বুধবার, ৩রা জুলাই ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
১৮ই আষাঢ় ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বাঙালি সংস্কৃতির প্রাচীনতম শিল্প শীতল পাটি

নিউজ ডেস্ক

🕒 প্রকাশ: ১২:০৫ পূর্বাহ্ন, ৩রা মার্চ ২০২৪

#

ছবি: সংগৃহীত

বাঙালি সংস্কৃতির প্রাচীনতম ও ঐতিহ্যবাহী এক শিল্প হলো শীতল পাটি। মূলত মুর্তাগাছের বেত দিয়ে নয়নাভিরাম বুননের মাধ্যমে তৈরি হয় মসৃণ এই মাদুর।

আমাদের দেশে একটা সময় সর্বত্র ব্যাপক জনপ্রিয় ছিল এই শীতল পাটি। শীতল পাটি ছাড়া গ্রামের বিয়ে ছিল কল্পনাতীত। কালের পরিক্রমায়, আধুনিক চাকচিক্যের আড়ালে শীতল পাটির জনপ্রিয়তায় খানিকটা ভাটা পড়েছে। তবে পৃষ্ঠপোষকতা ও পরিচর্যার অভাবে টাঙ্গাইলের গোপালপুরে হুমকির মুখে পড়েছে ঐতিহ্যবাহী এই শিল্পটি।

জানা যায়,  নগদা শিমলা ইউনিয়নের বাইশকাইল গ্রামে প্রায় ২৫০টি হিন্দু পাইততা পরিবারের বসবাস ছিল। তারাই মূলত ছিল শীতল পাটির কারিগর। যারা পাটি বানাতেন তাদের স্থানীয়ভাবে বলা হতো পাইততা।

স্থানীয়রা জানান, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী বাইশকাইলের পাইততা পাড়ায় গণহত্যা চালায়। যে কজন বেঁচে ছিল, আতঙ্কে তারাও দেশ ছাড়ে চলে যায়।

এখন বৃদ্ধ নরেশ চন্দ্র চন্দ (৮৫) কেবল পূর্ব-পুরুষের পাটি বানানোর পেশা ধরে রেখেছেন। আর এ পাটি বুননের কাজে তাকে সহায়তা করেন স্ত্রী কমলা রানী (৮০)। একটি শীতল পাটি বানাতে সময় লাগে ৬-৭ দিন।  সেই পাটি হাট-বাজারে বিক্রি করেন তাদের একমাত্র ছেলে মন্তোস চন্দ্র চন্দ (৪৫)। এগুলো দুই হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি করা যায়। এই একটি পরিবারের হাত ধরেই এখানে টিকে আছে শীতল পাটির গৌরব। তবে তারাও যেকোনো সময় অন্যত্র চলে যাবেন বলে শোনা যায়।

বৃদ্ধা কমলা রানী বলেন, ‘আমরা একটি পরিবার হওয়ায় বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। উৎসব, পূজা, পার্বণ একাই করতে হয়। কেউ মারা গেলে দাহ করার মানুষ পাই না। আমাদের অনেক জমি বেদখল হয়ে আছে, কিছুদিন আগে গণভবনে গিয়েছিলাম। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা হয়নি, তবে লিখিত আবেদন দিয়ে এসেছি।’

বৃদ্ধ নরেশ চন্দ্র চন্দ বলেন, ‘সরাসরি আমাদের কেউ কিছু না বললেও, এখানকার একমাত্র হিন্দু পরিবার হওয়ায় বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। বাড়ির সীমানা নিয়েও বিভিন্নভাবে আমাদের মানসিক চাপে রাখা হয়। আমাদের সমস্যার সমাধান হলে আমরা এখানেই থাকতেই চাই।’

আরো পড়ুন: অস্ট্রেলিয়ার জাতীয় বহুসাংস্কৃতিক উৎসবে বাংলাদেশের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি প্রদর্শন

বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের গোপালপুর শাখার সভাপতি হরিপদ দেব মঙ্গল বলেন, পরিবারটি একা হয়ে যাওয়ায় ওখানে টিকে থাকা প্রায় অসম্ভব হয়ে গেছে। তাদের জমিজমা-সংক্রান্ত একটি মামলা আদালতে চলমান। তাই এখন পর্যন্ত তারা সেখানে রয়েছে।

নগদা শিমলা ইউপি চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান সোহেল বলেন, ডিজিটালের ছোঁয়ায় পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে পাটির চাহিদা কমে যাওয়ায় মূলত বিভিন্ন পেশায় স্থানান্তরিত হয়েছে শীতল পাটির কারিগররা। ইউনিয়ন পরিষদ থেকে নরেশ চন্দ্রের পরিবারটিকে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হয়। সরকার যদি ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্পের ঐতিহ্য টিকিয়ে রাখতে আলাদাভাবে কোনো সহযোগিতা করে, তবে তা অবশ্যই তাদের নিকট পৌঁছানো হবে।

উপজেলার সমাজসেবা কর্মকর্তা এখলাছ মিয়া বলেন, ‘প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য আমাদের উপজেলায় কোনো প্রকল্প চালু নেই। নরেশ চন্দ্র চন্দকে বয়স্ক ভাতার আওতায় এনে ভাতা দেওয়া হচ্ছে।’

এসি/ আই.কে.জে/

বাঙালি সংস্কৃতি শীতল পাটি

খবরটি শেয়ার করুন