শুক্রবার, ৫ই জুলাই ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
২১শে আষাঢ় ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

দুষ্টচক্রের নজর থেকে বাঁচাতে হবে পুঁজিবাজারকে

সম্পাদকীয়

🕒 প্রকাশ: ০২:৪১ অপরাহ্ন, ১লা এপ্রিল ২০২৪

#

ছবি: সংগৃহীত

সম্প্রতি শেয়ারবাজারের সবচেয়ে স্পর্শকাতর এবং অত্যন্ত গোপনীয় তথ্যভান্ডারে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সার্ভিল্যান্সে (নজরদারি সফটওয়্যার) অবৈধ সংযোগের তথ্য মিলেছে। খবরে প্রকাশ, বিএসইসির ভেতরের একটি চক্র টানা ৭ বছর ধরে এ কাজ করে আসছে। নিয়ম লঙ্ঘন করে সার্ভিল্যান্স এরিয়ার বাইরে সফটওয়্যারের সংযোগ স্থাপন করে কাজ করছে তারা। এর সঙ্গে প্রতিষ্ঠানটির পরিচালকসহ কয়েকজন কর্মকর্তার একটি চক্র জড়িত আছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ফলে দেশের পুঁজিবাজারে যে দুষ্টচক্রের নজর পড়েছে, নানা কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে ক্রমেই তা প্রকাশ্য হচ্ছে। 

জানা গেছে, গত বছরের ৪ সেপ্টেম্বর বিষয়টি প্রথম কমিশনের নজরে আসে। তৎকালীন সার্ভিল্যান্সের দায়িত্বে থাকা কমিশনার ওইদিনই তার স্বাক্ষরিত একটি রিপোর্ট কমিশনে জমা দেন। সেই রিপোর্টে নির্ধারিত রুমের বাইরে অত্যন্ত সংবেদনশীল ও গোপনীয় এ সার্ভিল্যান্স সফটওয়্যার যে বিএসইসির পরিচালকের কক্ষে স্থাপিত থাকা উদ্বেগজনক, তা স্পষ্ট করা হয়েছিল। তবে বিষয়টি কমিশনের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নজরে দিলেও রহস্যজনক কারণে তারা নীরব রয়েছে। ব্যবস্থা নেওয়া দূরের কথা, এখনো সংযোগই বন্ধ হয়নি।

এ ধরনের ঘটনা উদ্বেগজনক। শেয়ারবাজারের সবচেয়ে স্পর্শকাতর সার্ভিল্যান্স সফটওয়্যার বাজারের লেনদেন, নজরদারি এবং গোয়েন্দা কার্যক্রম পরিচালনার গোপন তথ্যভান্ডার। এখানে দৈনন্দিন লেনদেন, কারা কীভাবে লেনদেন করছে, কে কোন শেয়ার কিনছে-সে তথ্য থাকে। দেশে চারটি প্রতিষ্ঠানের সার্ভিল্যান্স রয়েছে। এগুলো হলো-বিএসইসি, ডিএসই, সিএসই এবং ইলেকট্রনিক পদ্ধতিতে শেয়ার সংরক্ষণকারী কোম্পানি সিডিবিএল। এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সফটওয়্যার বিএসইসির। এই সফটওয়্যারের মাধ্যমে লেনদেন মনিটরিং করা হয়। এছাড়া সার্ভিল্যান্সের মাধ্যমে গোয়েন্দা কার্যক্রম পরিচালনা করে বিএসইসি। ফলে এর সঙ্গে জড়িতদের অবশ্যই জিজ্ঞাসাবাদ করে শাস্তির আওতায় আনা দরকার। এছাড়া তথ্য পাচারের কারণে বড় অঙ্কের টাকা আয় হয়। এ অর্থ কোথায় ও কাদের কাছে যাচ্ছে, দেশে থাকছে, নাকি দেশের বাইরে চলে যাচ্ছে, সেটিও খতিয়ে দেখা দরকার।

কিছুদিন আগেই ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) তথ্যপ্রযুক্তিতে (আইটি) ঘটে গেছে স্মরণকালের সর্বোচ্চ বিপর্যয়। এর ফলে দেশের পুরো শেয়ারবাজার একদিনেই যেন অস্তিত্বহীন হয়ে পড়ে। নজিরবিহীন এ কাণ্ডে স্বাভাবিকভাবেই পুরো বাজারে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। বিষয়টি নিয়ে আলাদা দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করে বিএসইসি ও ডিএসই। ভুলে গেলে চলবে না, দেশের অর্থনীতিতে পুঁজিবাজারের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। দেশের সব মাপের শিল্পপ্রতিষ্ঠান এর তালিকাভুক্ত। শুধু তাই নয়, পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের অনেকেই তাদের কষ্টার্জিত অর্থ এখানে লগ্নি করেন।

স্টক এক্সচেঞ্জে লেনদেনের প্রভাব জাতীয় অর্থনীতিতেও পড়ে। এ কথা মাথায় রেখেই দেশের স্টক এক্সচেঞ্জগুলোর অবকাঠামো উন্নয়ন ও নিরাপত্তায় কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন। এর মধ্যে তথ্যপ্রযুক্তির দিকটিও রয়েছে। যারা তথ্যপ্রযুক্তির বিষয়টি দেখভাল করেন, তাদের দক্ষতা প্রদর্শনের পাশাপাশি সর্বোচ্চ সতর্কতা ও আন্তরিকতার পরিচয় দিতে হবে। এ ধরনের কর্মকাণ্ড শুধু পুঁজিবাজারে থাকা প্রতিষ্ঠান ও বিনিয়োগকারীদেরই উদ্বেগ ও ক্ষতির মধ্যে ফেলে না, এর বিরূপ প্রভাব সার্বিকভাবে দেশের অর্থনীতির ওপরও পড়ে। তাই যথাযথ তদন্তের মাধ্যমে ঘটনার প্রকৃত কারণ উদ্ঘাটন ও দায়ীদের বিরুদ্ধে কর্তৃপক্ষ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেবে, এটাই প্রত্যাশা।

আই. কে. জে/ 

পুঁজিবাজার

খবরটি শেয়ার করুন