শুক্রবার, ১৪ই মার্চ ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
৩০শে ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

‘জেন-জি’ হলো প্রকৃত ডিজিটাল প্রজন্ম

উপ-সম্পাদকীয়

🕒 প্রকাশ: ০৬:৫৫ অপরাহ্ন, ৮ই নভেম্বর ২০২৪

#

ছবি - সংগৃহীত

পৃথিবী জুড়ে বর্তমান সময়ে ‘জেন-জি’ শব্দটি খুব বেশি ব্যবহার হচ্ছে। ‘জেন জি’ এর পূর্ণ রূপ হলো জেনারেশন জেড’ (Generation z)। ইন্টারনেট ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে বেড়ে ওঠা তরুণ প্রজন্মকে জেন-জি বলা হয়। জেনারেশন জেড বা জেনারেশন জি'কে Gen z, i Generation, Gen Tech, Gen Wii, Homeland Generation, Net Gen, Digital Natives, Plurals, Zoommers নামেও ডাকা হয়। এই প্রজন্ম ইন্টারনেট এবং সোশ্যাল মিডিয়ার সাথে বড় হয়েছে। এদেরকে বলা হচ্ছে ভবিষ্যতের রূপকার, কারণ তারা আগামী পৃথিবীর গঠন এবং পরিচালনার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

নব্বই দশকের শেষের দিকে ১৯৯৭ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত যারা জন্মগ্রহণ করেছেন তাদেরকে বলা হয় জেনারেশন জেড বা জেন জি। আরও সুস্পষ্ট করে বলতে গেলে ২০২৪ সালের হিসেবে সবচেয়ে বড় জেড সদস্যের বয়স ২৭, আর সর্বকনিষ্ঠজনের বয়স ১২ বছর। এদের পূর্ববর্তী প্রজন্মের ক্যাটাগরি জেনারেশন ওয়াই, যাদের জন্ম ১৯৮১ থেকে ১৯৯৬ সালের মধ্যে। এদেরকে বলা হয় মিলেনিয়াল্স। জেন জি-এর উত্তরসূরিরা জেনারেশন আলফা নামে পরিচিত, যাদের জন্মকাল ২০১২ থেকে ২০২৪।

মূলত জেন জি প্রজন্ম হলো প্রকৃত ডিজিটাল প্রজন্ম। এর আগের প্রজন্ম ইন্টারনেটের উত্থান দেখলেও তারা ডিশ ক্যাবল সংযুক্ত টেলিভিশন দেখেছে, ল্যান্ডফোনও ব্যবহার করেছে। কিন্তু জেন-জি গোত্রের অধিকাংশই বড় হয়েছে একধরনের প্রযুক্তিগত উৎকর্ষের মধ্য দিয়ে। এই প্রজন্মের অনেকেই একেবারে ছোটবেলা থেকেই ফেসবুকসহ অন্যান্য সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার করে বড় হয়েছে, কিন্তু এর আগের প্রজন্মের বেড়ে ওঠার ক্ষেত্রে এমন সুযোগ ছিল না। এখন জেন-জি'র অনেক সদস্যই স্মার্টফোন আসার আগের কোনো জীবনের কথা মনে করতে পারে না। আবার, জেন-জি বড় হয়েছে আইফোনের যুগে। ২০০৭ সালে অ্যাপলের আইফোন প্রথম বাজারে আসে, যার প্রতিটি সংস্করণই সময়ের চেয়ে এগিয়ে। ১৯৯৭ সালে চালু হয় প্রথম সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের সাইট সিক্স ডিগ্রি। যেখানে ব্যক্তিগত প্রোফাইল তৈরিসহ ছবি আপলোড, শেয়ার এবং বন্ধুত্ব করা যেত। এরই বর্তমান রূপ এখনকার এক্স (যা আগে টুইটার নামে পরিচিত ছিল) এবং ইন্সটাগ্রাম।

আরও একটি বিষয় হলো, জেন-জি সাধারণত শহর বা মহানগর এলাকার বড় হচ্ছে। এদের খুব সীমিত একটা অংশ বেড়ে উঠছে গ্রামাঞ্চলে। জেন-জি এর সবচেয়ে বয়স্ক সদস্যরা বিয়ের ক্ষেত্রে দেরি করেছেন। এদের মাত্র ৪ শতাংশ ১৮ থেকে ২১ বছর বয়সের মধ্যে বিয়ে করছেন। এই হার তাদের আগের প্রজন্মের তুলনায় প্রায় অর্ধেক।

