সোমবার, ৮ই জুলাই ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
২৩শে আষাঢ় ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নতুন সরকারের মুখ্য লক্ষ্যই হওয়া উচিত পণ্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ

উপ-সম্পাদকীয়

🕒 প্রকাশ: ০৭:৪৮ অপরাহ্ন, ১৩ই ফেব্রুয়ারি ২০২৪

#

বাংলাদেশে নতুন সরকার গঠিত হয়েছে। দেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ টানা চতুর্থবারের মতো সরকার গঠন করেছে। নতুন এই সরকারের ওপর দেশের মানুষের আগ্রহ রয়েছে। এমন একটি সময় সরকার গঠন করা হয়েছে, যখন দেশে দ্রব্যমূল্য অত্যধিক। অবশ্য বিশ্ববাজারে কিছুটা সংকট রয়েছে। যার দরুণ, বাংলাদেশেও এর প্রভাব পড়েছে। সে কারণে মানুষের প্রত্যাশা রয়েছে, নতুন সরকার নিত্যপণ্যের দাম ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে নিয়ে আসবে। কিন্তু সরকারের মেয়াদ এক মাস হয়ে গেছে, পণ্যের দাম কমেনি। কাঙ্ক্ষিত পদক্ষেপও লক্ষ করা যাচ্ছে না। 

এদিকে সরকারপ্রধান বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা বারবার বলছেন, দ্রব্যমূল্য কমাতে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে, বাস্তবায়ন করতে হবে। পণ্য পরিবহণ সহজ করতে হবে। পণ্যের আনা-নেওয়ায় চাঁদাবাজি বন্ধ করতে হবে। অথচ এই নির্দেশবাণীর ফলায়ন দেখা যাচ্ছে না। এটা করবে কারা- আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। জনগণ প্রশ্ন তুলছে। এর জবাব দিতে হবে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে। সরকার যথেষ্ট সুযোগ-সুবিধা দিয়ে থাকে বিভিন্ন বাহিনীর সদস্যদের। গাড়ি-বাড়ি, পাইক-পেয়াদা, ভৃত্য-চাপরাশি, মালি-চালক দিয়ে আইন প্রয়োগকারী বাহিনীর একজন বড়কর্তাকে পুষতে হয়। বেতন-ভাতা উচ্চমানের। এতে সরকারের প্রচুর খরচা হচ্ছে, জনগণ তা মেটাচ্ছে। তাদের আর অভাব নেই। বাড়তি ইনকামের দরকার নেই। তারা একটু সচেতন দেশপ্রেমিক হলেই পণ্যের দর কমিয়ে আনা সম্ভব। তাদের অন্তরে দেশপ্রেমের বীজ বুনতে হবে এখনই।

এই মুহূর্তে সরকারের উচিৎ রেশনিং পদ্ধতি অবলম্বন করা। ট্রাকে ট্রাকে ব্যাপক আকারে পণ্য বিক্রয় করা যেতে পারে। পাশাপাশি সারাদেশে স্থায়ীভাবে দোকান বা ডিলার নির্ধারণ করতে হবে। তাদের মাধ্যমে পণ্য বিক্রয় করতে হবে। ইতোমধ্যে রেশনিং কায়দা (ভিজিএফ কার্ড) স্বল্পমাত্রায় চালু আছে। এটাকে ব্যাপক মাত্রায় নিতে হবে। শহরে শহরে-গ্রামে গ্রামে ডিলারের মাধ্যমে পণ্য বিতরণ বা বিক্রয় করতে হবে।

