ছবি: সংগৃহীত
বলিউডে একের পর এক নায়িকার উত্থান হয়েছে, আবার কেউ কেউ আলোচনার আড়ালে চলে গেছেন। কিন্তু প্রিয়াঙ্কা চোপড়া যেন অন্য গল্প লিখেছেন। তিনি সৌন্দর্য প্রতিযোগিতা জিতে বলিউডে এসেছেন, গুজব ও সমালোচনার ঝড় পার করেছেন, শেষ পর্যন্ত নিজের অবস্থান খুঁজে নিয়েছেন আন্তর্জাতিক অঙ্গনে। তার ক্যারিয়ারের প্রতিটি বাঁক আজও বিনোদনজগতের কাছে একেকটা শিক্ষা। তথ্যসূত্র: ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস।
প্রথম অধ্যায় : শুরুটা সহজ ছিল না
২০০০ সালে ‘মিস ওয়ার্ল্ড’ খেতাব জিতে আলোচনায় আসেন প্রিয়াঙ্কা। কিন্তু তার সামনে দাঁড়িয়েছিল নানা বাঁধা। বিজ্ঞাপন গুরু প্রহ্লাদ কাক্কর ঠিক এভাবে বললেন, ‘প্রিয়াঙ্কার অনেক অসুবিধা ছিল শুরুতে। গায়ের রং শ্যামলা, ত্বকের সমস্যা ছিল। বড় হাড়ের গড়নের মেয়েটি ওজন ঝরিয়ে “দোস্তানা” ছবিতে একেবারে নতুন রূপে হাজির হয়েছিল। ওই ছবিতে ওকে দারুণ দেখিয়েছিল।’
প্রহ্লাদের মতে, যখন চারপাশে বলা হচ্ছিল লারা দত্ত এগিয়ে যাবেন, তখনো তিনি বাজি ধরেছিলেন প্রিয়াঙ্কার ওপর। কারণ, তার ভেতরে ছিল অদম্য ইচ্ছাশক্তি ও লড়াইয়ের মানসিকতা।
দ্বিতীয় অধ্যায় : গুজবের ঝড়ে মর্যাদা রক্ষা
২০০০-এর দশকের মাঝামাঝি সময়ে শাহরুখ খানের সঙ্গে প্রিয়াঙ্কার সম্পর্ক নিয়ে বলিউডে ছড়ায় তুমুল গুজব। পত্রপত্রিকা থেকে শুরু করে গসিপ কলাম—সব জায়গায় একটাই নাম।
কিন্তু প্রিয়াঙ্কা একটিও শব্দ উচ্চারণ করেননি। প্রহ্লাদ কাক্কর বললেন, ‘এটা যদি তুচ্ছ কিছু হতো, তিনি হেসে উড়িয়ে দিতেন। কিন্তু যেহেতু তিনি নীরব থেকেছেন, বোঝাই যায়—এটা তার কাছে ব্যক্তিগত ও গুরুতর ছিল। আর সবচেয়ে বড় কথা, মর্যাদা ধরে রাখাই ছিল তার মূল শক্তি।’
অন্যদিকে শাহরুখ খানের পুরোনো সহযোগী বিবেক বস্বানী বরাবরই গুজব উড়িয়ে দিয়ে বলেছেন, ‘শাহরুখ সব সময়ই এক নারীর মানুষ। এত বছরেও তার অন্য কোনো সম্পর্কের খবর শোনা যায়নি।’
তৃতীয় অধ্যায় : বলিউড থেকে হলিউড
যখন বলিউড তাঁকে ‘বয়স্ক’ বলে ছবির প্রস্তাব কমাতে শুরু করল, তখনই ঝুঁকি নিলেন প্রিয়াঙ্কা। প্রহ্লাদ কাক্করের ভাষায়, ‘তিনি প্রথম ভারতীয় নায়িকা, যিনি বিদেশে গিয়ে শূন্য থেকে আবার ক্যারিয়ার শুরু করলেন। সামান্য চরিত্র, ছোট ছোট সুযোগ—সবকিছু নিয়েই এগোতে থাকলেন।’
এ সাহসী সিদ্ধান্তই তাকে ‘কোয়ান্টিকো’, ‘বেওয়াচ’, ‘সিটাডেল’-এর মতো প্রজেক্ট এনে দেয়, আর হলিউডে তার নতুন দিগন্ত খুলে দেয়।
চতুর্থ অধ্যায় : রাজনীতি আর বিদায়
ড্যাক্স শেপার্ডের পডকাস্টে প্রিয়াঙ্কা খোলাখুলিভাবে স্বীকার করেছেন, বলিউড ছাড়ার অন্যতম কারণ ছিল শিল্পের ভেতরের ‘রাজনীতি’। তার ভাষায়, ‘আমাকে একেবারে কোণঠাসা করা হচ্ছিল। অনেকে আমাকে নিচ্ছিল না, দ্বন্দ্ব ছিল, আমি এসব খেলায় ভালো নই। তাই বিরতি নিতে চেয়েছিলাম।’
পঞ্চম অধ্যায় : আত্মবিশ্বাসের বার্তা
নিজেকে নতুন করে প্রতিষ্ঠিত করার পর প্রিয়াঙ্কা একবার বলেছিলেন, ‘আরামদায়ক জীবন আমার পছন্দ নয়। আমি আত্মবিশ্বাসী, নতুন সেটে গিয়ে নিজেকে প্রমাণ করতে পারি। এক দেশে সাফল্যের বোঝা নিয়ে আরেক দেশে যাই না।’
প্রিয়াঙ্কা চোপড়ার যাত্রা অন্য বলিউড নায়িকার চেয়ে একেবারেই আলাদা। সৌন্দর্য প্রতিযোগিতার মঞ্চ থেকে বলিউড, তারপর গুজবের ঝড় সামলে অবশেষে হলিউডে সাফল্য—এখন প্রিয়ঙ্কা কেবল অভিনেত্রী নন, নারীদের প্রেরণার নাম।
খবরটি শেয়ার করুন