ছবি: সংগৃহীত
নিজের সম্পদের হিসাব জমা দিয়েছেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আবদুল মোমেন। রোববার (২২শে ডিসেম্বর) দুদকের প্রধান কার্যালয়ে গণমাধ্যমের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ তথ্য জানিয়েছেন।
দুদক চেয়ারম্যান বলেন, অতীত থেকে শিক্ষা নেব। আমাদের কমিশনের সবাই সম্পদের হিসাব জমা দেবে। স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে আমি এরইমধ্যে সংস্কার কমিশনে সম্পদবিবরণী দাখিল করেছি। আমার সম্পদের কিছু বিবরণ তুলে ধরছি।
নিজের সম্পত্তির ফিরিস্তি তুলে ধরে তিনি বলেন, বসিলায় সাড়ে ৭শ স্কয়ার ফিটের দুটি মিলিয়ে ১৫০০ স্কয়ার ফিটের একটি অ্যাপার্টমেন্ট আছে। সেখানে আরও ৭০০ স্কয়ার ফিট নেওয়ার প্রক্রিয়ার মধ্যে আছি। পূর্বাচল আমেরিকান সিটিতে স্ত্রীর সঙ্গে আমার একটি খালি জমি আছে ৫ কাঠা। বিসিএস প্রশাসন কমিটির সদস্য ছিলাম। সেখানে ৮ জন সদস্যের জন্য ১০ কাঠা জমি আছে। আমার ভাগে ১.২৫ কাঠা পড়বে।
তিনি আরো বলেন, রাজউকের একটি প্লটের জন্য ৭৫ হাজার টাকা জমা দিয়েছিলাম। আজ পর্যন্ত সেটার কোনো নিষ্পত্তি হয়নি। যেকোনো কারণে হোক সরকার আমাকে দেয়নি। আমি আবার আবেদন করব। এর বাইরে আমার আর কোনো স্থাবর সম্পদ নেই।
আরও পড়ুন: মাসিক ভাতা বাড়ানোর দাবিতে ট্রেইনি চিকিৎসকদের শাহবাগ অবরোধ
অস্থাবর সম্পত্তি সম্পর্কে জানিয়ে তিনি বলেন, বিভিন্ন আকারের ২৫ সেলফ ভর্তি বইপত্র। অনেক দামি বইপত্র আছে। আসবাব ইলেকট্রনিক সামগ্রী মিলিয়ে ৫ লাখ টাকার জিনিস আছে। ৫ বছর মেয়াদি ৩০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র আছে। আর ৩ মাস অন্তর সঞ্চয়পত্র আছে ২০ লাখ টাকার। আমার জিপিএফের টাকা আমি তুলিনি, ওখানে ১৭ লাখ টাকা আছে।
নিজের আয়ের উৎস সম্পর্কে জানিয়ে তিনি বলেন, আমার চাকরিলব্ধ আয়- উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত সম্পদের বিক্রয়লব্ধ অর্থ। শিক্ষকতা করি, বক্তৃতা করি, লেখালেখি করি। সাড়ে ৫ শতক একটা জমি কিনেছিলাম বেড়িবাঁধের বাইরে, সেটা বিক্রি করে কিছু টাকা পেয়েছিলাম। আমার চাকরি জীবন অনেক দিনের। ছাত্র অবস্থা থেকেই আয় করা শুরু করি। যখন এই চাকরি থেকে চলে যাব আপনারা হিসাব করবেন এই সম্পদ কতটা বাড়ল, কতটা কমল।
দুদক চেয়ারম্যান বলেন, পৃথিবীর ইতিহাসে এমন ঘটনা কখনো ঘটেনি যে প্রধানমন্ত্রীও পালিয়েছেন, একইসঙ্গে বায়তুল মোকাররমের খতিবও পালিয়েছেন। রাষ্ট্রের রন্ধ্রে রন্ধ্রে দুর্নীতি। এই বিষয়ে জনসচেতনতা তৈরি করতে হবে। আর সেটা প্রচার করতে হবে গণমাধ্যমকে।
দুদক কমিশনার (তদন্ত) মিঞা মুহাম্মদ আলি আকবার আজিজী বলেন, মাত্র অর্ধেক জনবল নিয়ে দুদক কাজ করছে। আমরা নির্মোহভাবে অনুসন্ধান করব। কোথাও পক্ষপাত হবে না। আমরা জাতির কাছে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
দুদক কমিশনার (অনুসন্ধান) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) হাফিজ আহ্সান ফরিদ বলেন, দুদকের পেশাগত ভিত্তি অনেক শক্ত। ৪২ দিন কমিশন না থাকার পরেও দুদকের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা নিরলস কাজ করে গেছেন। পৃথিবীর কোনো মানুষের দাসত্ব করবে না দুদক।
গত ১১ই ডিসেম্বর দুদকে যোগ দেন মোহাম্মদ আবদুল মোমেন। ওই দিন ৭ দিনের মধ্যে স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ ও আয়–ব্যয়ের হিসাব প্রকাশ করার কথা জানিয়েছিলেন তিনি। ওইদিনই দুদকের নতুন চেয়ারম্যান ও কমিশনারদের স্বচ্ছতা নিশ্চিতে তাদের আয় ও সম্পদ বিবরণীর তথ্য প্রকাশের আহ্বান জানায় ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। তার সঙ্গে কমিশনার ও অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মিঞা মুহাম্মদ আলি আকবার আজিজী যোগদান করেন। পরে অপর কমিশনার হাফিজ আহ্সান ফরিদ যোগদান করেন।
এসি/ আই.কে.জে/