আনন্দ মাহিন্দ্রা। ছবি: সংগৃহীত
ভারতীয় শিল্পপতি আনন্দ মাহিন্দ্রা সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গণেশ রাখ নামের এক চিকিৎসকের অসাধারণ সহমর্মিতা ও মানবিকতার প্রশংসা করেছেন। ডা. গণেশ এক দশকের বেশি সময় ধরে তার হাসপাতালে মেয়েশিশুর জন্ম হলে শিশুটির পরিবারের কাছ থেকে কোনো খরচ নেন না।
গণেশ রাখের হাসপাতালে এখন পর্যন্ত বিনা খরচে এক হাজারের বেশি মেয়েশিশুর জন্ম হয়েছে। চিকিৎসক গণেশ রাখ ভারতের পুনের বাসিন্দা, তার হাসপাতালটিও মহারাষ্ট্র রাজ্যের এই শহরে। খবর এনডিটিভির।
সম্প্রতি গণেশ রাখকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি পোস্ট দিয়েছেন প্রশান্ত নায়ার নামের একজন আইএএস কর্মকর্তা।
প্রশান্ত নায়ার তার পোস্টে লেখেন, সন্তান প্রসবের জন্য এক দিনমজুর তার স্ত্রীকে গণেশ রাখের হাসপাতালে ভর্তি করেছিলেন। যদি অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন পড়ে তবে কীভাবে হাসপাতালের খরচ জোগাবেন, তা নিয়ে ওই দিনমজুর উদ্বিগ্ন ছিলেন। অর্থ জোগাড় করতে তাকে তার বাড়ি বন্ধক রাখতে হয় কি না, সেটা নিয়ে তিনি দুশ্চিন্তায় ছিলেন।
সন্তান জন্মের পর উদ্বিগ্ন বাবা চিকিৎসকের কাছে সন্তানের লিঙ্গ জানতে চান। উত্তরে গণেশ রাখ বলেন, ‘আপনার ঘরে একজন দেবদূত এসেছেন।’
হাসপাতালের খরচ কত দিতে হবে এ প্রশ্ন করতে দ্বিধায় ভোগা ব্যক্তিটির মুখের দিকে তাকিয়ে গণেশ রাখ আরও বলেন, ‘যখন কোনো দেবদূতের জন্ম হয়, আমরা কোনো খরচ রাখি না।’ ডাক্তারের মুখে এ কথা শুনে ওই দিনমজুর আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। তিনি গণেশ রাখের পায়ে পড়ে তাকে ‘দেবতা’ বলে সম্বোধন করেন।
গণেশ রাখ ২০০৭ সালে তার হাসপাতাল খোলেন। তারপর থেকে এক দশকের বেশি সময় ধরে সেখানে বিনা খরচে এক হাজারের বেশি মেয়েশিশুর জন্ম হয়েছে। মেয়েশিশুদের রক্ষা করতেই তিনি এই উদ্যোগ নিয়েছেন।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে ২৪শে আগস্ট দেওয়া এক পোস্টে আনন্দ মাহিন্দ্রা লেখেন, ‘ঘরে দেবদূত এলে কেমন অনুভূতি হয়, দুই মেয়ের বাবা হিসেবে দুবার আমি সেই অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে গেছি...তবে এই চিকিৎসকও একজন দেবদূত। দয়া ও মহানুভবতার দেবদূত।’
আইএএস কর্মকর্তা প্রশান্ত নায়ারের পোস্ট শেয়ার দিয়ে আনন্দ মাহিন্দ্রা আরও লেখেন, ‘এই পোস্টটি আমাকে মনে করিয়ে দিয়েছে, একটি নতুন সপ্তাহ শুরু করার সবচেয়ে ভালো উপায় হলো নিজেকে একটি প্রশ্ন করা। প্রশ্নটি হচ্ছে, নিজের লক্ষ্য ও কাজ দিয়ে কীভাবে আপনি আপনার সম্প্রদায়ের মধ্যে ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারেন।’
এর আগে বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে গণেশ রাখ বলেছিলেন, যেদিন মানুষ মেয়েশিশুর জন্ম উদ্যাপন শুরু করবে, সেদিন তিনি তার ফি নিতে শুরু করবেন।
গণেশ রাখের এই প্রচেষ্টা অনেককে গভীরভাবে ছুঁয়ে গেছে। মেয়েশিশুদের নিয়ে ভারতীয় সমাজের প্রথাগত মানসিকতার বিরুদ্ধে এটি সূক্ষ্ম কিন্তু একটি শক্তিশালী চ্যালেঞ্জ। ভারতে এখনো মেয়েদের পরিবারের বোঝা মনে করা হয়।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কেউ কেউ গণেশ রাখের এই নীরব কিন্তু শক্তিশালী কর্মকাণ্ডের জন্য সরকারিভাবে স্বীকৃতি প্রদানের দাবি জানিয়েছেন।
আবার কেউ কেউ এই চিকিৎসকের দয়া ও মানবিক কর্মকাণ্ডকে সত্যিকারের সাহসিকতার পরিচায়ক হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
আনন্দ মাহিন্দ্রার পোস্টের নিচে মন্তব্যের ঘরে একজন লেখেন, ‘আমাদের পৃথিবীকে আরও সুন্দর করতে ঈশ্বর তাকে পাঠিয়েছেন।’ আরেকজন লেখেন, ‘দারুণ কাজ। কিন্তু কেন সমাজে এখনো ছেলেসন্তানের প্রতি এত প্রবল আকাঙ্ক্ষা?’
জে.এস/
খবরটি শেয়ার করুন