ছবি: সংগৃহীত
আমরা বাড়ির সামনের বাগান, বারান্দা বা ছাদে শখ করে নানা রকমের গাছ লাগিয়ে থাকি। কিন্তু সেই শখের গাছের পাতাগুলো যখন হলুদ হয়ে ঝরে পড়তে থাকে তখন অনেকেই বুঝতে পারি না এর কারণ। গাছের পাতা হলুদ হওয়ার জন্য শুধু একটি নয় অনেক কারণ আছে। এক এক গাছের পাতা এক এক কারণে হলুদ হয়ে যায়। তবে মনে রাখতে হবে পাতার বয়স হয়ে গেলে পাতা হলুদ হয়ে স্বাভাবিক ভাবেই ঝরে পরে। এটা পুরোপুরি প্রাকৃতিক। এছাড়া যেসব কারণে গাছের পাতা হলুদ হতে পারে সেগুলো হলো:
১. পানি কম /বেশি হলে
২. পোকামাকড় আক্রমণ করলে
৩. পটাশিয়ামের অভাবে
৪. সার কম /বেশি হলে
৫. মাটিতে অক্সিজেনের পরিমাণ কমে গেলে
৬. গাছ নতুন টবে বসানোর সময় কম্পোষ্ট সার না দেওয়া
৭. ক্লোরফিলের অভাবে
৮.ঋতু পরিবর্তন হলে
পানি কম /বেশি হলে: গাছে প্রয়োজনের বেশি বা কম পানি দিলে গাছের পাতা হলুদ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। যদি গাছে কম পানি দেয়া হয় তাহলে পাতা হলুদ হয়ে শুকিয়ে যাবে। পরীক্ষা করে দেখুন টবের মাটিতে কী পরিমাণে পানি আছে। মাটিতে একটি আঙুল ঢুকিয়ে দিন। এক ইঞ্চি গভীর পর্যন্ত যদি মাটি শুকনো থাকে, তাহলে বুঝতে হবে পানির অভাবে অসুস্থ হয়ে গেছে গাছটি। আবার গাছে মাত্রাতিরিক্ত পানি দিলে পাতা একটু ঘষলেই স্যাতসেতে ভাব বুঝা যাবে। সেক্ষেত্রে শিকড় পচে গেছে কিনা বা পচা গন্ধ আসছে কিনা, তা পরীক্ষা করে দেখুন।
পটাশিয়ামের অভাব: অনেক সময় দেখা যায় গাছের উপরের দিকের পাতা সবুজ থাকলেও নিচের দিকের পাতা হলুদ হয়ে যায়। অথবা গাছের পাতার চারিপাশ হলুদ কিন্তু মাঝের দিকটা সবুজ। এই রকম অবস্থা হলে বুঝতে হবে গাছে পটাশিয়ামের অভাব হয়েছে। এই অবস্থায় কলার খোসা রোদে শুকিয়ে ব্লেন্ড করে গাছের গোড়ায় দিতে হবে। অথবা গাছের মাটিতে এক চিমটি পটাশিয়াম সার ব্যবহার করতে হবে।
ঋতু পরিবর্তন হলে: অনেক সময় ঋতু পরিবর্তন হলে যেমন গরম থেকে ঠান্ডা বা ঠান্ডা থেকে গরম অথবা বর্ষাকালেও গাছের পাতা হলুদ হতে দেখা যায়। এগুলো স্বাভাবিক ঘটনা। এই সময়গুলোতে গাছের পাতা হলুদ হয়ে যেতে পারে যা প্রাকৃতিক ঘটনা। কিন্তু পাতা বেশি দিন ধরে হলুদ থাকলে বা ঝরে পড়লে অবশ্যই কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরি। আবার টবের গাছগুলো বেশিরভাগ সময়েই শীত সহ্য করতে পারে না। আপনি যদি নিয়মিত এসি ছেড়ে রাখেন এবং গাছটিও এসির বাতাসেই থাকে, তাহলে গাছ হলুদ হয়ে যেতে পারে।
