সোমবার, ২৩শে ডিসেম্বর ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
৯ই পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সর্বশেষ

*** ২৯শে ডিসেম্বর লন্ডন যাচ্ছেন খালেদা জিয়া *** ২০শে জানুয়ারির মধ্যে সব পাঠ্যবই সরবরাহের নির্দেশ *** মুম্বাইয়ে অরিজিতের কনসার্টের টিকিটের মূল্য লাখ টাকা *** তথ্য উপদেষ্টার সঙ্গে রাহাত ফতেহ আলী খানের সৌজন্য সাক্ষাৎ *** সাধারণ মানুষ সংস্কার বোঝে না, তারা বোঝে যেন ভোট ঠিকভাবে দিতে পারে : ফখরুল *** বাংলাদেশকে আরও ৪০ কোটি ডলার দেবে বিশ্বব্যাংক *** নিষিদ্ধ পলিথিনের বিরুদ্ধে যৌথ অভিযান চলবে : পরিবেশ উপদেষ্টা *** ‘মহাকালের পাতায় হাসান আরিফের কৃত্তি লেখা থাকবে’ *** দুদক চেয়ারম্যান নিজের সম্পদের হিসাব দিলেন *** ওয়েজ বোর্ড সিস্টেম বাতিল করে সাংবাদিকদের নূন্যতম বেতন চালু করা উচিত : শফিকুল আলম

পরিবার নিয়ে ঘুরে আসতে পারেন টাঙ্গাইলের মহেরা জমিদার বাড়ি থেকে

নিউজ ডেস্ক

🕒 প্রকাশ: ১১:২০ পূর্বাহ্ন, ৪ঠা অক্টোবর ২০২৪

#

ছবি : সংগৃহীত

শরতের এ সময়ে পরিবার বা বন্ধুদের নিয়ে ঢাকার আশপাশের কোথাও থেকে ঘুরে না আসলে কি হয়! আমাদের দেশের যেমন রয়েছে ঋতুর অপরূপ বৈচিত্র্য, তেমনি রয়েছে গৌরবোজ্জ্বল নানা ঐতিহ্য। আড়াই হাজার বছরের অধিক সময়ে এ দেশে বিভিন্ন জনগোষ্ঠী, শাসক শ্রেণী গড়ে তুলেছে অসংখ্য ইমারত। গড়েছে নগর, প্রাসাদ, দুর্গ, মন্দির, মসজিদ, বিহার স্তূপ ও সমাধিসৌধ। এসব ঐতিহ্যের অধিকাংশই কালের গর্ভে বিলীন হলেও উল্লেখযোগ্য সংখ্যক সংস্কৃতির চিহ্ন এ দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে আজও টিকে আছে। যা প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন হিসেবে সমধিক পরিচিত।

তেমনই একটি ঐতিহ্যবাহী নিদর্শন টাঙ্গাইলের মহেরা জমিদার বাড়ি। নান্দনিক স্থাপত্যশৈলীর জন্য এই বাড়িটি মানুষের নজর কাড়ে। প্রতিদিনই অনেক মানুষ এখানে ঘুরতে আসেন। সাপ্তাহিক ছুটির দিনে বেশি থাকে পর্যটকের উপস্থিতি। ঢাকার মহাখালী বা কল্যাণপুর থেকে টাঙ্গাইলের বাস পেয়ে যাবেন। টাঙ্গাইলের নটিয়াপাড়া বাস স্ট্যান্ডে নেমে অটো করে যেতে হবে মহেরা জমিদার বাড়ি।

এখানে যাওয়ার পথটি বেশ সুন্দর। গ্রামের মাঝ দিয়ে পিচঢালা পথ বয়ে গেছে। চারপাশটা সবুজে আচ্ছাদিত। টিকিট কেটে ভেতরে প্রবেশ করতে হবে। জনপ্রতি টিকিট মূল্য ৮০ টাকা। বাংলাদেশ পুলিশের তত্ত্বাবধানে থাকায় জমিদার বাড়ি ও এর চারপাশের আঙিনা বেশ গোছালো ও পরিপাটি। ১ হাজার ১৭৪ শতাংশ জমির ওপর এই মহেরা জমিদার বাড়ি অবস্থিত। এখানে রয়েছে ৪টি ঐতিহাসিক ভবন। এগুলো হলো- চৌধুরী লজ, মহারাজ লজ, আনন্দ লজ ও কালীচরণ লজ।

চৌধুরী লজ: জমিদার বাড়ি প্রবেশের পরেই মূল ফটক দিয়ে দেখা যায় চৌধুরী লজ। এটির গোলাপি রংয়ের ভবনটির পিলারগুলো রোমান স্থাপত্যশৈলীতে নির্মাণ করা হয়েছে। সুন্দর নকশা খচিত এই ভবনের ভেতরে রয়েছে ঢেউ খেলানো ছাদ। দোতলা বিশিষ্ট এই ভবনটির সামনে রয়েছে সুন্দর বাগান ও সবুজ মাঠ।

