ছবি : সংগৃহীত
সম্প্রতি আমেরিকার প্রাপ্তবয়স্কদের ওপর ‘দ্য পিউ রিসার্চ সেন্টার’-এর এক গবেষণায় বলা হয়েছে, সবচেয়ে দ্রুত বর্ধনশীল সামাজিক যোগাযোগ প্ল্যাটফর্ম এখন টিকটক। গবেষণায় বলা হয়, প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে এক-তৃতীয়াংশেরও বেশি টিকটক ব্যবহার করেন। ২০২৩ সালের মে থেকে ৫ই সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আমেরিকার ৫ হাজার ৭৩৩ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষদের নিয়ে এ জরিপ করা হয়।
টিকটক বিশেষ করে তরুণদের কাছে খুবই জনপ্রিয়। মূলত এটি ভিডিও তৈরি ও শেয়ার করার অ্যাপ। চীনের তৈরি অ্যাপটিতে মজার মজার হাস্যরস কৌতুকের ভিডিও তৈরি ও শেয়ার হয়। এজন্যই তরুণ ছেলেমেয়ের কাছে অ্যাপটি খুবই জনপ্রিয়। এর মাধ্যমে ব্যবহারকারী যেকোনো কিছুর সঙ্গে নিজের ঠোঁট মিলিয়ে ছোট ছোট ভিডিও তৈরি করে তা শেয়ার করতে পারে। আবার এর সাহায্যে নিজের পছন্দের গানের সঙ্গে নাচ বা নানা ধরনের কমেডিও তৈরি করা যায়। তরুণ-তরুণীরা সিনেমার সংলাপ বা গানের সঙ্গে অভিনয় করে মজার মজার ভিডিও তৈরি করেন।
বর্তমান সময়ে দ্রুততম যোগাযোগমাধ্যম হিসেবে অনেক প্রযুক্তি এসেছে। যা সবার নিত্যনৈমিত্তিক কাজ সহজ করে দিয়েছে। বিনোদনেও এসেছে নতুন মাত্রা। স্মার্টফোন, ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, মেসেঞ্জার, টুইটার, ইউটিউব, টিকটক, লাইকি ও পাবজি সমাজের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হয়ে উঠেছে।
আরো পড়ুন : ফোনে স্প্যাম কল, মেসেজ আসায় বিরক্ত? বন্ধ করবেন যেভাবে
তবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের যেমন ইতিবাচক দিক আছে, তেমনই সমানভাবে নেতিবাচক দিকও আছে। কিছু দুষ্ট লোকের কারণে অনেক সময়ই ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। কিন্তু ভালো উদ্দেশ্য নিয়ে এসব অ্যাপ তৈরি করা হয়েছে। যার মধ্যে এমন একটি মাধ্যম হলো টিকটিক। এটিও সব শ্রেণির মানুষের জন্যই তৈরি করা হয়েছে। এটি ব্যবহারেও কারো বিধিনিষেধ নেই। ফলে ঢালাওভাবে বেড়ে যাচ্ছে ব্যবহারকারীর সংখ্যা। যার সুযোগ নিচ্ছে এক শ্রেণির দুষ্ট চক্র। তারা খারাপ কনটেন্ট তৈরি করে মানুষকে প্রতারিত করছে। টিকটক কর্তৃপক্ষও মাঝে মাঝে সেদিকে নজর দেয়। অনেকের আইডি ব্যান্ড করা হয়।কিন্তু তার আগেই ক্ষতিটা হয়ে যায়। এসব কারণে টিকটক ব্যবহারকারীকে সমাজ, পরিবার, বন্ধু-বান্ধবরা বাঁকা চোখে দেখে। অনেকের মনেই ভ্রান্ত ধারণা টিকটক অর্থই খারাপ কিছু। অথচ সঠিক পরিচর্যা করা হলে এটিও হতে পারতো সুস্থ বিনোদন চর্চার শক্তিশালী মাধ্যম।
টিকটকের কনটেন্ট বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, এক শ্রেণির মানুষকে মজা দেয়ার জন্য সস্তা-মানহীন কনটেন্ট তৈরি করা হয়। এসবের বেশির ভাগই মানহীন, ভীতিকর, সম্মানহানিকর, অশ্লীল, রাষ্ট্রদ্রোহিতায় ভরপুর।
অনেকে রাস্তা-ঘাট, হাট-বাজার, জনসমাগমের ভেতরে টিকটক তৈরি করেন। যার ফলে দুর্ঘটনা, মারামারি, বিরক্তিকর পরিস্থিতিরও সৃষ্টি হয়। তাই এ ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা রোধে কার্যকরী পদক্ষেপ নেয়া উচিত। পাবলিক প্লেসে অন্যের কাজের ব্যাঘাত ঘটিয়ে যেন কেউ টিকটক না বানায়। টিকটকের নামে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা যাতে না ঘটে সেক্ষেত্রে প্রশাসনের নজরদারি বাড়াতে হবে। তবে শুধু প্রশাসনই নয়, পরিবারকেও বড় ভূমিকা রাখতে হবে। তার সন্তান কী করছে, কোন ধরনের কনটেন্ট তৈরি করছে, তা খেয়াল রাখা বাঞ্ছনীয়।
টিকটক একটি মোবাইল অ্যাপস হলেও এর নেতিবাচক দিক অনেক বেশি। টিকটক অ্যাপসের ব্যবহারের কারণে অনেক নেতিবাচক ঘটনা অহরহ ঘটছে। টিকটক, লাইকি, পাবজি অ্যাপস ব্যবহার করে দেশের শিশু-কিশোর এবং যুবসমাজ বিভিন্ন অনৈতিক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হচ্ছে। সারা দেশে কিশোর গ্যাং কালচারের মতো ভয়ানক অপরাধ গ্রুপ তৈরি হচ্ছে। দেশ থেকে দেশের বাইরে নারী ও অর্থ পাচারের ঘটনায়ও টিকটক, লাইকি এবং বিগো লাইভ ব্যবহার চলছে। এক্ষেত্রে বেশ কয়েকজন সেলিব্রেটি অভিনেত্রীর নামও সামনে এসেছে। অনেকে বুঝে কিংবা না বুঝে অর্থের লোভে করছে।
প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহারই মানুষের কল্যাণ বয়ে আনে। টিকটকেরও সঠিক এবং ইতিবাচক ব্যবহার নিশ্চিত করা জরুরি। একটি সম্ভাবনাময় প্ল্যাটফর্ম মুষ্টিমেয় অপব্যবহারকারীর জন্য ক্ষতির কারণ হতে পারে না।
এস/ আই.কে.জে/