বৃহস্পতিবার, ২৮শে আগস্ট ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
১২ই ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সর্বশেষ

*** তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা ফিরলে কখন থেকে কার্যকর হবে—প্রশ্ন প্রধান বিচারপতির *** শাহবাগে এসে শিক্ষার্থীদের কাছে ডিএমপি কমিশনারের ‘দুঃখ প্রকাশ’ *** ২৮ তারিখ নয়, রাকসুর ভোট গ্রহণ ২৫শে সেপ্টেম্বর *** গাজা যুদ্ধের কভারেজ নিয়ে ক্ষুব্ধ সাংবাদিক ঘোষণা দিয়ে রয়টার্স ছাড়লেন *** ৩১ বিলিয়ন ডলার ছাড়াল রিজার্ভ *** জুলাই সনদের অঙ্গীকারনামা সংশোধন করবে কমিশন *** পান্নুন হত্যাচেষ্টার ষড়যন্ত্রে জড়িত ‘র’–এর সাবেক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দিল্লিতে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা *** বেসরকারি খাতে যাচ্ছে নগদ, এক সপ্তাহের মধ্যে বিজ্ঞপ্তি: গভর্নর *** নেপালের বিপক্ষে এগিয়ে থেকে বিরতিতে বাংলাদেশ *** চন্দ্রনাথ পাহাড় ঘিরে উসকানির চিহ্ন দেখামাত্র ব্যবস্থা নিতে তিন উপদেষ্টার নির্দেশ

কবি নজরুল ও তার মৃত্যু ভাবনা

উপ-সম্পাদকীয়

🕒 প্রকাশ: ১১:৩৮ অপরাহ্ন, ২৭শে আগস্ট ২০২৫

#

নবকুমার রায়

বাংলাদেশের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম। আজ তার  ৪৯তম মৃত্যুবার্ষিকী। ১৯৭৬ সালের এই দিনে (১৩৮৩ বঙ্গাব্দের ১২ই ভাদ্র) তিনি ঢাকায় পিজি হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। কবি পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার আসানসোল মহকুমার চুরুলিয়া গ্রামে ১৩০৬ বঙ্গাব্দের ১১ই জ্যৈষ্ঠ (১৮৯৯ খ্রিষ্টাব্দের ১৪ই মে) জন্মগ্রহণ করেন।

কবি ৭৭ বছর বয়সে তৎকালীন পিজি হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। কবি নজরুল তার কবিতায় লিখেছিলেন, ‘মসজিদেরই পাশে আমায় কবর দিও ভাই,/যেন গোরের থেকে মুয়াজ্জিনের আযান শুনতে পাই’। সেই বিবেচনাতেই  কবিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের পাশে সমাধিস্থ করা হয়েছে।

কবি ছোটবেলা থেকেই  দারিদ্র্যের কশাঘাতে জর্জরিত হয়েও কখনো আপস করেননি। মাথা নত করেননি লোভ-লালসা, খ্যাতি, অর্থ, বিত্ত-বৈভবের কাছে। আজীবন শোষিত-বঞ্চিত মানুষের মুক্তির জন্য সংগ্রাম করে গেছেন। মানবতার মুক্তির পাশাপাশি সাম্প্রদায়িকতা, ধর্মান্ধতা, কুসংস্কার, কূপমণ্ডূকতার বিরুদ্ধেও সোচ্চার ছিলেন।

নির্ভীক চিত্তে মুক্তবুদ্ধি ও চিন্তার পক্ষে কলম ধরেছেন। তার রচিত ‘চল্ চল্ চল্’ গানটি আমাদের রণসংগীত। তিনি দ্রোহে ও প্রেমে, কোমলে-কঠোরে বাংলা সাহিত্য ও সংগীতে দিয়েছেন নতুন মাত্রা। যেমন লেখাতে বিদ্রোহী, তেমনি জীবনেও।

১৯২১ সালের ডিসেম্বর মাসে কুমিল্লা থেকে ফেরার পথে নজরুল দুটি বৈপ্লবিক সাহিত্যকর্মের সৃষ্টি করেন। একটি হচ্ছে ‘বিদ্রোহী’ কবিতা ও অপরটি ‘ভাঙ্গার গান’। ১৯২২ সালে তার বিখ্যাত কাব্যগ্রন্থ অগ্নিবীণা প্রকাশিত হয়। এই কাব্যগ্রন্থের প্রতিটি কবিতাই বাংলা কাব্যে নতুন বাঁক সৃষ্টি করেছিল।

শুধু কবিতাতেই নয়, গান রচনায় নজরুল অসাধারণ প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছেন। তিনি প্রায় তিন হাজার গান রচনা ও সুর করেছেন। নিজেকে সম্পৃক্ত করেছেন ধ্রুপদি ধারার সঙ্গে। রাগনির্ভর গানকে ভেঙেচুরে সাধারণের কাছে সহজবোধ্য ও শ্রুতিমধুর করেছেন। এক রাগের সঙ্গে অন্য রাগের মিলন ঘটিয়ে সংগীতে এক নতুন ধারার সৃষ্টি করেছেন।

ছোটগল্প, উপন্যাস, গান, নাটক লিখলেও মূলত কবি হিসেবেই তিনি বেশি পরিচিত। আজীবন বিদ্রোহী দৃষ্টিভঙ্গি আর অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার কণ্ঠের কারণে তিনি ভূষিত হন ‘বিদ্রোহী কবি’ হিসেবে।

তিনি তার কবিতার পঙক্তিমালায় নিপীড়িত মানুষের কথা তুলে ধরেছেন। অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে সর্বদাই সোচ্চার ছিলেন নজরুল। মানবতার জয়গানে তিনি ছিলেন উচ্চকণ্ঠ। লিখেছেন, ‘গাহি সাম্যের গান—/ মানুষের চেয়ে বড় কিছু নাই, নহে কিছু মহীয়ান্...’।

বালাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরই ১৯৭২ সালের ২৪শে মে স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি, তৎকালীন রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের উদ্যোগে ভারত সরকারের অনুমতি নিয়ে কবি নজরুলকে সপরিবারে বাংলাদেশে নিয়ে আসা হয়। বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতিতে অবদানের জন্য ১৯৭৪ সালের ৯ই ডিসেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কাজী নজরুলকে ডিলিট উপাধিতে ভূষিত করে।

কবি কাজী নজরুল ইসলাম তার জীবনে মৃত্যু সম্পর্কে অনেক গভীর ও রহস্যময় ধারণা পোষণ করতেন। যা তার কবিতা ও গানে প্রতিফলিত হয়েছে। জীবন ও মৃত্যুর এই ভাবনা তার লেখায় এক বিশেষ মাত্রা যোগ করেছে।

কবি বলেছেন, ‘জীবনে যাকে চাও তাকে আজ ঘুমাতে দাও। তার সমাধি পরে ফুল দিতে এসে তাকে জাগিও না। অনাদরে যে ফুল ঝরে গেছে তাকে নয়নের জলে বাঁচানোর চেষ্টা কোরো না। জীবনের সকল সাধ-আশা সমাধির মাটিতে মিশে গেছে।’

কাজী নজরুল ইসলাম

সুখবর এর নিউজ পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

খবরটি শেয়ার করুন