ছবি: সংগৃহীত
খুলনা-১ আসনে জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী পরিবর্তন করা হয়েছে। আসনটিতে নতুন প্রার্থী হিসেবে জামায়াতের ডুমুরিয়া উপজেলা হিন্দু কমিটির সভাপতি কৃষ্ণ নন্দীর নাম ঘোষণা করেছে দলটি।
বটিয়াঘাটা ও দাকোপ উপজেলা নিয়ে গঠিত খুলনা-১ আসনে এর আগে বটিয়াঘাটা উপজেলা জামায়াতের আমির শেখ আবু ইউসুফকে প্রার্থী ঘোষণা করছিল জামায়াত।
বিষয়টি নিশ্চিত করে জামায়াতের ডুমুরিয়া উপজেলা হিন্দু কমিটির সভাপতি কৃষ্ণ নন্দী স্থানীয় সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমাকে জামায়াতের পক্ষ থেকে চূড়ান্ত প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে। শিগগির প্রচারণা শুরু করব।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি আগামী ৫ই ডিসেম্বর বেলা সাড়ে তিনটায় বটিয়াঘাটা থেকে প্রচারণা শুরু করব। আমিরে জামায়াত আগের ঘোষিত প্রার্থী মাওলানা আবু ইউসুফ ভাই ও আমি—এই দুজনকে বুকে বুক মিলিয়ে দিয়ে গেছেন।’
ব্যবসায়ী কৃষ্ণ নন্দীর গ্রামের বাড়ি ডুমুরিয়া উপজেলার চুকনগরে। ডুমুরিয়া ও ফুলতলা উপজেলা নিয়ে গঠিত খুলনা-৫ আসনে জামায়াতের প্রার্থী দলের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার। এক বছর ধরে ডুমুরিয়া ও ফুলতলায় তার বিভিন্ন রাজনৈতিক সমাবেশে কৃষ্ণ নন্দীকে দেখা গেছে। তার নেতৃত্বে প্রতিটি সমাবেশেই সনাতন ধর্মাবলম্বী নারী-পুরুষের সরব উপস্থিতি ছিল।
জানতে চাইলে জামায়াতের কেন্দ্রীয় মজলিশে শুরা সদস্য ও খুলনা জেলার সেক্রেটারি মুন্সি মিজানুর রহমান আজ বুধবার (৩রা ডিসেম্বর) রাতে বলেন, ‘কৃষ্ণ নন্দী এখন খুলনা-১ আসনে জামায়াতের প্রার্থী। কেন্দ্রীয় কমিটিতে সিদ্ধান্ত হয়ে পরবর্তী সময়ে বিষয়টি আমাদের জানানো হয়েছে। আজ বুধবার আমরা স্থানীয় পর্যায়ের নেতাদের বৈঠকে আলোচনা করে সেটা বাস্তবায়ন করেছি। এই বিষয়ে আমরা দুই দিন আগে চিঠি পেয়েছিলাম।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের দলের মধ্যে কোনো দ্বন্দ্ব থাকার সুযোগ নেই। যাকে মনোনয়ন দেওয়া হবে, দল তাকে মেনে নেয়। এটা আমাদের দলের শৃঙ্খলা। আগে যাকে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছিল, তিনি এটা মেনে নিয়েছেন। তিনিই নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্ব পালন করবেন।’
১৯৭৩ সালে প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এখনকার খুলনা-১ আসনটি খুলনা-৫ নামে ছিল। আসনটিতে বেশির ভাগ সময় সংখ্যালঘু প্রার্থীরা জয়লাভ করেছেন। এই আসনে প্রথম এমপি হন কুবের চন্দ্র বিশ্বাস। দ্বিতীয় সংসদ নির্বাচনে জয় পান প্রফুল্ল কুমার শীল। ১৯৯৬ সালের ১৫ই ফেব্রুয়ারির একতরফা নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে জেতেন প্রফুল্ল কুমার মণ্ডল। ১৯৯৬ সালে জয়ী হন শেখ হাসিনা। পরে তিনি আসনটি ছেড়ে দিলে উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পান শেখ হারুনুর রশিদ।
কিন্তু সংখ্যালঘু প্রার্থী পঞ্চানন বিশ্বাসের কাছে হেরে যান। যদিও পঞ্চানন বিশ্বাস আওয়ামী লীগের এমপি হিসেবে শপথ নেন। ২০০১ সালে আবার জয়ী হন পঞ্চানন বিশ্বাস। ২০০৮ সালের নির্বাচনে জয়ী জন আওয়ামী লীগের ননী গোপাল মণ্ডল। ২০১৪ ও ২০১৮ সালে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে আবার এমপি হন পঞ্চানন বিশ্বাস। ২০২৪ সালে জয়ী হন ননী গোপাল মণ্ডল।
খুলনার ছয়টি আসনের মধ্যে পাঁচটিতে প্রার্থী ঘোষণা করলেও খুলনা-১ আসনে এখনো প্রার্থী ঘোষণা করেনি বিএনপি। এখানে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসেবে জেলার সাবেক আহ্বায়ক আমীর এজাজ খান প্রচারণা চালাচ্ছেন। তিনি ২০০১, ২০০৮ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনে এখানে দলীয় প্রার্থী ছিলেন।
পাশাপাশি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সাবেক নেতা জিয়াউর রহমান পাপুল ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্রনেতা পার্থ দেব মণ্ডল গণসংযোগ করছেন। বাম গণতান্ত্রিক জোটের পক্ষে দাকোপ উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান কিশোর কুমার রায়ও আলোচনায় আছেন।
দলীয় ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ‘আওয়ামী লীগের ঘাঁটি’ হিসেবে পরিচিত খুলনা-১ আসনে ১৯৯১ সালের পর ১৯৯৬ সালের ১৫ই ফেব্রুয়ারির একতরফা নির্বাচন ছাড়া বিএনপি কখনো জেতেনি। একসময় বাম দলের প্রভাব থাকলেও জামায়াতের অবস্থান সব সময় দুর্বল ছিল। তবে সাম্প্রতিক সময়ে জামায়াতের সাংগঠনিক কার্যক্রম কিছুটা বেড়েছে।
খবরটি শেয়ার করুন