ছবি: সংগৃহীত
বিড়াল ও কুকুর—দুই ভিন্ন প্রজাতির প্রাণী। বিবর্তনের হিসাবে তারা আলাদা হয়েছে প্রায় ৫ কোটি বছর আগে। তবে এদের চেহারার মধ্যে আশ্চর্যজনক মিল খুঁজে পেয়েছেন গবেষকরা। মানুষ কতটা গভীরভাবে প্রকৃতিকে বদলে দিতে পারে, তা বোঝা যাচ্ছে নতুন এক গবেষণায়। তথ্যসূত্র সায়েন্স অ্যালার্টের।
আমেরিকার কডার কলেজের বিবর্তনবিদ অ্যাবি গ্রেস ড্রেক ও তার সহকর্মীরা বিড়াল, কুকুরসহ তাদের বন্য আত্মীয়দের ১ হাজার ৮১০টি খুলি স্ক্যান করে দেখেছেন। এ পর্যবেক্ষণে গবেষকরা দেখেন, অনেক প্রজাতির কুকুর ও বিড়ালের মধ্যে মাথার খুলির আকারে আশ্চর্যজনক মিল রয়েছে।
গবেষণায় উঠে এসেছে, মানুষের হস্তক্ষেপে বিবর্তনের প্রক্রিয়া স্বাভাবিক পথ থেকে সরে এসে নতুন একটি দিকে মোড় নিয়েছে—একে বলা যায় কনভার্জেন্ট ইভোলিউশন।
সাধারণত বিবর্তনে ডাইভারজেন্স বেশি দেখা যায়, যেখানে এক পূর্বপুরুষ থেকে আগত দুই প্রজাতি সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আলাদা রূপ ধারণ করে। তবে কনভারজেন্স তখনই ঘটে, যখন বিভিন্ন প্রজাতি পরিবেশগত চাপে একরকম গঠন বা বৈশিষ্ট্য অর্জন করে।
বিবর্তনীয় জীববিজ্ঞানে ‘ডাইভারজেন্স’ একটি সাধারণ প্রক্রিয়া। সহজভাবে বললে, ডাইভারজেন্স হলো এমন প্রক্রিয়া, যেখানে একটি সাধারণ পূর্বপুরুষ থেকে আগত দুটি প্রাণী সময়ের সঙ্গে সঙ্গে একে অপরের থেকে ক্রমশ ভিন্ন হয়ে যায়।
অন্যদিকে, কনভারজেন্স বা সাদৃশ্য হলো বিপরীত প্রক্রিয়া, যেখানে আলাদা উৎস থেকে আগত প্রাণীরা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে একে অপরের মতো হয়ে ওঠে। যখন কোনো প্রাণী সম্প্রদায় বিভক্ত হয়ে বিভিন্ন পরিবেশে মানিয়ে নিতে থাকে, তখন তারা ধীরে ধীরে নতুন নতুন বৈশিষ্ট্য অর্জন করে—এটাকেই বলা হয় ডাইভারজেন্ট ইভোলিউশন।
এটি নতুন প্রজাতির মধ্যে ভিন্ন বৈশিষ্ট্য গঠনের প্রধান পদ্ধতিগুলোর একটি, যার মাধ্যমে একটি প্রাণী সম্প্রদায় আলাদা পথে বিবর্তিত হয়। তবে কখনো কখনো বিবর্তন ভিন্ন পথে এগোয়। কনভারজেন্স ঘটে তখনই, যখন সম্পর্কহীন বিভিন্ন প্রজাতি একই ধরনের পরিবেশগত চাপের কারণে আলাদাভাবে একই রকমের বৈশিষ্ট্য অর্জন করে।
গৃহপালিত বিড়াল, কুকুর এবং আরও অনেক গৃহপালিত প্রাণীর ক্ষেত্রে দেখা গেছে, মানুষের ইচ্ছাকৃত ও অনিচ্ছাকৃত জিন নির্বাচনের ফলে এ কনভারজেন্স তৈরি হয়েছে। এর ফলে বিভিন্ন প্রজাতি অনিচ্ছাকৃতভাবেই একে অপরের মতো বৈশিষ্ট্য অর্জন করতে শুরু করেছে।
অ্যাবি গ্রেস ড্রেক ও তার দল ৩-ডি স্ক্যানের মাধ্যমে বিভিন্ন সংগ্রহশালা, পশু চিকিৎসা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও ডিজিটাল আর্কাইভ থেকে সংগৃহীত বিড়াল ও কুকুরের খুলি বিশ্লেষণ করেন। তাদের গবেষণায় দেখা যায়, গৃহপালিত প্রাণীগুলোর খুলির আকারে বৈচিত্র্য বেড়েছে, আবার কিছু কিছু ক্ষেত্রে বিড়াল ও কুকুরের খুলি আশ্চর্যজনকভাবে একে অপরের মতো হয়ে উঠেছে।
মানুষের চাহিদা অনুযায়ী গৃহপালিত প্রাণীদের রূপ বদলে দেওয়ার এ চর্চা শুধু বিড়াল-কুকুরে সীমাবদ্ধ নয়। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, মাংসের জন্য লালনকৃত কিছু মুরগির শরীরে বুকের পেশি পুরো শরীরের ৩০ শতাংশ পর্যন্ত হয়ে ওঠে। এতে হার্ট ও ফুসফুসের সমস্যা হয় মারাত্মকভাবে।
এইচ.এস/
খবরটি শেয়ার করুন