ছবি: সংগৃহীত
মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় ১৯৭১ সালের ১০ই এপ্রিল গঠিত মুজিবনগর সরকারের সদস্যরা ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা’ হিসেবে বিবেচিত হবেন। অন্যদিকে মুজিবনগর সরকার গঠনে যারা সহযোগিতা করেছেন, তারা হবেন ‘মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী’।
জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (জামুকা) অধ্যাদেশে বীর মুক্তিযোদ্ধার এ সংজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার (৩রা জুন) রাতে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় অধ্যাদেশটি জারি করে।
১৯৭১ সালের ১৭ই এপ্রিল স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সরকার (মুজিবনগর সরকার) শপথ গ্রহণ করে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করা হয়। উপরাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম।
শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানের কারাগারে বন্দী থাকায় সৈয়দ নজরুল ইসলাম ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেন। প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ। অর্থমন্ত্রী এম মনসুর আলী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ এম কামরুজ্জামান ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী খন্দকার মোশতাক আহমদ।
নতুন অধ্যাদেশে শেখ মুজিবুর রহমানসহ জাতীয় চার নেতা ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা’ হিসেবে বিবেচিত হবেন বলে জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক ই আজম। তিনি বলেন, মুজিবনগর সরকারের যারা ছিলেন, তারা সবাই মুক্তিযোদ্ধা। তবে মুজিবনগর সরকারের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ‘মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী’ হিসেবে বিবেচিত হবেন।
ফারুক ই আজম বলেন, মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা যাচাইবাছাই করতে গিয়ে দেখা যায়, মুজিবনগর সরকারের কিছু কর্মচারী ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা’ হিসেবে গণ্য হচ্ছেন। এখন থেকে তারা হবেন ‘মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী’।
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা বলেন, এ অধ্যাদেশের মাধ্যমে কাউকে বাতিল করা হয়নি। শুধু সংজ্ঞায় পরিবর্তন আনা হয়েছে। যিনি যে সুবিধা পাচ্ছেন, তিনি সেই সুবিধা পাবেন। শুধু যারা সরাসরি রণাঙ্গনে যুদ্ধ করেছেন, তারা ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা’ হবেন। অন্যরা হবেন ‘মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী’।
সংশোধিত অধ্যাদেশে ‘মুক্তিযুদ্ধের সহযোগীদের’ জন্য পাঁচটি শ্রেণি ঠিক করা হয়েছে। প্রথমত, যেসব বাংলাদেশি পেশাজীবী মুক্তিযুদ্ধের সময় বিদেশে অবস্থানকালে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে বিশেষ অবদান রেখেছিলেন এবং যেসব বাংলাদেশি বিশ্বজনমত গঠনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছিলেন।
দ্বিতীয়ত, যেসব ব্যক্তি মুক্তিযুদ্ধের সময় গঠিত বাংলাদেশ সরকারের (মুজিবনগর সরকার) অধীন কর্মকর্তা বা কর্মচারী বা দূত, মুজিবনগর সরকারের নিয়োগপ্রাপ্ত চিকিৎসক, নার্স ও অন্যান্য সহকারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন।
তৃতীয়ত, মুক্তিযুদ্ধের সময় গঠিত বাংলাদেশ সরকারের (মুজিবনগর সরকার) সঙ্গে সম্পৃক্ত সব এমএনএ (জাতীয় পরিষদের সদস্য) বা এমপিএ (প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য), যারা পরবর্তী সময়ে গণপরিষদের সদস্য হিসেবে গণ্য হয়েছিলেন।
চতুর্থত, স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্রের সব শিল্পী ও কলাকুশলী এবং দেশ ও দেশের বাইরে মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষে দায়িত্ব পালনকারী সব বাংলাদেশি সাংবাদিক। পঞ্চমত, স্বাধীন বাংলা ফুটবল দল।
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের ২১ জন সদস্য এত দিন বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে বিবেচিত হতেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে মোহাম্মদ জাকারিয়া পিন্টু, কাজী সালাহউদ্দিন, এনায়েতুর রহমান খান। এখন থেকে তারা ‘মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী’ হিসেবে বিবেচিত হবেন।
এইচ.এস/
খবরটি শেয়ার করুন