এ প্রজন্ম স্যাটেলাইট টিভি চ্যানেলের যুগ থেকে ফেসবুক ও ইউটিউবের যুগের রূপান্তরটা দেখেছে। কাগজের পত্রিকার ওপর নির্ভরতা কমিয়ে ইন্টারনেট যুগের সাক্ষী হয়েছে। তাৎক্ষণিক ইচ্ছে পূরণের জন্য টিকটক প্ল্যাটফর্মগুলোর মতো দ্রুত, আকর্ষণীয় এবং বৈচিত্র্যপূর্ণ কন্টেন্টের স্বাদ নিচ্ছে। এতে করে দ্রুতগতির জীবনধারায় পাল্টে যাচ্ছে বিনোদন, সামাজিকীকরণ এবং ব্যবসায়িক কার্যক্রম। বিশেষত প্রতিষ্ঠিত ব্র্যান্ডগুলোর পাশাপাশি নতুন কোম্পানিগুলোও গ্রাহকদের আকৃষ্ট করার জন্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম অপরিহার্য হয়েছে।

ইন্টারনেটজুড়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও রিভিউ সাইটগুলো যে কোনো কেনাকাটার আগেই পণ্যগুলো নিয়ে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে গবেষণার প্রয়াস যোগায়। এই প্রয়াস বিশ্ববিদ্যালয়ে ডিগ্রি এবং চাকরি খোঁজা পর্যন্ত বিস্তৃত। তারা মূলত আর্থিক সচ্ছলতাকে কেন্দ্র করে একটি সুদূরপ্রসারী লক্ষ্যকে সামনে রেখে তাদের আগ্রহকে পরিচালিত করে। ফলে বাস্তববাদী শিক্ষা, অনলাইন সম্পদের ব্যবহার, বিনিয়োগ এবং উদ্যোক্তা সম্পর্কে জানার জন্য প্রাসঙ্গিক প্ল্যাটফর্মগুলোতে ভিড় জমায়।

আগের প্রজন্মের কিশোর-তরুণরা ব্যক্তিগত ডায়েরি ব্যবহার করত শুধু একান্তে নিজের সঙ্গে কিছু সময় কাটানোর জন্য। সেই ডায়েরি পড়ার কারও অধিকার ছিল না, এমনকি সেই জগতে কারও হস্তক্ষেপকে নিতান্ত অনুপ্রবেশ হিসেবে গ্রাহ্য হত। অপরদিকে জেন জি সামাজিক মাধ্যমগুলোতে তাদের ব্যক্তিগত প্রোফাইল সবাই দেখাতে পছন্দ করে। প্রত্যেকে নিজের স্বতন্ত্রতা প্রতিষ্ঠিত করার জন্য ভার্চুয়াল জগতে তাদের জীবনধারাকে শেয়ার করে।

ইন্টারনেটকে কাজে লাগিয়ে ফ্রিল্যান্সিং এবং আউটসোর্সিং-এর উত্থানটা হয়েছে মূলত এদের সময়টাতে।অধিকাংশ তরুণ শুধু অতিরিক্ত আয়ের জন্য নয় বরং ফুল-টাইম চাকরি হিসেবে এই কাজগুলোকে বেছে নিয়েছেন। প্রজেক্টের সময়সীমাতে স্বাধীনতা থাকায় পড়াশোনার পাশাপাশি এই ফ্রিল্যান্সিং-এর প্রতি তাদের এক রকম আবেগ কাজ করে। ক্লায়েন্ট খোঁজার পাশাপাশি নিজেকে রীতিমত একটি ব্র্যান্ড হিসেবে উপস্থাপন করার জন্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। ফেসবুক, এক্স, ইন্সটাগ্রামের মাধ্যমে ফ্রিল্যান্সাররা ব্যক্তিগত ব্র্যান্ড তৈরি করে বিশ্বব্যাপী কাঙ্ক্ষিত ক্লায়েন্টদের কাছাকাছি পৌঁছাতে পারে। সব মিলিয়ে আর্থিকভাবে সচ্ছলতা ও স্বাধীনতার সন্নিবেশ ঘটায় এই মুক্ত পেশা অচিরেই স্থলাভিষিক্ত হয়ে পড়ছে ঐতিহ্যবাহী পেশাগুলোর জায়গায়।

কেবল বিনোদনই নয়, ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের এই যুগান্তকারী প্রভাব কেনাকাটা, পারস্পরিক যোগাযোগ, শিক্ষাব্যবস্থা এবং ব্যবসা পর্যন্ত প্রসারিত হয়েছে। অনলাইন ও অফলাইনের এই দ্বৈত অভিজ্ঞতার ফলে জুমাররা মিলেনিয়ালদের তুলনায় দ্রুত চিন্তা করতে এবং সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারে।

জেন-জি প্রজন্ম আমাদের পৃথিবীটাকে হাতের মুঠে নিয়ে এসেছে। তাদেরকে প্রযুক্তিজ্ঞান কিংবা দক্ষতা অবমূল্যায়ন করার সুযোগ নেই। গণআন্দোলন কিংবা মার্কিন নির্বাচন সর্বত্র তাদের সরব উপস্থিতি। তারা আগামী বিশ্বের ভবিষ্যৎ।

আই.কে.জে/


জেন-জি

সুখবর এর নিউজ পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

খবরটি শেয়ার করুন