সোমবার, ৬ই অক্টোবর ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
২১শে আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সর্বশেষ

*** বিএনপি এককভাবে ক্ষমতায় গেলে চাঁদাবাজি বাড়বে: চরমোনাই পীর *** ফানুস উৎসবে বর্ণিল চট্টগ্রামের আকাশ *** এখন থেকে যেকোনো ভিসা নিয়ে ওমরাহ পালন করা যাবে: সৌদি আরব *** মেডিকেলে ভর্তি পরীক্ষা ১২ই ডিসেম্বর *** বুলবুলই ফের বিসিবির সভাপতি, সহসভাপতি পদে চমক *** ইতিহাস গড়ে সোনার ভরি দুই লাখের ওপরে *** বিএনপির সরকার ভারতের সঙ্গে ‘সবার আগে বাংলাদেশ’ পররাষ্ট্রনীতি অনুসরণ করবে *** বিএনপি ক্ষমতায় গেলে নোয়াখালীকে বিভাগ করা হবে: বরকতউল্লা *** অগ্নিকাণ্ডে ফায়ার সার্ভিস কর্মী নুরুলের মৃত্যুর ১২ দিন পর সন্তান জন্ম দিলেন স্ত্রী *** সৌদি আরবে বাংলাদেশি সাধারণ শ্রমিক নিয়োগে ‘মাইলফলক’ চুক্তি

নারীরা জীবন দিয়ে মা হন যে দেশে

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

🕒 প্রকাশ: ০৬:০৫ অপরাহ্ন, ৩রা জুন ২০২৫

#

ছবি: সংগৃহীত

সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে প্রায় মৃত্যুর মুখোমুখি হয়েছিলেন নাফি সালাহু। তখন তার বয়স ২৪ বছর। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসিকে সেই ভয়ংকর অভিজ্ঞতার কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘আমি প্রায় মরতে বসেছিলাম। শরীরে এক ফোঁটা শক্তি ছিল না!’

তিনি যখন প্রসব যন্ত্রণায় ছটফট করছিলেন, ঠিক তখন নাইজেরিয়ায় চলছিল চিকিৎসকদের ধর্মঘট। ফলে সন্তান প্রসবে মেডিকেল সহায়তা পাওয়া ছিল প্রায় অসম্ভব। নাফিসা জানান, প্রায় তিন দিন অবর্ণনীয় যন্ত্রণা তিনি সয়েছেন। প্রসবপথে আটকে গিয়েছিল সন্তানের মাথা। সেভাবেই কোনো ধরনের অস্ত্রোপচার কিংবা ওষুধ ছাড়া পড়ে থাকতে হয়েছে তাকে। তিনদিন পর এক চিকিৎসককে খুঁজে পাওয়া যায়, যিনি সি সেকশন করতে রাজি হন। নাফিসা সে যাত্রায় বেঁচে গেলেও মৃত্যু সন্তানটি বাঁচেনি!

নাফিসা বলেন, ‘এ ঘটনার ১২ বছর পর আমি মা হয়েছি। কয়েকবার সন্তান হয়েছে। কিন্তু প্রতিবারই নিজেকে নিয়তির হাতে সঁপে দিয়ে হাসপাতালে গিয়েছি। জানতাম, আমি জীবন-মৃত্যুর মাঝখানে দাঁড়িয়ে আছি, কিন্তু তখন আর ভয় লাগত না। প্রথম ডেলিভারির সময় যা সয়েছি এরপর আর কত কষ্টই হতে পারে আমার!’

জরিপ বলছে, নাইজেরিয়ায় প্রতি সাত মিনিটে গড়ে একজন নারী সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে মারা যান। সন্তান জন্মদানের জন্য নাইজেরিয়াকে বিশ্বের সবচেয়ে বিপজ্জনক দেশ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। 

জাতিসংঘের সর্বশেষ (২০২৩ সালের) তথ্য অনুযায়ী, নাইজেরিয়ায় প্রতি ১০০ জন প্রসূতির মধ্যে একজন মারা যান প্রসবকালে বা এর পরপরই। ২০২৩ সালে বিশ্বের মোট মাতৃমৃত্যুর প্রায় ২৯ শতাংশই ঘটেছে নাইজেরিয়ায়। সংখ্যায় তা প্রায় ৭৫ হাজার।

পাঁচ বছর আগে হাসপাতালেই সন্তান জন্ম দেওয়ার পর অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে মারা যান চিনেনে এনওয়েজি। অনেকের জন্য সবচেয়ে যন্ত্রণার বিষয় হলো—এ ধরনের বহু মৃত্যু—বিশেষ করে প্রসব পরবর্তী রক্তপাতের মতো কারণে হওয়া মৃত্যুগুলো প্রতিরোধযোগ্য। ৩৬ বছর বয়সী এনওয়েজি দক্ষিণ-পূর্ব নাইজেরিয়ার ওনিৎশা শহরের একটি হাসপাতালে মারা যান। 

তার ভাই হেনরি আদেহ বলেন, ‘ডাক্তাররা রক্ত চাচ্ছিলেন, কিন্তু যতটুকু জোগাড় করা সম্ভব হয়েছিল, তা যথেষ্ট ছিল না। রক্ত জোগাড় করতে আমরা সবাই ছোটাছুটি করছিলাম। বোনকে হারিয়ে আমি আমার সবচেয়ে কাছের বন্ধুকে হারিয়েছি। আমার শত্রুরও যেন এ যন্ত্রণা সহ্য করতে না হয়। এটা সহ্য করার মতো নয়, মেনে নেওয়ার মতো নয়!’

মাতৃমৃত্যুর আরও কিছু সাধারণ কারণ হলো প্রসবকালে জটিলতা, উচ্চ রক্তচাপ ও অনিরাপদ গর্ভপাত। ইউনিসেফ নাইজেরিয়া অফিসের কর্মকর্তা মার্টিন ডলস্টেন বলেন, এ ‘অত্যন্ত উচ্চ’ মাতৃমৃত্যু হার একাধিক জটিল কারণের ফল। এর মধ্যে রয়েছে—দুর্বল স্বাস্থ্য অবকাঠামো, চিকিৎসকের অভাব, ব্যয়বহুল চিকিৎসা, কুসংস্কার এবং নিরাপত্তাহীনতা।

উইমেন অব পারপাস ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশনের জাতীয় সমন্বয়কারী মাবেল অনউয়েমেনা বলেন, ‘সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে মৃত্যু—কোনো নারীরই ভাগ্য হতে পারে না। কিন্তু নাইজেরিয়ার গ্রামাঞ্চলের নারীরা এখনো অনেক কুসংস্কারে বিশ্বাস করেন। তাদের ধারণা হাসপাতালে যাওয়ার অর্থ সময়ের অপচয়। তারা গাছগাছড়া ও ঐতিহ্যবাহী প্রাচীন পদ্ধতির ওপর ভরসা করেন। যে কারণে জরুরি চিকিৎসা বিলম্বিত হয়ে পরিস্থিতি হাতের নাগালের বাইরে চলে যায়।’

এইচ.এস/

নাইজেরিয়া

সুখবর এর নিউজ পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

খবরটি শেয়ার করুন

Footer Up 970x250