ছবি : সংগৃহীত
দ্বাপর যুগের সন্ধিক্ষণে আবির্ভূত হিন্দুধর্মের মহাবতার ভগবান শ্রীকৃষ্ণের আজ জন্মতিথি। হিন্দুদের অন্যতম প্রধান ধর্মীয় উৎসব- শুভ জন্মাষ্টমী। হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস অনুসারে, পৃথিবী থেকে দুরাচারী দুষ্টদের দমন আর সজ্জনদের রক্ষার জন্যই তাদের মহাবতার ভগবান শ্রীকৃষ্ণ এই দিনে পৃথিবীতে আবির্ভূত হয়েছিলেন। হিন্দু পঞ্জিকা মতে, সৌর ভাদ্র মাসের কৃষ্ণপক্ষের অষ্টমী তিথিতে যখন রোহিণী নক্ষত্রের প্রাধান্য হয়, তখন জন্মাষ্টমী পালিত হয়। উৎসবটি গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার অনুসারে, প্রতি বছর মধ্য-আগস্ট থেকে মধ্য-সেপ্টেম্বরের মধ্যে কোনো একসময়ে পড়ে। জন্মাষ্টমী উপলক্ষে আজ সরকারি ছুটি।
শ্রীকৃষ্ণের জন্মতিথি ও জন্মাষ্টমী উৎসবের ব্যয় কমিয়ে বন্যাদুর্গতদের পাশে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ ও মহানগর সর্বজনীন পূজা কমিটি। ঢাকেশ্বরী মন্দিরে কেন্দ্রীয় জন্মাষ্টমী উৎসব উপলক্ষে দুই দিনব্যাপী কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে।
আজ সোমবার সকাল ৮টায় দেশ ও জাতির মঙ্গল কামনায় শ্রীশ্রীগীতাযজ্ঞ, বেলা ৩টায় পলাশীর মোড় থেকে জন্মাষ্টমীর কেন্দ্রীয় মিছিল ও রাতে তিথি অনুযায়ী কৃষ্ণপূজা হবে। ৩০শে আগস্ট ঢাকেশ্বরী মন্দিরে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে। রাজধানীসহ সারা দেশের বিভিন্ন মন্দিরে পূজা-অর্চনা, তারকব্রহ্ম হরিনাম সংকীর্তন ও তারকব্রহ্ম নামযজ্ঞেরও আয়োজন করেছে হিন্দু সম্প্রদায়। বিভিন্ন মন্দিরের আয়োজকরা জানিয়েছেন, আজ সকালে ষোড়শ উপচারে পূজা শেষ করে প্রসাদ বিতরণ ও ধর্মীয় আলোচনা অনুষ্ঠানের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
হিন্দু সম্প্রদায়ের ধর্মীয় বিশ্বাস মতে, কৃষ্ণ ছিলেন স্বয়ং ঈশ্বর। শ্রীকৃষ্ণ পৃথিবীকে কলুষমুক্ত করতে কংস, জরাসন্ধ ও শিশুপালসহ বিভিন্ন অত্যাচারিত রাজাদের ধ্বংস করেন এবং ধর্মরাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন। হিন্দুধর্ম মতে, ভগবান শ্রীকৃষ্ণের অপ্রাকৃত লীলাকে কেন্দ্র করেই জন্মাষ্টমী উৎসব। ঐ সময় অসুররূপী রাজশক্তির দাপটে পৃথিবী হয়ে ওঠে ম্রিয়মাণ, ধর্ম ও ধার্মিকেরা অসহায় সংকটাপন্ন অবস্থায় নিক্ষিপ্ত হন। অসহায় বসুমতি পরিত্রাণের জন্য প্রজাপতি ব্রহ্মার শরণাপন্ন হন। ব্রহ্মার পরামর্শে দেবতারা সবাই মিলে যান দেবাদিদেব মহাদেবের কাছে পরিত্রাণের উপায় খুঁজে বের করতে। সৃষ্টি, স্থিতি ও প্রলয়ের যুগসন্ধিক্ষণে তারা সকলে বিষ্ণুর বন্দনা করেন। স্বয়ং ব্রহ্মা মগ্ন হন কঠোর তপস্যায়। ধরণীর দুঃখ-দুর্দশায় ব্যথিত হয়ে দেবতাদের ডাকে সাড়া দিয়ে তিনি দেবতাদের অভয়বাণী শোনান এই বলে যে, তিনি অচিরেই মানবরূপে ধরাধামে অবতীর্ণ হবেন দেবকীর অষ্টম গর্ভের সন্তানরূপে শঙ্খ, চক্র, গদা, পদ্মধারী শ্রীকৃষ্ণ নামে। এরপর তার জন্ম হয়।
বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ ও মহানগর সর্বজনীন পূজা কমিটির সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, আকস্মিক বন্যায় বৃহত্তর কুমিল্লা ও নোয়াখালীসহ দেশের অন্তত ১০টি জেলা প্লাবিত হয়েছে। জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। এসব এলাকায় পূজা উদযাপন পরিষদের নেতাদের বন্যার্তদের পাশে দাঁড়ানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তারা ইতিমধ্যে ত্রাণ ও উদ্ধার তৎপরতা শুরু করেছেন। পূজা উদযাপন পরিষদের পক্ষ থেকে জন্মাষ্টমী উৎসবের ব্যয় কমিয়ে বন্যার্তদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য জেলা, মহানগর ও উপজেলা কমিটিকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কেন্দ্রীয়ভাবে গঠিত ত্রাণ তহবিলের আহ্বায়ক করা হয়েছে আইনজীবী সুব্রত চৌধুরীকে। আর গোপাল দেবনাথ ও বিপ্লব দেকে সদস্যসচিব করা হয়েছে।
শুক্রবার শ্রীশ্রী ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে জন্মাষ্টমী উপলক্ষে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় সভাপতিত্ব করেন পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি বাসুদেব ধর। সভায় লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সন্তোষ শর্মা। লিখিত বক্তব্যে সন্তোষ শর্মা বলেন, ঢাকেশ্বরী মন্দিরে কেন্দ্রীয় জন্মাষ্টমী উৎসব উপলক্ষে দুই দিনব্যাপী কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। মতবিনিময় সভায় উপস্থিত ছিলেন মহানগর সর্বজনীন পূজা কমিটির সভাপতি জয়ন্ত কুমার দেব, সাধারণ সম্পাদক তাপস চন্দ্র পাল, হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজল দেবনাথ প্রমুখ।
আই.কে.জে/