শুধু কি সরকারি যন্ত্র ব্যবহার করে পণ্যমূল্য কমানো সম্ভব? উত্তর- না। তাহলে করণীয়, রাজার নীতি যারা বহন করে; তাদের এগিয়ে আসতে হবে। রাজনীতিবিদরা সচেতন না হলে দ্রব্যের মূল্য কমানো যাবে না। তারা সড়ক-মহাসড়কে চাঁদাবাজি রুখতে সক্রিয় হবেন। যেসব বিপণিবিতান বা বাজার রয়েছে, সেখানে নিয়মিত মনিটরিং করবেন। নেতাকর্মীরা সম্মিলিতভাবে দ্রব্যমূল্য কমাতে পারবেন। এমনকি আওয়ামী লীগের যেসব সহযোগী সংগঠন রয়েছে, স্বেচ্ছাসেবক লীগ; তারা এই  মুহূর্তে পণ্য কেনাবেচায় সহায়ক হবে। কিছুদিন তারা করেছিল। প্রান্তিক কৃষক লাভের ভাগ সবর্দা কম পায়। উচ্চ মুনাফার মানসিকতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে বেনিয়া বণিক শ্রেণিকে। তুলনামূলকভাবে যাতে প্রান্তিক উৎপাদনকারী বা চাষী লাভের পরিমাণ বেশি পায়, সেদিকে সরকারকে নজর দিতে হবে। তেমনি পুঁজিপতি বণিকরা যেন অতিমুনাফা না করতে পারে, সেদিকেও নজরদারি করতে হবে। এছাড়াও সকলকে নাগরিক হিসেবে সচেতন হতে হবে। অতিমুনাফার চিন্তা মাথা থেকে ঝেরে ফেলতে হবে।

দেশের ভূমিতে যথেষ্ট পরিমাণ ফসল ফলছে, শস্য উৎপাদন হচ্ছে। এবার শীতকালে প্রচুর ফসল ফলেছে, বিশেষ করে শাকসবজি। তবুও বড় বড় শহরগুলোতে শাকসবজির দাম কমেনি। এর একটিই কারণ অতিমুনাফার প্রবণতা। চাঁদাবাজি নয়। চাঁদাবাজি কিছুটা দায়ী। ব্যবসায়ীর খোঁড়া যুক্তি- পণ্য পরিবহণ উৎপাদন খরচ বেড়েছে। এটা সর্বাংশে ঠিক নয়। পণ্যের উৎপাদন, মোড়কজাতকরণ, বাজারজাতকরণ, বিপনন বিতরণের সঙ্গে যারাই জড়িত থাকুক না কেন; যদি দাম কমানোর ইচ্ছে থাকে তাহলে কম দামেই পণ্য বিক্রয় করা যায়।

যেমন ধরুন, সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন। তার ইচ্ছে ছিল মানুষের মন জয় করা, করতে পেরেছেন। ভোটে জয়ী হয়ে তিনি তার ভোটারের কাছে ফিরে গেছেন। তাদের মনের বাসনা শুনছেন, সেইরূপ কাজ করে দিচ্ছেন। এতে মানুষের আস্থা অর্জন করছেন সুমন।

এভাবেই আওয়ামী লীগের প্রতিটি নেতাকর্মীকে মানুষের কাছে যেতে হবে। তাদের কথা শুনতে হবে। কাঙ্ক্ষিত কাজ করে দিতে হবে। মন জয় করতে হবে। তা না হলে জনপ্রতিনিধি কিভাবে হওয়া যাবে? টানা চারবার ক্ষমতায় আওয়ামী লীগ। এই সংগঠনের কাছে আকাশচুম্বি প্রত্যাশা মানুষের। সেটা প্রত্যাশিত। এই প্রত্যাশা অবশ্যই আওয়ামী লীগকে পূরণ করতে হবে। এর জন্য প্রতিটি নেতাকর্মীকে দলীয় কার্যালয় থেকে বেরিয়ে মানুষের দোরগোড়ায় যেতে হবে। দ্বারে দ্বারে ঘুরতে হবে। সোফাসেটে বসে থাকার সময় নেই। বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ চায়, নেতারা তাদের কাছে আসুক। তারা সাধারণ মানুষের সুখ-দুঃখের কথা শুনুক। ভোটাররা অর্থ চায় না। ভোটাররা চায় এমপি-মন্ত্রী, নেতাকর্মীরা তাদের ভালোবাসুক। একটু খোঁজ-খবর রাখুক। এতেই মানুষের হৃদয়ে স্থান করে নিতে পারবেন নেতাকর্মীরা।

বুঝতে হবে- দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী জয়ী হয়েছেন ৬২ জন। তারা স্থানীয় মানুষের সাথে কানেক্টেড ছিলেন, এজন্য জয়লাভ করেছেন। এমপিরা ছাড়াও সারাদেশে চার হাজার ৫৭১ জন ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান, ৪৯২ জন উপজেলা চেয়ারম্যান, ৬১ জন জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, ১২ জন সিটি মেয়র তিন শতাধিক পৌর মেয়র রয়েছেন। কয়েক হাজার কাউন্সিলর সদস্য রয়েছেন। এছাড়া হাজার হাজার সংরক্ষিত কাউন্সিলর সদস্য আছেন। তারা দায়িত্ব এড়াতে পারেন না। 

