রবিবার, ২২শে ডিসেম্বর ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
৮ই পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সর্বশেষ

*** মুম্বাইয়ে অরিজিতের কনসার্টের টিকিটের মূল্য লাখ টাকা *** তথ্য উপদেষ্টার সঙ্গে রাহাত ফতেহ আলী খানের সৌজন্য সাক্ষাৎ *** সাধারণ মানুষ সংস্কার বোঝে না, তারা বোঝে যেন ভোট ঠিকভাবে দিতে পারে : ফখরুল *** বাংলাদেশকে আরও ৪০ কোটি ডলার দেবে বিশ্বব্যাংক *** নিষিদ্ধ পলিথিনের বিরুদ্ধে যৌথ অভিযান চলবে : পরিবেশ উপদেষ্টা *** ‘মহাকালের পাতায় হাসান আরিফের কৃত্তি লেখা থাকবে’ *** দুদক চেয়ারম্যান নিজের সম্পদের হিসাব দিলেন *** ওয়েজ বোর্ড সিস্টেম বাতিল করে সাংবাদিকদের নূন্যতম বেতন চালু করা উচিত : শফিকুল আলম *** রেমিট্যান্সে সুখবর : ২১ দিনেই এলো ২০০ কোটি ডলার *** রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ আটকানো খুব কঠিন হয়ে পড়েছে : পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

পরিবেশ রক্ষায় বিকল্প হতে পারে ছাদ বাগান

উপ-সম্পাদকীয়

🕒 প্রকাশ: ০৩:৩২ অপরাহ্ন, ৫ই ডিসেম্বর ২০২৪

#

ছবি - সংগৃহীত

ছাদ-বাগান আগে মানুষ শখ করে করতেন। পরবর্তীতে কিছুটা অর্থনৈতিক লাভের আশায় অনেকে শুরু করেন। তবে ছাদ বাগান করে শহরের তাপমাত্রা কমিয়ে আনা সম্ভব। এমনটি হয়তো অনেক মানুষই ভেবেছিল। তবে অবাক করার বিষয় হলো, ছাদের বাগান বাইরের তাপমাত্রার চেয়ে ঘরের তাপমাত্রা প্রায় ১.৭৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস হ্রাস করতে পারে। একটি সবজির গাছ তিন মাসের জন্য তিনজনের অক্সিজেন সরবরাহ করতে পারে।

রাজধানী ঢাকাকে এখন ইট-পাথরের এক শহর বলা হয়। এখানে সতেজ নিঃশ্বাস নেয়া এক প্রকার অসম্ভব হয়ে উঠেছে। এক সমীক্ষায় বলা হয়েছে, ঢাকা শহরের প্রায় ৬০ শতাংশ জায়গায় কংক্রিটের কাঠামো রয়েছে, যা শহরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি করছে। অধিক জনসংখ্যা, অপরিকল্পিত নগরায়ন, যানবাহন, সেইসঙ্গে জলাধার ও গাছপালা কমে যাওয়ার কারণে ঢাকার পরিবেশ দূষণ বিশ্বের অন্যান্য বড় শহরের তুলনায় অনেক বেশি।

তিন দশক আগেও ঢাকায় ৩০ ভাগের বেশি গাছপালা ছিল। এমনকি ১০ বছর আগে এখানে ১৬-১৭ ভাগ গাছপালা ছিল। আর এখন এটা কমতে কমতে ৮ ভাগে নেমে এসেছে। এর কারণ হলো, জনসংখ্যা বাড়ার সাথে পাল্লা দিয়ে ভবন বাড়ছে, রাস্তা হচ্ছে। গাছ কেটে ফাঁকা করে দেয়া হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে আগামী এক দশকে গাছপালা ২-৩ শতাংশে নেমে আসতে পারে। প্রায় তিন দশকে রাজধানীতে গাছের হার ৩০ থেকে ৮ শতাংশে এসে ঠেকেছে। এতে প্রতি বছর বাড়ছে তাপমাত্রা। এই পরিস্থিতিতে ছাদবাগান পরিবেশ রক্ষায় অন্যতম ভরসা উঠতে পারে।

