বাংলাদেশের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পটপরিবর্তন, ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থান, শেখ হাসিনা সরকারের পতন এবং বর্তমান শাসকদের ভবিষ্যৎ নিয়ে গাজী টেলিভিশনের টকশোতে হয় আলোচনা। এতে অংশ নিয়ে সাবেক সংসদ সদস্য ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক গোলাম মাওলা রনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগের আর ফিরে আসার কোনো সম্ভাবনা নেই।’ তিনি মনে করেন, আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব দুর্বল হয়ে পড়েছে, অনেক নেতা পালিয়ে গেছেন, অর্থনীতি হুমকির মুখে এবং সমাজে এক ধরনের শূন্যতার সৃষ্টি হয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার (১৪ই আগস্ট) ওই টকশোর একটি খণ্ড ভিডিও টেলিভিশনটির নিজস্ব ইউটিউব চ্যানেলে প্রচার করা হয়, যা আজ শনিবার (১৬ই আগস্ট) বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত প্রায় ৩৫,০০০ বার দেখা হয়েছে।
রাজনৈতিক অতীত ও অবস্থান পরিবর্তন
গোলাম মাওলা রনি বলেন, তিনি একসময় আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন, কিন্তু পরবর্তীতে বিএনপিতে যোগ দেন একটি নির্দিষ্ট নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য। এই পরিবর্তনটি ছিল ‘এক্সিডেন্টাল’ অর্থাৎ হঠাৎ ঘটে যাওয়া ঘটনা, এর পেছনে কোনো লোভ-লালসা বা সুপরিকল্পিত অভিপ্রায় ছিল না বলেই জানান তিনি।
তিনি বলেন, ‘আমার ২০১৪ সাল থেকেই একটি চেষ্টার জায়গা ছিল যে, শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন রেজিমের পরিবর্তন হওয়া উচিত। ২০১৯ সালে আমি তারেক রহমান সাহেবকে বলেছিলাম, এবারই আমার শেষ প্রচেষ্টা—এরপর আর আপনার মনোনয়ন চাইবো না।’
আওয়ামী লীগ প্রসঙ্গে কঠোর মন্তব্য
গোলাম মাওলা রনি দৃঢ়ভাবে বলেন, ‘বর্তমান প্রেক্ষাপটে আওয়ামী লীগের আর ফিরে আসার কোনো সম্ভাবনা নেই। এটি অন্তর থেকে বলছি। ইতিহাসেও এমন নজির নেই যে, একবার পতনের পর ফ্যাসিবাদী শক্তি আবার ফিরে এসেছে।’
তিনি দাবি করেন, দেশে থাকা আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা ‘মোরাল ক্যারেজ’ হারিয়ে ফেলেছেন, আর যারা বিদেশে পালিয়ে গেছেন, তারা ফিরতে সাহস করবেন না। এমনকি তাদের নিরাপত্তা দিয়ে ফিরিয়ে আনলেও তারা আসবেন না বলেই মন্তব্য করেন রনি।
একপর্যায়ে তিনি বলেন, ‘যদি ইউনূস (প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস) সাহেব, তারেক রহমান বা জামায়াতের আমিরও বলেন—আপনারা আসুন, আমরা আপনাদের এয়ারপোর্ট থেকে রিসিভ করব, তারপর বাসায় পৌঁছে দেব—তবু কেউ আসবেন না। কারণ বাস্তবতা এমনই।’
সমসাময়িক শূন্যতা ও সংকট
রনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীর সাহস হারিয়ে ফেলেছেন এবং নেতৃত্বের একটি অংশ বিদেশে পালিয়ে গেছে। তাদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত প্রায় ৬০ শতাংশ জিডিপি ‘ধুকধুক করছে’, ফলে রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক কাঠামোর ভেতরে ও বাইরে একটি শূন্যতা তৈরি হয়েছে। এই শূন্যতা পূরণে দেশের অভ্যন্তরে যথেষ্ট দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা নেই বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘আমরা কল্পনাও করিনি শেখ হাসিনা পালিয়ে যাবেন। এই পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য আমরা প্রস্তুত ছিলাম না।’
বিনয়ী অথচ জোরালো অবস্থান
নিজের বর্তমান অবস্থান সম্পর্কে গোলাম মাওলা রনি জানান, তার কোনো রাজনৈতিক অভিলাষ নেই। তিনি বলেন, ‘আমি সম্মানজনকভাবে বাঁচতে চাই, সম্মানজনকভাবে মরতে চাই। এর বেশি আমার চাওয়া-পাওয়া নেই।’
তিনি লেখালেখি ও টকশোতে অংশগ্রহণকে পেশাগত ব্যস্ততা হিসেবেই দেখেন এবং বলেন, ‘সন্ধ্যা হলেই শরীর চুলকাতে থাকে, কখন কোন টেলিভিশন থেকে ডাকবে।’ তিনি জানান, এই কার্যক্রমের পেছনে ব্যক্তিগত কোনো স্বার্থ নেই, বরং দেশ ও সমাজের কল্যাণের জন্যই তিনি কথা বলেন।
খবরটি শেয়ার করুন