সোমবার, ১৬ই জুন ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
২রা আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সাংবাদিক ফারুক ওয়াসিফের 'মন্তব্য' কী সমকাল পত্রিকা সম্পর্কে?

নিজস্ব প্রতিবেদক

🕒 প্রকাশ: ১২:৫৮ পূর্বাহ্ন, ১৬ই জুন ২০২৫

#

পিআইবির মহাপরিচালক ও সাংবাদিক ফারুক ওয়াসিফ। ছবি: সংগৃহীত

সাংবাদিক, কলামিস্ট ও প্রেস ইনস্টিটিউটের (পিআইবি) মহাপরিচালক ফারুক ওয়াসিফের ফেসবুকের এক 'মন্তব্য'কে ঘিরে আলোচনা-সমালোচনা করছেন নেটিজেনরা। দৈনিক সমকালের অনলাইন সংস্করণে প্রচারিত একটি প্রতিবেদন শেয়ার করে 'হারামজাদা' সম্বোধন করে লেখা তার পোস্টে পত্রিকাটিকে, বা এর সাংবাদিকদের গালি দেওয়া হয়েছে কী না, এমন প্রশ্ন অনেকের। জাতীয় গণমাধ্যমে কর্মরত একাধিক সাংবাদিক মনে করছেন, এক্ষেত্রে 'হারামজাদা' শব্দটি সাংবাদিকদের বোঝাচ্ছে। কারণ, প্রতিষ্ঠান ব্যক্তির সমন্বয়ে পরিচালিত হয়।

সাংবাদিকতার মানোন্নয়ন ও সংবাদমাধ্যম নিয়ে গবেষণার জন্য 'নিবেদিত' সরকারি প্রতিষ্ঠান পিআইবির মহাপরিচালকের দায়িত্বে থেকে দেশের পাঠকনন্দিত এবং শীর্ষ সারির জাতীয় দৈনিক পত্রিকাকে কিংবা এর সাংবাদিকদের 'হারামজাদা' বলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ফারুক ওয়াসিফ কীভাবে গালি দেন, এ প্রশ্ন তুলেছেন নেটিজেনরা। পিআইবির গুরুত্বপূর্ণ ও দায়িত্বশীল পদে থেকে অতীতে কেউ সংবাদমাধ্যম সম্পর্কে এমন 'অনাকাঙ্ক্ষিত শব্দ' ব্যবহার করেননি বলেও তাদের অভিমত।

কেউ কেউ বলছেন, সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে নয়, 'হারামজাদা' শব্দটি দিয়ে জায়নবাদের প্রতি তলে তলে 'ভক্তিমূলক' সাংবাদিকতার বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বামচিন্তার কলামিস্ট ফারুক ওয়াসিফ।

গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের এক উপদেষ্টার বিশেষ অনুরোধে ফারুক ওয়াসিফকে পিআইবির মহাপরিচালক পদে দায়িত্ব দেয় তথ্য মন্ত্রণালয়। এ দায়িত্ব নেওয়ার আগ পর্যন্ত তিনি দৈনিক সমকালের পরিকল্পনা সম্পাদক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। এর আগে তিনি দৈনিক প্রথম আলোতে কর্মরত ছিলেন। এ পত্রিকায় আওয়ামী লীগের কর্তৃত্ববাদী ও স্বৈরতান্ত্রিক সরকারের আমলে তার লেখা সাহসী কলামগুলো পাঠক সমাজে ব্যাপক সমাদৃত হয়। সাবেক কর্মস্থল সমকাল ও এর সহকর্মীদের সম্পর্কে অশালীন 'শব্দ' প্রয়োগ কীভাবে করেন তিনি, এ প্রসঙ্গ উল্লেখ করে নেটিজেনরা তার সমালোচনা করছেন।

ফারুক ওয়াসিফ শনিবার (১৪ই জুন) রাতে তার ফেসবুক অ্যাকাউন্টে সমকালের ফেসবুক পেজের একটি প্রতিবেদন শেয়ার করে লেখেন, 'হারামজাদা, তোর কোনো প্যলেস্টাগনি নারীর বর্ণনা জান নাই?'। তার বাক্যটি অশুদ্ধ। সমকালের সংবাদটির শিরোনাম- 'হঠাৎ বিকট শব্দের পর সবকিছু অন্ধকার, ইসরায়েলি নারীর বর্ণনা'। প্রতিবেদনটিতে ইসরায়েলে ইরানের পাল্টা হামলার পর দেশটির এক নারীর আতঙ্কিত হওয়ার কথা বর্ণিত হয়েছে। বিবিসিকে উদ্ধৃত করে খবরটি প্রচার করে সমকাল।

