ছবি- সংগৃহীত
ঘটনাবহুল ২০২৪ শেষ করে নতুন বছরে পা দিয়েছে বাংলাদেশ। বিগত বছরে যেমন নানামুখী চ্যালেঞ্জ আর অভূতপূর্ব ঘটনাবলীর মধ্য দিয়ে গেছে বাংলাদেশ - নতুন বছরেও রাজনীতি, নির্বাচন আর অর্থনীতিতে চ্যালেঞ্জ থাকবে। চলতি বছরেই ঘোষণা হতে পারে পরবর্তী নির্বাচনের সম্ভাব্য সময়, যা সরাসরি প্রভাব রাখবে রাজনৈতিক পরিস্থিতি, অর্থনীতি আর কূটনৈতিক সম্পর্কে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে যে মতভেদ দেখা যাচ্ছে ২০২৫ এ তা আরও ঘনীভূত হতে পারে। বিশেষ করে নির্বাচন এগিয়ে আসার সাথে সাথে এই মতভেদ রূপ নিতে পারে সংঘাতেও।
এছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার দল আওয়ামী লীগের নির্বাচনে অংশ নেয়া-না নেয়াও একটি বড় ফ্যাক্টর হয়ে উঠতে পারে। একইসঙ্গে শেখ হাসিনার ভারতে অবস্থানের প্রভাব পড়তে পারে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কেও।
অন্যদিকে, বাংলাদেশের সীমান্তঘেঁষা মিয়ানমারের দুটি রাজ্য আরাকান আর্মির দখলে যাওয়ায় দেশটির সঙ্গে বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের রূপ কী হবে, তা নিয়েও বেশ জটিলতায় পড়তে হতে পারে বাংলাদেশকে।
এছাড়াও পাঁচই অগাস্টের পর দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি, প্রশাসনে বিশৃঙ্খলা এবং মব সংস্কৃতির মতো বিষয়গুলো যে প্রকট আকার ধারণ করেছে, সেটাকে শৃঙ্খলায় ফেরানোও দেশের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হবে।
তবে সবচেয়ে বড় যে চ্যালেঞ্জটির মুখোমুখি বাংলাদেশকে হতে হবে, তা হলো অর্থনীতি। মূল্যস্ফীতি, টাকার বিপরীতে বাড়তে থাকা ডলারের দাম এবং আর্থিক খাতে যে সংকট ২০২৪ সালে দেখা গেছে, তা পরবর্তী বছরেও বাংলাদেশকে বেশ ভোগাবে বলেই মত বিশ্লেষকদের।
নির্বাচন ও রাজনীতি
নতুন বছর অর্থাৎ ২০২৫ হতে পারে বাংলাদেশের জন্য নির্বাচনের বছর। ফলে নতুন বছরে বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হতে পারে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখা।
গণঅভ্যুত্থানের পর নির্বাচন ও সংস্কার ইস্যুতে ছাত্রনেতাদের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর নানা ধরনের মতবিভেদ দেখা গেছে।
বিভিন্ন পক্ষের মধ্যে এই মতভেদ যদি আরও প্রকট হয় তবে সেটা সংকটের জন্ম দিতে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করছেন বিশ্লেষকরা।
'জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্র' দেয়া নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে শুরু হওয়া আলোচনা প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সাব্বির আহমেদ বলেন, বিপ্লব বা গণঅভ্যুত্থানের পার্টিসিপেন্ট শুধু ছাত্ররা না, সেখানে বিএনপি-জামায়াত আছে।
"তারা (বিএনপি ও জামায়াত) সংবিধানের অনুসারী, বিপ্লবের না। সুতরাং এখানে ডিফারেন্সেস অব অপিনিয়ন (মতভেদ) থাকছে। আর নির্বাচনের সময় যত ঘনিয়ে আসবে, এই দুইয়ের মধ্যে একটা সাংঘর্ষিক অবস্থান তৈরি হতে পারে", বলেন এই রাজনৈতিক বিশ্লেষক।
তাছাড়া রাজনৈতিক দলগুলো আগের মতোই পরিবারতন্ত্রের মধ্যে আটকে থাকবে, নাকি নিজেদের মধ্যে গণতন্ত্রের চর্চা করবে, সে বিষয়টিও রাজনীতিতে চ্যালেঞ্জ হয়ে আসতে পারে।
এছাড়াও বাংলাদেশের জন্য ২০২৫'এর একটি গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর হতে পারে আওয়ামী লীগ। নির্বাচনে দলটির অংশগ্রহণ থাকা বা না থাকা নিয়ে জটিল পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে।
অধ্যাপক আহমেদের মতে, বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জিং বিষয় হবে অংশগ্রহণমূলক স্বাধীন ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজন করা।
"যদি আপনি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের কথা বলেন তাহলে আপনাকে ভাবতে হবে আওয়ামী লীগ নির্বাচনে আসতে পারবে কিনা। এই প্রশ্নের একটা সমাধান বের করতে হবে এবং এই সমাধান খানিকটা চ্যালেঞ্জিং", বলেন অধ্যাপক সাব্বির আহমেদ।
কেবল দেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটেই না, দেশের বাইরের কূটনৈতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রেও চ্যালেঞ্জিং ফ্যাক্টর হয়ে উঠতে পারে আওয়ামী লীগ। বিশেষ করে প্রতিবেশী দেশ ভারতে ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অবস্থানের কারণে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কেও পড়তে পারে বড় প্রভাব।
এ নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক আমেনা মহসিন বলেন, "শেখ হাসিনাতো ওখানে বসে নেই। ওখানে তিনি নানা ধরনের রাজনীতির সঙ্গে ইনভলভড আছেন, তাই না? যারা চলে গেছে, তারা তো চুপ থাকবে না। আর দেশের বাইরেও তাদের মিত্ররা আছে।"
বিশেষ করে বাংলাদেশের সংখ্যালঘু ইস্যু এবং রাজনৈতিক পরিস্থিতি ভারত "নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করবে এবং সেখানে টানাপোড়েন থাকবে" বলেও মনে করেন তিনি।
সূত্র: বিবিসি বাংলা
আই.কে.জে/
খবরটি শেয়ার করুন