আরো পড়ুন : পঞ্চগড় থেকে খালি চোখে দেখা যাচ্ছে কাঞ্চনজঙ্ঘা

মহারাজ লজ: বাইজেনটাইন স্থাপত্যশৈলীতে নির্মিত মহারাজ লজ ভবনের সামনে ছয়টি কলাম রয়েছে। সেখানে গোলাপি রংয়ের মহারাজ লজের সামনে রয়েছে সিঁড়ির বাঁকানো রেলিং ও ঝুলন্ত বারান্দা, যা ভবনের শোভা বৃদ্ধি করেছে। ভবনটিতে মোট কক্ষ আছে ১২টি, সামনে বাগান ও পেছনে একটি টেনিসসহ কোর্ট রয়েছে।

আনন্দ লজ: মহেরা জমিদার বাড়ির সবচেয়ে আকর্ষণীয় ভবন হলো আনন্দ লজ। নীল ও সাদা রংয়ের মিশ্রণে ভরা ভবনটির সামনে ৮টি সুদৃশ্য কলাম রয়েছে। তিনতলা বিশিষ্ট ঝুলন্ত বারান্দা এ ভবনকে করেছে আরও দৃষ্টিনন্দন। আনন্দ লজের সামনে হরিণ, বাঘ ও পশু-পাখির ভাস্কর্যসহ একটি চমৎকার বাগান আছে।

কালীচরণ লজ: জমিদারি প্রথা বিলুপ্তির শেষের দিকে নির্মিত এই কালীচরণ লজ অন্য ভবন থেকে অনেকটা আলাদা। ইংরেজি 'ইউ' (ট) অক্ষরের আদলে এই ভবনটি ইংরেজ স্থাপত্যশৈলীতে নির্মিত। অনন্য স্থাপত্যশৈলীর জন্য বিকেল বেলা ভবনের ভেতর থেকে সুন্দর আলোর ঝলকানি দেখা যায়।

ইতিহাস বলে, ১৮৯০ দশকের আগে স্পেনের কর্ডোভা নগরীর আদলে জমিদার বাড়িটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। স্বাধীনতা যুদ্ধে পাকিস্তানি বাহিনী মহেরা জমিদার বাড়িতে হামলা করে এবং জমিদার বাড়ির কুলবধূসহ পাঁচজন গ্রামবাসীকে নির্মমভাবে গুলি করে হত্যা করে। পরবর্তী সময় তারা লৌহজং নদীর নৌপথে এ দেশ ত্যাগ করে। এখানেই তখন মুক্তিবাহিনীর ক্যাম্প স্থাপন করা হয়েছিল। এ জমিদার বাড়িটি ১৯৭২ সালে পুলিশ ট্রেনিং স্কুল হিসেবে প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয় এবং পুলিশ ট্রেনিং স্কুলকে পুলিশ ট্রেনিং সেন্টারে উন্নীত করা হয় ১৯৯০ সালে।

এই জমিদার বাড়ির সামনে প্রবেশ পথের আগেই রয়েছে 'বিশাখা সাগর' নামে বিশাল এক দীঘি এবং বাড়িতে প্রবেশের জন্য রয়েছে ২টি সুরম্য গেট। এ ছাড়াও মূল ভবনে পেছনের দিকে পাসরা পুকুর ও রানী পুকুর নামে আরও দুটি পুকুর রয়েছে এবং শোভাবর্ধনে রয়েছে সুন্দর ফুলের বাগান। বিশাখা সাগর সংলগ্ন দক্ষিণ পাশে রয়েছে বিশাল আম বাগান ও বিশাল তিনটি প্রধান ভবনের সঙ্গে রয়েছে নায়েব সাহেবের ঘর, কাছারি ঘর, গোমস্তাদের ঘর, দীঘিসহ ও আরও তিনটি লজ। ছুটির দিনটিতে পরিবারকে নিয়ে এমন একটি স্থানে আপনি ভ্রমণ তাই করতেই পারেন নির্দ্বিধায়।

যেভাবে যাবেন

ঢাকা থেকে টাঙ্গাইলগামী বাসে নাটিয়াপাড়া বাস স্ট্যান্ডে নেমে অপেক্ষমাণ সিএনজি বেবিট্যাক্সি যোগে (ভাড়া ৭৫ টাকা, শেয়ারে জনপ্রতি ১৫ টাকা) ৩ কিমি পূর্ব দিকে মহেরা জমিদার বাড়ি। মহাসড়কে পুলিশ ট্রেনিং সেন্টার, মহেরা, টাঙ্গাইল নামে দিকনির্দেশনা ফলক (বিশাল সাইনবোর্ড) আছে। আর যারা উত্তরবঙ্গ থেকে আসবেন তারা যে কোনো ঢাকাগামী বাসে টাঙ্গাইল পার হয়ে ১৭ কিমি পর নাটিয়াপাড়া বাস স্ট্যান্ডে নেমে একইভাবে যেতে পারেন।

এস/ আই.কে.জে/

মহেরা জমিদার বাড়ি

সুখবর এর নিউজ পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

খবরটি শেয়ার করুন