ফাইল ছবি (সংগৃহীত)
দেশে লাগামহীন ডিমের বাজার। দাম নিয়ন্ত্রণে ডিম আমদানির অনুমতি দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এবার ডিম আমদানির ওপর বিদ্যমান শুল্ক প্রত্যাহারের জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) আরেক দফা চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন।
মঙ্গলবার (৮ই অক্টোবর) গণমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন ট্যারিফ কমিশনের বাণিজ্যনীতি বিভাগের উপপ্রধান মাহমুদুল হাসান।
তিনি বলেন, বাজারে বাড়ছে ডিমের দাম। এ পরিস্থিতিতে ডিম আমদানির ওপর বিদ্যমান শুল্ক প্রত্যাহারের জন্য আরেক দফা এনবিআরকে চিঠি দেয়া হয়েছে।
চিঠিতে বলা হয়, গত ২৯শে আগস্ট বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন থেকে অত্যাবশ্যকীয় পণ্য পেঁয়াজ, আলু ও ডিম আমদানিতে শুল্ক-কর কমানোর বিষয়ে একটি বিশ্লেষণাত্মক প্রতিবেদন এনবিআরে পাঠানো হয়। প্রতিবেদনের সুপারিশ অনুযায়ী গত ৪ঠা সেপ্টেম্বর জাতীয় রাজস্ব বোর্ড আলু ও পেঁয়াজ আমদানিতে শুল্ক কমিয়েছে। এতে অনুসন্ধান করে জানা যায় যে, স্থানীয় বাজারে এ দুটো পণ্যের মূল্যে স্থিতিশীলতা ফিরে এসেছে।
অন্যদিকে অত্যাবশ্যকীয় পণ্য ডিম আমদানিতে কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী শুল্ক ছাড়ের বিষয়ে এখনও কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। সম্প্রতি স্থানীয় বাজারে ডিমের পর্যাপ্ত সরবরাহে ঘাটতি থাকায় দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে। ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাবে গত ১ মাসে ডিমের স্থানীয় মূল্য ১৫ শতাংশ এবং ১ বছরে ২০.৪১ শতাংশ বেড়েছে।
এছাড়া বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, দেশের বিভিন্ন জেলায় সাম্প্রতিক বন্যার কারণে পোল্ট্রি শিল্পের ক্ষতি হওয়ায় এবং পরিপূরক অন্যান্য খাদ্য পণ্যের দাম স্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় বাজারে ডিমের সরবরাহ ব্যবস্থায় এক ধরনের চাপ সৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয় বাজারে সরবরাহ বাড়াতে দেশের পোল্ট্রির শিল্পের সুরক্ষা বিবেচনায় সুনির্দিষ্ট মেয়াদে শুল্ক ছাড়ের মাধ্যমে ডিম আমদানির অনুমতি প্রদান করা হলে পোল্ট্রি শিল্পের উপর নেতিবাচক প্রভাবের সম্ভাবনা কম বলে কমিশন মনে করে।
ডিম শর্তসাপেক্ষে আমদানিযোগ্য পণ্য হওয়ায় সরকারের অনুমতি ব্যতিরেকে ডিম আমদানি করা যায় না। অন্যদিকে, গত বছরগুলোতে ডিম আমদানি না হওয়ার কারণে স্বল্প মেয়াদে এই শুল্ক-কর ছাড়ের ফলে সরকারের রাজস্ব ক্ষতিরও আশঙ্কা নেই। বর্তমান ডিমে শুল্ক-কর মোট ৩৩ শতাংশ অব্যাহত রাখলে আমদানিকৃত ডিম দিয়ে স্থানীয় বাজারে দামের তেমন তারতম্য ঘটবে না। তাই কমিশন আগে পাঠানো প্রতিবেদনের আলোকে আমদানি পর্যায়ে ডিমের উপর শুল্ক-কর স্বল্প সময়ের জন্যে প্রত্যাহার করা হলে সাধারণ জনগণ এই সময়ে স্বস্তির জায়গা খুঁজে পাবে।
এ পরিস্থিতিতে স্থানীয় বাজারে উচ্চ মূল্যের প্রবণতা রোধে এবং জনস্বার্থে অত্যাবশ্যকীয় খাদ্য হিসেবে স্বীকৃত ডিমের উপর সুনির্দিষ্ট মেয়াদে শুল্ক-কর প্রত্যাহার করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পুনরায় অনুরোধ করা হলো।
এদিকে, বাজারের অস্থিরতা নিয়ন্ত্রণের জন্য ৭ প্রতিষ্ঠানকে ৪ কোটি ৫০ লাখ পিস ডিম আমদানির অনুমতি দিয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। মঙ্গলবার এক বিজ্ঞপ্তিতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য-১ শাখা জানিয়েছে, প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী দেশে প্রতিদিন প্রায় ৫ কোটি পিস ডিমের চাহিদা রয়েছে। বর্তমানে ডিমের বাজার পরিস্থিতি বিবেচনায় ও বাজারদর স্থিতিশীল রাখার লক্ষ্যে সাময়িকভাবে সীমিত সময়ের জন্য ৭টি প্রতিষ্ঠানের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তাদেরকে ডিম আমদানির অনুমতি দেয়া হয়েছে।
এ আমদানির অনুমতির মেয়াদ আগামী ৩১শে ডিসেম্বর পর্যন্ত বহাল থাকবে। আমদানিকারকদের আমদানির শর্তাদি অনুসরণ করে আমদানির প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণ করতে হবে।