ছবি: সংগৃহীত
ভারতের টেলিভিশন ও সিনেমার সেটে নানা রকম চরিত্রে অভিনয় করেছেন। কিন্তু অনেকেই জানেন না পর্দার ‘খলনায়িকা’ বাস্তবজীবনে কতটা নির্যাতিত ছিলেন। পরিবারে কটূক্তি থেকে মানসিক নির্যাতন; এসবই সহ্য করেছেন অভিনেত্রী দীপশিখা নাগপাল।
সাহসী চরিত্রে অভিনয় করায় পরিবার তাকে নিয়ে বিব্রত হয়, এমনকি মেয়েও তার সিনেমার সিডি ভেঙে ফেলেছিলেন। এ নিয়ে দীর্ঘদিন বিষণ্নতায় ভুগেছেন অভিনেত্রী। সম্প্রতি ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে এ বিষয়ে সবিস্তারে বলেছেন দীপশিখা।
দীর্ঘ ক্যারিয়ারে অনেক কিছুই দেখেছেন দীপশিখা। তবে তাকে সবচেয়ে বেশি ভুগিয়েছে আত্মবিশ্বাসহীনতা। অল্প বয়স থেকেই আত্মবিশ্বাসহীনতার সঙ্গে লড়াই করেছেন তিনি। ‘শৈশবে আমার কোনো আত্মবিশ্বাসই ছিল না। আমি কথা বলতে পারতাম না, আমার কথা কেউ শুনত না’, বলেন দীপশিখা।
ছোটবেলায় মাকে খুব পছন্দ করতেন দীপশিখা, তবে মা সব সময় ছোট বোনকে বেশি আদর করায় তিনি কষ্ট পেতেন। ‘মনে হতো, বড় মেয়ে হওয়া যেন আমার ভুল’, তিনি বলেন। ছোটবেলায় সব সময়ই উপেক্ষিতবোধ করতেন, এটা সব সময়ই তার মধ্যে একধরনের হতাশা তৈরি করত।
দীপশিখাকে বারবার ‘পাতলা’ বলা হতো। ‘তোমাকে কেউ বিয়ে করবে না’, এমন কথাও বলতেন কেউ কেউ। এ ধরনের মন্তব্য শুনতে শুনতে তার মনে হতো, ‘আমি কেন জন্মেছি?’ আরও জটিলতা সৃষ্টি করেছিল শিক্ষাব্যবস্থার বদল—ইংরেজি মাধ্যম থেকে হঠাৎ করে গুজরাটি মাধ্যমে ভর্তি।
ইংরেজিতে খুব একটা সরগড় ছিলেন না; এটা আত্মবিশ্বাসে চিড় ধরায়। তিনি বলেন, ‘আমি ভেবেছিলাম মিস ইন্ডিয়াতে গেলে যদি কেউ ইংরেজিতে প্রশ্ন করে এবং আমি ঠিকভাবে উত্তর দিতে না পারি, তবে সবাই আমার উপহাস করবে’—তাই সেই স্বপ্নটাকেই জলাঞ্জলি দেন।
পরিবারকে সন্তুষ্ট রাখতে এবং ‘ভালো মেয়ে’ হিসেবে থেকে যেতে দীপশিখা ছোটবেলা থেকেই নিজের ইচ্ছাকে দমন করতেন। বড় পর্দার প্রস্তাবও তিনি প্রত্যাখ্যান করেছেন—বলা হয়, পরিবারের খুশি তার জন্য আগে।
কিন্তু পরে যখন তিনি সাহসী চরিত্রে অভিনয় করতে শুরু করেন, পরিবারে জানাজানি হয়; তখন তৈরি হয় নতুন সংকট। কেউ তার সঙ্গে ভালোভাবে কথা বলত না, দেখতে নানা কটূক্তি করতেও ছাড়ত না। এসব দীপশিখাকে হতাশার গহ্বরে ঠেলে দেয়। এসব ঘটনা ও দুবার বিচ্ছেদ মিলিয়ে তিনি হতাশায় ডুবে যান।
ব্যক্তিগত জীবনে যত ঝড়ই বয়ে যাক, দীপশিখা নিজের কাজের ক্ষেত্রে সৎ ছিলেন। শুটিং সেটে কাউকে বুঝতে দিতেন না, ভেতরে কী চলছে। তিনি মনে করেন, সব সামলে কাজ করে গেছেন বলেই এখনো টিকে আছেন।
জে.এস/
খবরটি শেয়ার করুন