্রাইভ হয়ে সমুদ্র উপভোগ করে সকালেই সমুদ্র পথে যাত্রা দেবেন প্রবাল দ্বীপে। সাগরের সৌন্দর্য উপভোগ করবেন। ফেরার সময় উপভোগ করতে পারবেন সূর্যাস্তের দৃশ্য; যা পর্যটকদের আলাদা আনন্দ দেবে।
আরো পড়ুন: ৬ মুসলিম দেশকে ভিসাহীন ভ্রমণ সুবিধা দিচ্ছে ইংল্যান্ড
কর্ণফুলী শীপ বিল্ডার্সের স্বত্ত্বাধিকারী ইঞ্জিনিয়ার এম এ রশিদ বলেন, শুধু সেন্টমার্টিন নয় এখন থেকে জাহাজ কুয়াকাটা, হিরণ পয়েন্ট, মোংলা বন্দর, পায়রা বন্দর যাবে। এ ছাড়াও বঙ্গোপসাগরের পুরো এলাকা জাহাজে করে ভ্রমণ করা যাবে।
অনেকগুলো দ্বীপ রয়েছে এগুলোতেও ভ্রমণ করতে পারবেন পর্যটকরা। এভাবে সব ধরণের সুযোগ-সুবিধা গড়ে উঠছে; যা পর্যটন শিল্পের নতুন দ্বার উন্মোচন হলো বলে মনে করছি। ইনানী থেকে সেন্টমার্টিন প্রথমবারের মতো পরীক্ষামূলক যাত্রা হলেও আগামী ১১ই জানুয়ারি থেকে বাণিজ্যিকভাবে প্রতিদিনই যাত্রা করবে পর্যটকবাহী এ জাহাজ।
এসি/ আই.কে.জে/