যতবারই জাতীয় এবং স্থানীয় নির্বাচন হয়, তখনই ভোটাররা অভিযোগ করেন, একবার জয়লাভ করতে পারলেই এমপি-মিনিস্টার, চেয়ারম্যান-মেম্বাররা আর স্থানীয় লোকজনের খোঁজ-খবর রাখেন না। এই অভিযোগ সবচেয়ে মারাত্মক একটি রাজনৈতিক দলের জন্য। দলের নেতাকর্মীরা যদি স্থানীয় পর্যায়ে যোগাযোগ বৃদ্ধি না করেন, তাহলে দলের সমর্থক বাড়বে না। সরকারি কার্যক্রমও নাগরিকের দরজায় পৌঁছানো সম্ভব নয়। ধরে নিচ্ছি, সরকার অনেক উন্নয়ন করেছে এবং করছে। সেই উন্নয়নের কথা তো ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরাই আওড়াবে বেশি, সেটার সুফল পৌঁছে দেবে মানুষের কাছে।

দলীয় সভা-সমাবেশ পরিহার করা যেতে পারে। দলীয় সভা-সমাবেশ না করে - জনের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দল গঠন করতে হবে। প্রতিদিন দলগুলো মানুষের দ্বারে দ্বারে যাবে। দলীয় সভা-সমাবেশ আয়োজন করলে ব্যয়ের বিষয় আছে। ব্যয় না করে সেই টাকা দিয়ে একজন গরীব লোককে সহায়তা করতে হবে। শিক্ষার্থীকে আর্থিক সহায়তা দিতে হবে। দলের নেতারা শুধু হুকুম দিয়ে বসে থাকলে চলবে না, তারা দলে বিভক্ত হয়ে অবহেলিত মানুষের কাছে যাবেন। বিষয়টি আওয়ামী লীগ পরীক্ষামূলক হিসেবে আগামী দুই বছর সারাদেশে পরিচালনা করুক। দেখা যাক, তার কী ফল আসে। সাড়া জাগে কিনা মানুষের মনে। শুধু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে, গণ বা সংবাদমাধ্যমে, সভা-সমাবেশে নিজ দলের গুণকীর্তন না করে এবার সাধারণ মানুষের সাথে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপন করুন নেতাকর্মীরা।

চলতি বছর ১১ জানুয়ারি নতুন সরকার গঠিত হয়। ওই দিন আওয়ামী লীগের এমপিরা মন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন। দপ্তর বন্টনও হয় ওই দিনে। এরপর এক মাস অতিবাহিত। কিন্তু সংবাদমাধ্যম বলছে, দেশ মানুষের কল্যাণে তেমন অগ্রগতি দেখাতে পারেনি নতুন মন্ত্রিপরিষদ। ১২ ফেব্রুয়ারি যুগান্তর বলছে,  ‘গত এক মাসে ওষুধ, চালসহ নিত্যপণ্যের দামে লাগাম পড়েনি তারা আরো বলছে, শুধু চারটি মন্ত্রণালয় সুনির্দিষ্ট কর্মপন্থা নিয়ে অগ্রসর হচ্ছে। পরিবেশ, বন জলবায়ু পরিবর্তন; সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়, গৃহায়ন গণপূর্ত মন্ত্রণালয় এবং ডাক, টেলিযোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়। এই চারটি মন্ত্রক যদি সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে পারে, তাহলে সরকারের অন্যান্য মন্ত্রণালয় সেভাবে অগ্রসর হতে উৎসাহ বোধ করবে। সরকার ৩৯টি মন্ত্রণালয় নিয়ে গঠিত। সময়ের আলো পত্রিকা১৪ টাকার মরফিন ২০০ টাকায় বিক্রিশিরোনাম করেছে। যুগান্তর সময়ের আলো চাল-ওষুধের ওপর জোর দিয়েছে। এটা নিয়ে সরকারকে ভাবতে হবে, পরিকল্পনা নিয়ে বাস্তবায়ন করতে হবে।

অজিত কুমার মহলদার, প্রাক্তন নির্বাহী সদস্য, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন।

আই. কে. জে/ 


 

 

     

পণ্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ

খবরটি শেয়ার করুন