খবরটি দেশের জাতীয় পর্যায়ের বেশিরভাগ সংবাদমাধ্যমের অনলাইন সংস্করণে শনিবার প্রচারিত হয়।  তিনি শুধু সমকালের খবর শেয়ার করে গালি দিলেন কেন, এমন প্রশ্নও করছেন কেউ কেউ। পোস্টে উল্লেখিত 'হারামজাদা' শব্দটি আসলে কাকে, বা কাদের উদ্দেশ্যে বলা, ইসরায়েলঘেঁষা বিদেশি সংবাদমাধ্যমগুলো সম্পর্কে তা বলা হয়েছে কী না, এসব বিষয়ে স্পষ্ট হতে বক্তব্য জানার চেষ্টা করেও ফারুক ওয়াসিফের বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি। তবে তার ফেসবুকের বন্ধু ও অনুসারীদের মধ্যে অনেকে শব্দটি তিনি সমকালের উদ্দেশ্যে বলেছেন বলে ধরে নিয়ে মন্তব্য করছেন। তাদের মন্তব্যের জবাব রোববার (১৫ই জুন) রাত সাড়ে ১২টার মধ্যেও দেননি তিনি।

ফারুক ওয়াসিফের ফেসবুক পোস্টে মাহাদি হাসান নামের একজন মন্তব্য করেন, 'এরা (সমকাল) বিদেশি চ্যানেলের খবর শুধু ট্রান্সলেট করে... এই সব নিউজ পেপার বন্ধ করা উচিত।' লিখন ইসলাম লিখেছেন, 'এসব পত্রিকা বন্ধ করেন না কেন?' হাসান আলি লেখেন, 'এতদিন পর একটা লেখা পছন্দ হইছে।' মোহাম্মদ ইয়াকুব নামের একজন লেখেন, 'সমকাম (সমকাল), বা‌লের কণ্ঠ (কালের কণ্ঠ) গ্রুপ এসব আজাইরা খব‌রের পেছ‌নে প‌ড়ে আ‌ছে।' হাফিজ মুতাসিম মন্তব্যে দাবি করেছেন, সমকালকে 'হারামজাদা' বললেও 'তাও কম বলা হয় এদের।' সায়ীদ ইসলাম বলেন, 'কুলাংগার এরা (সমকাল)।'

ফারুক ওয়াসিফের পোস্টে দ্বিমত, বা ভিন্নমতও পোষণ করছেন কেউ কেউ। তাকে খোঁচাও দিচ্ছেন তারা। তার পোস্টে মিফান রার্বা নামের একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে মন্তব্য করা হয়েছে, 'কী চমৎকার দোধারী ছুরি আপনি (ফারুক ওয়াসিফ)! আমেরিকার দালালি এবং ফিলিস্তিনের প্রতি মায়াকান্না দুটোই চলে সমানতালে। মানুষকে বোকা ভাবেন, কিন্তু এতো বোকা না যে, আপনার চালাকি ধরতে পারবে না। যা-হোক, সমকাল এ প্রতিবেদন প্রচার করে আমেরিকার দালালি করেনি। মানুষ ফিলিস্তিনের কান্না দেখে অভ্যস্ত, তারা ইসরায়েলের কান্নাও একটু দেখতে চায়। সমকাল সেই কাজটি করেছে। আপনি না বোঝার লোক নন, কিন্তু ওই যে মায়কান্না একটু দেখাতে হয়, বোকা মানুষকে ধোকা দেওয়ার জন্য। শাবাশ, চালিয়ে যান!'

মোরশেদুল ইসলাম নামের একজন ফারুক ওয়াসিফকে সমকাল সম্পর্কে মনে করিয়ে দিয়েছেন, 'আপনার সাবেক কর্মস্থল!' শুভ্র নীল লেখেন, 'মোল্লাদের সাথে তাল মেলাতেই হইলো, একটু পপুলিজম না করলে চেয়ারে টেকা বড় মুশকিল!' মাহমুদুল হাসান মন্তব্য করেন, 'মানে কোনো ইজরায়েলি মানুষের অভিজ্ঞতা ছাপানো যাবে না?'

বিশেষজ্ঞদের মতে, কাউকে 'গালি' দেওয়া যাবে কী যাবে না, দেশের আইনে এ বিষয়ে সরাসরি কিছু বলা নেই। তবে কেউ মানহানিকর শব্দ ব্যবহার করলে তার বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করা যায়। কোন ধরনের বক্তব্য মানহানিকর, আইনে তা খুব সীমিতভাবে বলা আছে। এক্ষেত্রে কোন শব্দটা মানহানিকর, তা সমাজের প্রথা হিসাবে ধরে নিতে হয়। তবে আইনে কাউকে গালি দেওয়ার অধিকার নেই। গালি দিয়ে অপমান করা আইনের চোখে শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

গালি দেওয়াকে কোনোভাবেই মতপ্রকাশের স্বাধীনতা বলা যায় না। কারণ, গালি কোনো স্বাভাবিক কথোপকথন নয়। মতপ্রকাশ মানে কোনো বিষয়ের ওপর মতামত প্রকাশ করা। গালি সাধারণত ব্যক্তিকে উদ্দেশ্য করে বলা হয়। গালি কোনো মত নয়। গালি হলো এমন শব্দ, যা দিয়ে আরেকজনকে আহত, অপমান ও তুচ্ছতাচ্ছিল্য করা হয়।

এইচ.এস/

ফারুক ওয়াসিফ

সুখবর এর নিউজ পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

খবরটি শেয়ার করুন