লাবুবু মূলত হাতব্যাগের সঙ্গে ঝোলানো একটি অনুষঙ্গ। ছবি: এএফপি
চলতি বছরের শুরু থেকে বিশ্বজুড়ে আলোচনার কেন্দ্রে রয়েছে এক অদ্ভুত দর্শনের ছোট পুতুল—লাবুবু। সোশ্যাল মিডিয়ায় এটি যেমন ট্রেন্ডিংয়ের শীর্ষে, তেমনি প্রথম সারির তারকাদের হাতেও বারবার দেখা যাচ্ছে এই লোমশ খেলনাটি। আর এই লাবুবুই পপ মার্টের আকাশছোঁয়া সাফল্যের চাবিকাঠি। চীনা এই খেলনা প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, ২০২৫ সালের প্রথম ছয় মাসে তাদের লাভ অন্তত ৩৫০ শতাংশ বেড়ে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
চীনের বেইজিংভিত্তিক কোম্পানিটি বলেছে, এ সময়ে তাদের আয় তিন গুণেরও বেশি বেড়েছে। বিশ্বের নানা প্রান্তে লাবুবুর চাহিদা ও ব্র্যান্ড পরিচিতির দ্রুত বিস্তার ও খরচ নিয়ন্ত্রণের ফলে তাদের মুনাফায় এমন বিশাল উল্লম্ফন এসেছে। খবর বিবিসির।
প্রথম দেখায় খেলনা মনে হলেও লাবুবু মূলত হাতব্যাগের সঙ্গে ঝোলানো একটি ফ্যাশন অনুষঙ্গ। ইংরেজিতে যেটাকে বলে ‘ব্যাগ চার্মস’। লাবুবু ‘দ্য মনস্টারস’ নামে কাল্পনিক চরিত্রগুচ্ছের অংশ। পুতুলটি তৈরি করেছেন হংকংয়ের শিল্পী ও লেখক কাসিং লাং। পুতুলটি চীনা খেলনা নির্মাতা প্রতিষ্ঠান পপ মার্ট বাজারে আনে ২০১৯ সালে। ২০১৫ সালে একটি শিশুতোষ বইয়ে প্রথম দেখা মেলে লাবুবুর। পরে ২০১৯ সালে চীনা টয় কোম্পানি ‘পপ মার্ট’ এই চরিত্রগুলোর ছোট ছোট পুতুল তৈরি করে বাজারে ছাড়ে। এর মূল অনুপ্রেরণা ছিল নর্ডিক লোককাহিনি।
পুতুলটির শরীর লোমশ, মুখে ধারালো দাঁতের সারি, আর চোখে-মুখে একধরনের রহস্য রয়েছে। লাবুবু সম্পর্কে এর নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের অফিশিয়াল ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, চরিত্রটি মনের দিক থেকে খুবই দয়ালু এবং সব সময় অন্যদের সাহায্য করতে চায়, তবে অনেক সময় চেষ্টার পরিণতি উল্টো হয়ে যায়।
লাবুবু মূলত ‘ব্লাইন্ড বক্স’ আকারে বিক্রি হয়, অর্থাৎ ক্রেতারা জানেন না তারা কোন ডিজাইনের পুতুলটি পেতে চলেছেন। এই অনিশ্চয়তা ও আকর্ষণীয় ডিজাইনের কারণে লাবুবু দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। এর আনবক্সিং ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে ব্যাপকভাবে। ফ্যাশন জগতের তারকারা, বিশেষ করে, ব্ল্যাকপিংকের লিসা, কিম কার্দাশিয়ান, রিহানা প্রমুখ লাবুবু হাতে ছবি তোলায় পুতুলটি সামাজিক মাধ্যমে ট্রেন্ডে পরিণত হয়।
তবে লাবুবুর জনপ্রিয়তার পাশাপাশি তৈরি হয়েছে কিছু বিতর্কও। কেউ কেউ একে বলছেন অপদেবতার আদলে তৈরি, আবার কেউ দাবি করছেন এটি অভিশপ্ত। এমনকি এর ভয়াবহ চেহারাকে ঘিরে ছড়িয়েছে নানা গুজব ও গল্প।
সংগ্রহকারীদের কাছে লাবুবু এখন একটি শিল্প বা রেয়ার আইটেমের (দুর্লভ) মতো, যার দাম প্রায়শই মূল দামের কয়েক গুণ হয়ে যায়। চাহিদা এতটাই বেড়েছে যে বাজারে নকল ‘লাফুফু’ পুতুল ছড়িয়ে পড়েছে, যা রোধে চীনা কর্তৃপক্ষ এরই মধ্যে কয়েক হাজার অনুলিপি পণ্য জব্দ করেছে। চীনা কর্তৃপক্ষ ইতিমধ্যে জুন মাসেই ৪৬ হাজারটির বেশি নকল লাফুফু বাজেয়াপ্ত করেছে।
পপ মার্ট মূলত ‘ব্লাইন্ড বক্স’ পদ্ধতিতে খেলনা বিক্রি করে, যেখানে প্যাকেটের ভেতরের খেলনাটি না দেখেই গ্রাহককে কিনতে হয়। যদিও এই বিপণন কৌশল নিয়ে সমালোচনা রয়েছে—অনেকে একে জুয়ার মতো আচরণে উৎসাহ দেওয়া বলে মনে করেন। ২০১৯ সালে বাজারে আসার পর থেকেই লাবুবু পপ মার্টের সাফল্যের প্রধান চালিকাশক্তিতে পরিণত হয়েছে। ২ হাজারেরও বেশি দোকান ও ভেন্ডিং মেশিনে এই পণ্য বিক্রি হচ্ছে।
জে.এস/
খবরটি শেয়ার করুন