ছবি - সংগৃহীত
বাংলাদেশের বহু মেধাবী শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষার জন্য উন্নত দেশগুলোয় চলে যাচ্ছেন। কয়েক বছর লেখাপড়া করে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করে আর দেশে ফিরে আসেন না। সেখানে ভালো বেতনে চাকরি করেন। দেশের মেধাবী সন্তানরা প্রতিনিয়ত এভাবেই দেশ থেকে হারিয়ে যাচ্ছেন। আর মেধা পাচারের ফলে দেশ ক্রমেই মেধাশূন্য হয়ে যাচ্ছে।
শুধু উচ্চবিত্ত পরিবারের সন্তানরাই নয়, মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তানরাও বিদেশমুখী হচ্ছেন। মধ্যবিত্ত পরিবার তাদের সহায় সম্বল বিক্রি করেও শুধু ভালো শিক্ষা দিতে এবং ভালো ভবিষ্যতের জন্য সন্তানকে বিদেশে পাঠায়। আবার যারা নিম্নবিত্ত অথচ অসম্ভব মেধাবী তারাও স্কলারশিপ নিয়ে বিদেশে যাচ্ছেন। সব শ্রেণির মেধাবীরাই কোনো না কোনো উপায়ে একটি সুন্দর ভবিষ্যতের জন্য বিদেশে পাড়ি দিচ্ছে।
প্রতিবছর প্রচুর সংখ্যক শিক্ষার্থী নানা পরিস্থিতির কারণে বিদেশমুখী হচ্ছেন। মেধাবী শিক্ষার্থী যারা দেশে প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা ও পরিবেশ পান না, তারা উচ্চশিক্ষা গ্রহণে বিদেশে যাচ্ছেন। দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তির সুযোগ পেলেও সুষ্ঠু পরিবেশের কারণে আগ্রহী হচ্ছেন না। বেশির ভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় গবেষণার সুযোগ-সুবিধা নেই। স্নাতকোত্তর শেষে কোনো শিক্ষার্থী পিএইচডি করতে চাইলে মানসম্মত কোনো গবেষণা প্রতিষ্ঠান নেই। তখন তারা বিদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যাওয়ার চেষ্টা করেন। আর পিএইচডি করার পর ভালো প্রতিষ্ঠানে চাকরি পেয়ে দেশে ফিরে আসেন না।
যুক্তরাজ্যভিত্তিক শিক্ষা বিষয়ক সাময়িকী ‘টাইমস হায়ার এডুকেশন’ (টিএইচই) প্রতিবছর বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের র্যাংকিং প্রকাশ করে। এবছর তাদের প্রকাশিত প্রথম ৮০০ বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায় বাংলাদেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয় নেই। তালিকায় প্রতিবেশী ভারতের ২২টি ও পাকিস্তানের ৯টি বিশ্ববিদ্যালয় আছে। বাংলাদেশের একশ সত্তরটি বিশ্বদ্যিালয়ের মধ্যে একটিও তালিকায় স্থান পায়নি। এ থেকে আন্তর্জাতিক স্তরে আমাদের শিক্ষার মান অনুধাবন করা যায়। এটি নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের জন্য লজ্জার।
‘টাইমস হায়ার এডুকেশন’ সাময়িকী বিশ্ববিদ্যালয়ের মান নির্ধারণে যেসব বিষয় গুরুত্ব দেয় তারমধ্যে অন্যতম হলো বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণার পরিবেশ, গবেষণার মান, শিক্ষকদের মান, আন্তর্জাতিক দৃষ্টিভঙ্গি ও গ্রহণযোগ্যতা। এসব মানদণ্ডে বাংলাদেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয় স্থান করে নিতে পারেনি।
বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে গবেষণার সুযোগ-সুবিধা কাগজে-কলমে থাকলেও বাস্তবে যা আছে তা খুবই নগণ্য। উচ্চ শিক্ষালয়ে শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রেও প্রশ্ন আছে। প্রায়শই সম্পূর্ণ মেধার ভিত্তিতে না হয়ে দলীয় বিবেচনায় শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হয়। এভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষকরা ছাত্রদের শিক্ষাদানের চেয়ে রাজনৈতিক দলাদলিতে বেশি মনোযোগ দেন।
তরুণদের বিদেশমুখী হওয়ার আরও অনেক কারণ আছে। দেশে মানসম্মত কর্মসংস্থানের বড়ই অভাব। দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ শেষ করে তরুণরা একটি সরকারি চাকরির জন্য হন্যে হয়ে ছোটাছুটি করে। কারণ সরকারি চাকরির একটা নিশ্চয়তা আছে। কিন্তু সরকারি চাকরির ক্ষেত্র আবার সীমিত সংখ্যক। অন্যদিকে বেসরকারি চাকরিতে মেধা অনুযায়ী বেতন কম, চাকরির স্থায়িত্বেও অনিশ্চয়তা। ফলে তারা ছাত্রজীবন থেকেই বিদেশমুখী হয়। মেধাবী শিক্ষার্থীরা বিদেশে যাওয়ায় তাদের মেধার সুফল দেশ পায় না, পায় অন্য দেশ।
দেশকে এগিয়ে নিতে হলে মেধাশূন্যতা থেকে দেশকে বাঁচাতে হবে। এজন্য সরকারকে দীর্ঘমেয়াদী কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। দেশের শিক্ষাব্যবস্থাকে যুগোপযোগী, মানসম্মত করতে হবে। ভালো মানের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে। সুন্দর কর্মোপযোগী পরিবেশ তৈরি করতে হবে। তাহলেই কেবল মেধা পাচার রোধ হবে।
আই.কে.জে/