ছবি: সংগৃহীত
বিশ্বজুড়ে আজকাল পাখিদের আচরণে অদ্ভুত পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে। এই অস্বাভাবিকতা শুধু তাদের জন্য নয়, মানবজাতির ভবিষ্যতের জন্যও ভয়ংকর সংকেত বহন করছে বলে সতর্ক করছেন বিজ্ঞানীরা। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে পাখিদের অভিবাসনের প্রাকৃতিক ধারা ব্যাপকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। খবর নিউইয়র্ক পোস্টের।
যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইগ্রেশন ইকোলজিস্ট অ্যান্ড্রু ফার্নসওর্থ বলেছেন, ‘পাখিদের অবস্থান, আবহাওয়া এবং জলবায়ুর মধ্যে গভীর সম্পর্ক রয়েছে। সেই ভারসাম্যটাই এখন ভেঙে যাচ্ছে।’ তার মতে, এই প্রভাব শুধু কোনো নির্দিষ্ট অঞ্চলে নয়; বরং বিশ্বজুড়ে পাখিদের বাস্তুতন্ত্রে একধরনের ‘ধ্বংসাত্মক বাটারফ্লাই এফেক্ট’ তৈরি করছে।
বিংহ্যামটন বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় বলা হয়েছে, অভিবাসনের সময় প্রতি বছর বহু প্রজাতির পাখি হাজার হাজার কিলোমিটার পাড়ি দেয় নির্দিষ্ট পথ ধরে। পথে তাদের খাবার সংগ্রহ বা বিশ্রামের জন্যও রয়েছে নির্দিষ্ট কিছু এলাকা। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সময় ও তাপমাত্রার মিল না থাকায় অনেক পাখি এখন গন্তব্যে পৌঁছায় খুব তাড়াতাড়ি বা অনেক দেরিতে।
ফলে খাবার বা প্রজননের উপযুক্ত পরিবেশ তারা পায় না। গবেষকেরা একে তুলনা করেছেন এমন এক যাত্রার সঙ্গে, যেখানে দীর্ঘ ভ্রমণে রওনা হয়ে দেখা যায়, পথে সব রেস্তোরাঁ ও হোটেল বন্ধ।
ফলে অনেক পাখি অনাহারে মারা যাচ্ছে কিংবা সঙ্গী খুঁজে পাচ্ছে না। বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োলজিক্যাল সায়েন্সেস বিভাগের আচরণবিজ্ঞানী জাস্টিন ম্যান বলেন, ‘পাখিরা এখন নতুন জায়গায় আশ্রয় নিচ্ছে; কারণ, পুরোনো বাসস্থান আর তাদের প্রয়োজনের সঙ্গে খাপ খায় না।’
এ ছাড়া অতিরিক্ত ঝড়, দীর্ঘায়িত ঘূর্ণিঝড়ের মৌসুম ও বন্যা—সবকিছুই পাখিদের আন্তর্মহাদেশীয় যাত্রায় বাধা সৃষ্টি করছে; বিশেষ করে মেক্সিকো উপসাগর অতিক্রমের সময় অনেক পাখি এখন প্রবল ঝড়ের কবলে পড়ছে।
ইতিমধ্যে পৃথিবীর পাখিজগৎ চরম সংকটে রয়েছে। কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৯ সালের এক গবেষণায় দেখা গেছে, ১৯৭০ সালের পর থেকে প্রায় ৩০০ কোটি পাখি পৃথিবী থেকে হারিয়ে গেছে। ন্যাশনাল অডুবন সোসাইটির হিসাব বলছে, আগামী ৫০ বছরের মধ্যে উত্তর আমেরিকার আরও ৩৮৯ প্রজাতির পাখি বিলুপ্ত হতে পারে।
পাখিরা শুধু প্রকৃতির সৌন্দর্য নয়, বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্যেরও অপরিহার্য অংশ। পৃথিবীর প্রায় ৫ শতাংশ উদ্ভিদ পরাগায়নের জন্য সরাসরি পাখির ওপর নির্ভরশীল। পাখির সংখ্যা কমে গেলে খাদ্য উৎপাদনও হ্রাস পাবে, যা বৈশ্বিক অর্থনীতি ও পরিবেশে মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে। কফি, চকলেট বা ওষুধ তৈরির উপকরণ হিসেবে ব্যবহৃত অনেক ফসলই ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
উত্তর আমেরিকা থেকে ক্যারিবীয় অঞ্চলে অভিবাসনের পথে খাদ্যাভাবের কারণে রেড-নট, সোয়েনসন’স থ্রাশ ও ‘ব্ল্যাক-থ্রোটেড ব্লু ওয়ার্বলার’-এর মতো প্রজাতিগুলোর সংখ্যা দ্রুত কমছে। উদাহরণস্বরূপ, আর্কটিক থেকে দক্ষিণ আমেরিকা পর্যন্ত যাত্রাকারী রেড নট পাখির সংখ্যা ইতিমধ্যে প্রায় ৭৫ শতাংশ কমেছে।
এই অবস্থায় বিজ্ঞানীরা পরামর্শ দিয়েছেন, চাইলেই কিছু সহজ পদক্ষেপে তাদের সাহায্য করতে পারি। রাতে বাড়ির অপ্রয়োজনীয় আলো নিভিয়ে রাখা এবং খোলা জায়গায় পাখির খাদ্য ও পানি সরবরাহ করা তাদের এই কঠিন অভিযাত্রায় কিছুটা সহায়তা দিতে পারে।
জে.এস/
খবরটি শেয়ার করুন