শ্রীলঙ্কার নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট অনূঢ়া কুমারা দিসানায়েকে - ছবি: সংগৃহীত
শ্রীলঙ্কার নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট অনূঢ়া কুমারা দিসানায়েকে শপথ নিয়েছেন। সোমবার (২৩শে সেপ্টেম্বর) রাজধানী কলম্বোয় আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তিনি শপথ গ্রহণ করেন।
দেশটির রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে প্রচারিত শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানের বরাত দিয়ে এ তথ্য জানিয়েছে বিবিসি।
এর আগে রোববার (২২শে সেপ্টেম্বর) দ্বিতীয় দফায় ভোট গণনার পর অনূঢ়াকে বিজয়ী ঘোষণা করে দেশটির নির্বাচন কমিশন। এর মধ্য দিয়ে ৫৫ বছর বয়সী দিসানায়েকে দ্বীপরাষ্ট্রটির প্রথম বামপন্থী হিসেবে রাষ্ট্রপ্রধান হওয়ার গৌরব অর্জন করেন। সেইসঙ্গে ২০২২ সালে গণবিক্ষোভের মুখে তখনকার প্রেসিডেন্ট দেশ ছেড়ে পালানোর দুই বছরেরও বেশি সময় পর নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট পায় শ্রীলঙ্কা।
কমিশনের ঘোষণা অনুযায়ী, ন্যাশনাল পিপলস পাওয়ার (এনপিপি) জোটের নেতা হিসেবে অনূঢ়া কুমারা দিশানায়েকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন। দিশানায়েকে ৪২ দশমিক ৩১ শতাংশ ভোট পেয়ে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম দুই প্রতিদ্বন্দ্বী এসজেবি নেতা সাজিথ প্রেমাদাসা পেয়েছেন ৩২ দশমিক ৭৬ শতাংশ ভোট। মাত্র ১৭ শতাংশ ভোট পেয়েছেন ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট রণিল বিক্রমাসিংহে।
শ্রীলঙ্কার এ নতুন প্রেসিডেন্টের পুরো নাম দিশানায়েকে মুদিয়ানসেলাগে অনূঢ়া কুমারা দিশানায়েকে। দেশটির রাজধানী কলম্বো থেকে প্রায় ১৭০ কিলোমিটার দূরে অনুরাধাপুরা জেলার থাম্বুতেগামা গ্রামে ১৯৬৮ সালের ২৪শে নভেম্বর এক নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারে দিশানায়েকের জন্ম। বাবা ছিলেন একজন দিনমজুর ও মা গৃহিণী।
শৈশব থেকে কঠোর অধ্যবসায়ের মাধ্যমে তিনি কেলানিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞান ডিগ্রি অর্জন করেন। ছাত্রজীবনেই তিনি রাজনীতিতে সক্রিয় হন এবং ১৯৮৭-৮৯ সালের জেভিপির সশস্ত্র আন্দোলনে যুক্ত হন।
১৯৯৫ সালে দিসানায়েক জেভিপির কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটিতে যোগ দেন এবং ২০০০ সালে জাতীয়তাবাদী তালিকা থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি এলটিটিইর (তামিল বিদ্রোহী গোষ্ঠী) বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য লড়াই করেন।
এদিকে বৌদ্ধ ভিক্ষুদের সমর্থন নিশ্চিত করতে দিসানায়েক সংবিধানের ৯নং অনুচ্ছেদের প্রতি নিজস্ব সমর্থনের কথা জানিয়ে বলেন, ‘এই অনুচ্ছেদে কোনো পরিবর্তন আনার প্রচেষ্টা তার দল প্রতিরোধ করবে।’
দিসানায়েক ১৯৮৭ সালের ভারত-শ্রীলঙ্কা চুক্তির তীব্র সমালোচনা করে। এছাড়াও তিনি ভারতীয় সম্প্রসারণবাদ বিরোধী অবস্থান গ্রহণ করেন এবং কাচাথিভু দ্বীপকে ভারতকে ফেরত দেয়ার যেকোনো প্রচেষ্টার বিরোধিতা করেন।
দীপরাষ্ট্র শ্রীলঙ্কার এ নব্য প্রেসিডেন্ট দিসানায়েক জানিয়েছেন, তার সরকার আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের বেইলআউট চুক্তির শর্ত পুনরায় আলোচনা করবে, যা বর্তমান সরকারের নীতির বিপরীত। এর পাশাপাশি তিনি শ্রীলঙ্কার জন্য একটি নতুন সূচনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। দেশকে অর্থনৈতিক সংকট থেকে মুক্ত করার লক্ষ্যে কাজ করবেন বলেও জানান এই প্রেসিডেন্ট।
উল্লেখ্য, বছর দুয়েক আগে বিশ্বের কাছে উদ্বেগের বিষয় হয়ে উঠেছিল শ্রীলঙ্কা। চরমে ওঠে আর্থিক সংকট। তার উপর বিপুল অঙ্কের ঋণের বোঝা। সব কিছু সামলাতে হিমশিম খায় সরকার। এই পরিস্থিতে এবার যিনি প্রেসিডেন্ট হবেন, তার উপরে যে গুরুদায়িত্ব থাকবে তা বলাই বাহুল্য।
ওআ/ আই.কে.জে/