আবহাওয়া সংক্রান্ত তথ্য অনুযায়ী, ঢাকা শহরে গত পাঁচ বছরে গড় তাপমাত্রা ধারাবাহিকভাবে বেড়েছে। এই বছরে বেশ কয়েকবার তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়ে গেছে, যা ১৯৬৫ সালের পর সর্বোচ্চ হিসেবে রেকর্ড করা হয়েছে। এর অন্যতম প্রধান কারণ গাছপালার অভাব। রাজধানীতে গাছ বা সবুজ এলাকা শহরের আয়তনের ৮ শতাংশের কম। আদর্শ শহরে ২০ থেকে ২৫ শতাংশ থাকা প্রয়োজন।

ঢাকা শহরে প্রায় ৫০ লাখ পরিবার বাস করে। এসব পরিবার মোটামুটি পাঁচ লাখ ভবনে বসবাস করে। যদি গড়ে হিসাব করা হয়,পাঁচ লাখ ভবনের অধিকাংশ ছাদেই বাগান করার উপযোগিতা আছে। তবে বর্তমানে রাজধানীতে যত ছাদ আছে, তার মধ্যে প্রায় পাঁচ শতাংশের কম ছাদে বাগান রয়েছে। আর যেসব বাগান আছে, তাও পরিকল্পিতভাবে করা হয়নি।

ছাদবাগানের কথা উঠলে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) প্রয়াত মেয়র আনিসুল হকের উদ্যোগের কথা স্মরণ করতে হবে। তিনি ২০১৫ সালে ঘোষণা দেন, ছাদবাগান করলে হোল্ডিং ট্যাক্সে ছাড় দেয়া হবে। এ উদ্যোগের মাধ্যমে ডিএনসিসি এলাকায় ছাদবাগানকারীরা হোল্ডিং ট্যাক্সে ১০ শতাংশ মওকুফের সুবিধা পেতে শুরু করেন, যা এখনও বিদ্যমান। সিটি কর্পোরেশনের প্রচার প্রচারণার অভাবে বিষয়টি অনেকে জানেন না। এক্ষেত্রে সিটি কর্পোরেশনকে আরো তৎপর হয়ে জনগণকে বিষয়টি জানাতে হবে।

ছাদের জায়গাটুকুর সদ্ব্যবহার নিশ্চিত করে ছাদ কৃষির মাধ্যমে পরিবারের শাকসবজি ও ফলের চাহিদা মেটানো সম্ভব। তবে আশার কথা হলো, অনেকেই ব্যক্তিগত উদ্যোগে ছাদ বানান শুরু করেছেন। সবুজ প্রকৃতি দেখতে বাসার ছাদে গড়ে তুলেছেন বাগান। এসব বাগানে আম, সফেদা, জামরুল, কলা, পেঁপে, ড্রাগনসহ বিভিন্ন ফলের গাছ রয়েছে। এছাড়া অনেকে টাকটা সবজি খেতে বিভিন্ন ধরনের সবজির বাগান গড়ে তুলেছেন। অনেকে ফুলের বাগানও করছেন। অনেক প্রকৃতিপ্রেমী বাগানের পরিচর্যা নিজেরাই করে থাকেন।

ছাদ বাগান একদিকে যেমন ছাদের সৌন্দর্য বাড়িয়ে তোলে, তেমনি রক্ষা করে পরিবেশের ভারসাম্য। সরবরাহ করে বিশুদ্ধ অক্সিজেন। কমিয়ে আনে কার্বন ডাই-অক্সাইডের ক্ষতির পরিমাণ। ছাদে বাগান করলে ছাদের ক্ষতি হয়--এমন কুসংস্কার থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। সরকারকে ছাদ বাগানের উপকারিতা প্রচার করে জনসচেতনতা তৈরি করতে হবে। মনে রাখতে হবে, ঢাকাকে বাসযোগ্য করতে হলে ছাদ বাগানের বিকল্প নেই।

আই.কে.জে/

ছাদ বাগান

সুখবর এর নিউজ পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

খবরটি শেয়ার করুন