পোকামাকড় আক্রমণ করলে: অনেক সময় পোকামাকড় আক্রমণ করলে পাতা হলুদ হতে দেখা যায়। মিলিবাগ বা স্পাইডার মাইটের মতো বালাই গাছে আক্রমণ করছে কিনা দেখুন। এর জন্য প্রয়োজন মত পোকা নিধনের ব্যবস্থা নিতে হবে। সুবিধামত পেস্টিসাইড স্প্রে করে দিতে হবে। এগুলো খালি চোখে ধরা নাও পড়তে পারে। তবে এদের কারণে পাতায় ছোট ছোট ফুটো দেখা যায় বা মোমের মত সাদা একটি প্রলেপ পড়তে পারে। এর হাত থেকে গাছ বাঁচাতে চাইলে ভালো করে পানি দিয়ে গাছ ধুয়ে নিন। আক্রান্ত পাতা ছেঁটে ফেলুন।
ক্লোরফিলের অভাব: গাছের পাতায় ম্যাগনেসিয়ামের অভাব হলে ক্লোরফিলের ঘাটতি দেখা যায়। ফলে গাছের পাতা হলুদাভ হয়ে যায় (পুরো ফ্যাকাসে হয়ে যায় )। এরকম সমস্যা হলে গাছ পর্যাপ্ত খাদ্য তৈরি করতে পারে না ফলে গাছে ফুল ফল সময়মতো আসতে বিঘ্ন দেখা দেয়। তাই এই অবস্থায় গাছে ইপসম সল্ট (যা বাজারে ম্যাগ সল্ট নামেও পরিচিত) ব্যবহার করতে হবে। ইপসম সল্ট যা ১ লিটার পানিতে ১ থেকে ২ গ্রাম মিশিয়ে ১৫ থেকে ২০ দিন পর পর গাছের পাতায় স্প্রে করতে হবে।
সার কম /বেশি হলে: রাসায়নিক সার মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে পাতা হলুদ হয়ে জ্বলে যাবে। এই অবস্থায় তাই প্রচুর পানি ব্যবহার করা লাগবে যাতে পানিতে এই রাসায়নিক সার ধুয়ে যায়। তাহলে গাছটা বাঁচানো সম্ভব হবে। আবার সার কম হলে পাতা হলুদ হয়ে ঝরে পড়ে যাবে। এর জন্য গাছ লাগানোর সময় প্রয়োজন মত এনপিকে সার ব্যবহার করতে হবে।
আরো পড়ুন: বরবটির মতো ৮-১০ইঞ্চি লম্বা কাঁচা মরিচ
মাটিতে অক্সিজেনের পরিমাণ কমে গেলে: মাটিতে অক্সিজেনের ঘাটতি হলেও গাছের পাতা হলুদ হতে পারে। তখন গাছের টবের মাটিতে দুই পাশে ২/৩ টি পেরেক পুতে দিতে হবে। পেরেক যেহেতু লোহা দিয়ে তৈরি তাই লোহায় মরিচা ধরার জন্য বাতাসের অক্সিজেন দরকার। মরিচা প্রধানত ফেরিক অক্সাইড তাই এই মরিচা তৈরি হলে তখন মাটিতে প্রয়োজনীয় অক্সিজেন সরবরাহ করতে পারবে।
গাছ নতুন টবে বসানোর সময় কম্পোষ্ট সার না দেওয়া: নতুন গাছের চারা লাগানোর সময় যে মাটি তৈরি করা হয় তখন ভার্মিকম্পোস্ট বা গোবর সার না দিলেও গাছের পাতা হলুদ হয়ে যায়। আর প্রতি ২ থেকে ৩ মাস পর পর গাছে এসব কম্পোস্ট সার দিয়ে মাটি খুচিয়ে দিতে হবে। এতে গাছ প্রয়োজন মত নিয়মিত খাদ্য পাবে।
এছাড়া পর্যাপ্ত আলোর অভাবে গাছের পাতা হলুদ হতে পারে। সেক্ষেত্রে গাছকে পর্যাপ্ত আলো পাওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। গাছের পুরনো পাতা যদি হলুদ হয়ে যায় এবং নতুন পাতা খুব হালকা হলুদ হয়, তাহলে এটা নাইট্রোজেনের অভাব হতে পারে। এক্ষেত্রে ইউরিয়া বা অন্য কোনো নাইট্রোজেন-সমৃদ্ধ সার দিতে পারেন। তবে অবশ্যই পরিমিত পরিমাণে সার দেবেন। অতিরিক্ত সার দিলে গাছ মরেও যেতে পারে।
এসি/ আই.কে.জে/