সোমবার, ৮ই জুলাই ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
২৩শে আষাঢ় ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আঙুর চাষে সফল ফরিদপুরের যুবক ফজলে রাব্বি

নিউজ ডেস্ক

🕒 প্রকাশ: ১১:০৮ পূর্বাহ্ন, ২৪শে মে ২০২৪

#

ছবি: সংগৃহীত

ফরিদপুরে পরীক্ষামূলক আঙুর চাষে পুরোপুরি সফল হয়েছেন আহম্মেদ ফজলে রাব্বি (২৮)। প্রথম বছরেই তিনি নানা জাতের আঙুর চাষ করে বাজিমাৎ করেছেন। আগামী বছর থেকে তিনি আরো বড় পরিসরে বাণিজ্যিকভাবে চাষ করবেন বলে জানিয়েছেন।

জানা গেছে, শহরের ১ নম্বর সড়কের গোয়ালচামট মহল্লার বাসিন্দা শেখ আব্দুর রবের ছেলে আহম্মেদ ফজলে রাব্বির ছোটবেলা থেকেই গাছপালা লাগানোর বেশ শখ ছিল। ২০২২ সালে শখের বশে বাড়ির ছাদে চার ধরনের চারটি আঙুরের চারা রোপণ করেন। এরপর ২০২৩ সালে শহরতলীর শোভারামপুর ইউনিয়ন পরিষদের কাছে ৭০ শতাংশ জমি পাঁচ বছরের জন্য ২ লাখ ২৫ হাজার টাকায় লিজ নিয়ে থ্রি স্টার গ্রিন নামে বাগান গড়ে তোলেন। সেখানে বিভিন্ন ফল ছাড়াও ৫০ শতাংশ জমিতে পরীক্ষামূলকভাবে আঙুর চাষ শুরু করেন।

সরেজমিনে জানা যায়, ফজলে রাব্বির বাগানে ৫০ শতাংশ জমিতে এক বছর বয়সী নতুন-পুরান বিভিন্ন জাতের প্রায় ৪৫০টি আঙুর গাছ রয়েছে। প্রায় প্রতিটি গাছেই থোকায় থোকায় ধরে আছে সবুজ, লাল ও কালো রঙের আঙুর। তবে তার বাগানে এবার যে আঙুর হয়েছে সবই দর্শনার্থীদের জন্য। এ বছর তিনি আঙুর বিক্রি করবেন না। তার বাগানে রয়েছে বাইকুনুর, ডিক্সন, ফান্টাসি সিডলেস, নারু সিডলেস, মার্সেল ফোরাস, ভাইটালিয়া আরলি রেডসহ বিভিন্ন প্রজাতির আঙুর।

তার আঙুরের বাগান দেখতে প্রতিদিনই দর্শনার্থীরা ভিড় জমাচ্ছেন। দেখতে আসা মানুষদের মাঝে তিনি বাগান থেকে আঙুর তুলে খাওয়াচ্ছেন। বাজার থেকে কেনা আঙুরের চেয়ে কোনো অংশে কম নয় বরং কোনো কোনোটা আরও বেশি মিষ্টি এবং সুস্বাদু হয়েছে।

আঙুর চাষি আহম্মেদ ফজলে রাব্বি বলেন, ‘আঙুরের পাশাপাশি মাল্টা, কমলা, লিচু, আনারসহ বিভিন্ন ফলের গাছ আছে। সবমিলিয়ে প্রথম বছরে বাগান তৈরিতে খরচ হয়েছে প্রায় ৩ লক্ষাধিক টাকা। যদিও প্রথমদিকে দেশ-বিদেশ থেকে আঙুরের চারা সংগ্রহ করতে বেশি খরচ হয়েছে। এখন নিজেই আঙুরের চারা উৎপাদন করছি এবং তা বিক্রি করছি।’

তিনি বলেন, ‘প্রতিটি আঙুর গাছের চারা রোপণে সাড়ে ৩ ফুট বাই ৬ ফুট দুরত্ব রাখতে হয়। জৈব সারের পরিমাণ বেশি দিতে হবে এবং বছরে একবার অর্থাৎ ঘন বৃষ্টির সময় রাসায়নিক সার ব্যবহার করতে হয়। এ ছাড়া পোকামাকড়ের অবস্থা বুঝে মাসে একবার কীটনাশক ব্যবহার করতে হবে। চারা রোপণের এক বছরের মাথায় আঙুর গাছে ফলন আসে। তবে কোনো কোনো জাতের আবার ২ বছরও লেগে যায়।’

আরো পড়ুন: তিন লাখ গাছ একাই লাগিয়েছেন ‘তালগাছ প্রেমিক’ চিত্তরঞ্জন

আহম্মেদ ফজলে রাব্বি আরো বলেন, ‘আমার বাগানে এখন বিভিন্ন জাতের আঙুরের চারা আছে। প্রতিটি চারা ৩০০ টাকা থেকে শুরু এবং ৬০০-৭০০ টাকার চারাও আছে। প্রতিদিন বিভিন্ন মানুষ আসছে আঙুর বাগান দেখতে এবং চারা কিনতে। সবমিলিয়ে আঙুর চাষে আমি সফল বলে মনে করি। এ ক্ষেত্রে আরো সফলতা পেতে কৃষি বিভাগের সহযোগিতা কামনা করছি।’

ফরিদপুর গার্ডেনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সাগর নন্দী জানান, আবহাওয়া, মাটি ও বাণিজ্যিক চাষের জ্ঞানের অভাবসহ নানা কারণে বাংলাদেশে চাষিদের মধ্যে আঙুর চাষের আগ্রহ খুব একটা দেখা যায় না। তবে ফরিদপুরের তরুণ উদ্যোক্তা আহম্মেদ ফজলে রাব্বি তার বাগানে পরীক্ষামূলকভাবে চাষ করে যে আঙুর ফলাতে সক্ষম হয়েছেন, তা অতুলনীয়। খেতে মিষ্টি এবং সুস্বাদু। তিনি সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে আঙুর উৎপাদনে ব্যাপক সফলতা পাবেন।’

ফরিদপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘বাগানটির কথা শুনেছি। তার বাগানের আঙুর খেতে সুস্বাদু ও মিষ্টি। তার বাগান পরিদর্শনের পাশাপাশি আঙুর চাষে চাষিদের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। আমাদের পক্ষ থেকেও আঙুর চাষিকে সব ধরনের সহযোগিতা করা হচ্ছে। ফরিদপুরের মাটি ও আবহাওয়া আঙুর চাষের জন্য উপযোগী। ছাদ বাগান, বাড়ির আঙিনা ও জমিতে আঙুর চাষ সহজ ও লাভজনক।’

এসি/ আই.কে.জে/


ফরিদপুর আঙুর চাষ

খবরটি শেয়ার করুন