ছবি: সংগৃহীত
চুইঝাল লতাজাতীয় ভেষজগুণ সম্পন্ন উদ্ভিদ। অনেকেই বিভিন্নভাবে কাজে লাগান। চুইঝাল গ্রীষ্ম অঞ্চলের লতাজাতীয় বনজ ফসল। এটি দক্ষিণ এশিয়ার প্রায় সব দেশে খুব ভালো জন্মে। ভারত, নেপাল, ভুটান, বার্মা, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, সিঙ্গাপুর, শ্রীলঙ্কা, থাইল্যান্ড চুই চাষের জন্য উপযোগী। বাংলাদেশের কিছু চাষি নিজ উদ্যোগে প্রয়োজন মেটানোর জন্য চুইঝাল চাষ করে আসছেন।
রোপণ পদ্ধতি
অন্য গাছের আশ্রয় নিয়ে চুইঝাল বেড়ে ওঠে। তাছাড়া মাটিতে লতানো ফসল হিসেবেও বৃদ্ধি ঘটায়। সব গাছের সঙ্গেই এ লতা বাড়ে। এর মধ্যে আম, কাঁঠাল, মেহগনি, সুপারি, শিমুল, নারিকেল, কাফলা (জিয়ল) গাছে ভালো হয়। তবে আম, কাফলা ও কাঁঠাল গাছে বেড়ে ওঠা চুই সবচেয়ে ভালোমানের হয়ে থাকে। আরোহী গাছের গোড়ায় সামান্য গোবর মাটি মিশিয়ে লতার ১টি গিট মাটির নিচে রোপণ করলে কদিন পরেই বাড়তে শুরু করে। ১০-১২ মাসের মধ্যেই লতা কাটা যায়। সাধারণ যত্নেই চুইঝাল বেড়ে ওঠে।
জমি ও মাটি
দো-আঁশ ও বেলে দো-আঁশ মাটি এবং পানি নিষ্কাশনের সুবিধাযুক্ত ও ছায়াময় উঁচু জমিতে সাধারণত চুইঝাল চাষ করা হয়। চুইঝালের জন্য আলাদা কোনো মাটি বা জমির প্রয়োজন নেই। সাধারণ ফল বাগান বা গাছের বাগানের জমির উপযুক্ততাই চুয়ের জন্য উপযুক্ত। খেয়াল রাখতে হবে, বর্ষায় বা বন্যায় যেন চুইঝাল গাছে গোড়ায় পানি না জমে।
রোপণের সময়
বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ (এপ্রিল-মে) এবং আশ্বিন-কার্তিক (অক্টোবর-নভেম্বর) মাস হলো চুইঝালের লতা রোপণের উপযুক্ত সময়।
অঙ্গজ প্রজনন বা লতা কাটিং পদ্ধতিতে এর কাণ্ড বা শাখা ৫০-৭৫ সেন্টিমিটার লম্বা করে কেটে সরাসরি মাটিতে রোপণ করা হয়। স্থানীয়ভাবে কাটিং বা শাখাকে পোড় বলা হয়। একটি পোড়ে কমপক্ষে ৪-৫টি পর্বসন্ধি থাকে। বাণিজ্যিকভাবে পলিব্যাগে চারা তৈরি করা হয়। তারপর পলিব্যাগ থেকে চারা নিয়ে মূল জমিতে রোপণ করা হয়।
কাটিং শোধন
চুইঝালের কাটিং চারা রোপণের আগে অবশ্যই শোধন করে নিতে হবে। ১ লিটার পানিতে ২-৩ গ্রাম প্রোভ্যাক্স বা নোইন বা ব্যাভিস্টিন বা অন্য কোনো উপযুক্ত রাসায়নিকে মিশিয়ে কাটিং ৩০ মিনিট চুবিয়ে রাখতে হবে। এরপর পরিষ্কার পানি দিয়ে ধুয়ে রোপণ করতে হবে। এতে রোগ বা পোকার আক্রমণ হয় না বা কম হয়। লতা ভালোভাবে বেড়ে ওঠে।
বংশবিস্তার
বীজ ও লতার কাটিং দিয়ে বংশবিস্তার করা যায়। তবে লতার কাটিংয়ে তাড়াতাড়ি বাড়ে। ফলন দ্রুত পাওয়া যায়। বীজ থেকে বংশবিস্তার জটিল ও সময়সাপেক্ষ। আমাদের দেশে শুধু লতা থেকে বংশবিস্তার করা হয়। দেশের দক্ষিণাঞ্চলের প্রায় সবকটি নার্সারিতে চুইঝালের চারা পাওয়া যায়।
সার ও সেচ
চুইঝাল চাষে সাধারণত কোনো রাসায়নিক সার ব্যবহার করতে হয় না। পোড় বা শাখা রোপণের আগে গর্তে পচা আবর্জনা বা ছাই বা গোবর ব্যবহার করতে পারবেন। কেউ কেউ কৃষি বিভাগের পরামর্শ অনুযায়ী সাধারণ হারে ইউরিযা, টিএসপি, এমওপি বর্ষার আগে ও পরে গাছের গোড়া থেকে ১ হাত দূরে প্রয়োগ করেন। শুকনো মৌসুমে পানি সেচের ব্যবস্থা করতে হয়। অন্তত সপ্তাহে ১ বার গাছের গোড়ায় সেচ দিলে গাছের বৃদ্ধি স্বাভাবিক থাকে। বর্ষাকালে চুইঝালের গোড়ায় যাতে পানি না জমে, সেদিকে বিশেষ খেয়াল রাখতে হয়।
আরো পড়ুন: বৈশাখের প্রথম দিন থেকেই পাকা ধান কাটার উৎসব শুরু
বাউনি দেওয়া
চুইঝাল লতাজাতীয় বলে আরোহণের সাপোর্ট লাগে। সে ক্ষেত্রে যে কোনো গাছ বাউনি হিসেবে ব্যবহৃত হয়। বাউনি না দিলেও মাটিতে বাড়তে পারে।
ফলন সংগ্রহ
চুইঝাল লাগানোর বা রোপণের ১ বছরের মাথায় খাওয়ার উপযোগী হয়। তবে ভালো ফলনের জন্য ৫-৬ বছর বয়সের গাছই উত্তম। এতে হেক্টরপ্রতি ২.০ থেকে ২.৫ মেট্রিক টন ফলন পাওয়া যায়। ৫-৬ বছরের একটি গাছ থেকে বছরে প্রায় ১৫-২৫ কেজি পর্যন্ত চুইঝাল লতার ফলন পাওয়া যায়।
সূত্র: কৃষি তথ্য সার্ভিস।
এসি/ আই.কে.জে/