রাশিয়ার হয়ে ইউক্রেন যুদ্ধে নিহত রাজবাড়ীর অবসরপ্রাপ্ত সেনাসদস্য নজরুল ইসলাম (ডানে)। ছবি: সংগৃহীত
রাশিয়ায় গিয়ে ইউক্রেনের সঙ্গে যুদ্ধে প্রাণ হারিয়েছেন রাজবাড়ীর নজরুল ইসলাম (৪৭)। তিনি ২০২০ সালে সেনাবাহিনী থেকে অবসর নিয়েছিলেন বলে তার স্বজনেরা জানিয়েছেন।
নজরুল রাশিয়ায় গিয়ে দীর্ঘ পাঁচ মাস ধরে নিখোঁজ ছিলেন। অবশেষে গতকাল বৃহস্পতিবার (৯ই অক্টোবর) বিকেলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে পরিবারের কাছে খবর আসে, তিনি পাঁচ মাস আগে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে অংশ নিয়ে মারা গেছেন। নজরুল ইসলাম রাজবাড়ী সদর উপজেলার রামকান্তপুর ইউনিয়নের চরপাড়া গ্রামের হাতেম আলী ফকিরের ছেলে।
নজরুলের বড় ভাই অবসরপ্রাপ্ত সার্জেন্ট আব্দুর রহিম জানান, তার ভাই নজরুল ইসলাম সেনাবাহিনীর ল্যান্স করপোরাল পদে কর্মরত ছিলেন। ২০২০ সালে অবসরে যান। চাকরি থেকে অবসরের পর বাড়িতে এসে রাজবাড়ীর শ্রীপুর বাজারে মুদি ব্যবসা শুরু করেন। কয়েক বছর পর ব্যবসায় লোকসান হওয়ায় আর্থিক সংকটে পড়েন নজরুল।
তিনি বলেন, সে সময় স্থানীয় এক দালাল ফরিদ হোসেনের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। ফরিদ তাকে রাশিয়ায় শপিং মলে নিরাপত্তাকর্মীর চাকরির কথা বলেন। চলতি বছরের ২৮শে ফেব্রুয়ারি নজরুল রাশিয়ায় যান। সেখানে পৌঁছানোর পর এক মাসের সামরিক প্রশিক্ষণ নিতে তাকে বাধ্য করা হয়।
তিনি বলেন, প্রশিক্ষণ শেষে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধক্ষেত্রে পাঠানো হয় তাকে। সে সময় নিয়মিত তার সঙ্গে কথা বলতেন।
আব্দুর রহিম আরও বলেন, ‘নজরুল তার স্ত্রীকে মাঝেমধ্যে বলতেন, 'এখান থেকে ফিরে আসার আমার কোনো পথ নেই। কখনো আমার ফোন বন্ধ পেলে ধরে নিবা আমি মারা গেছি।' পরিবারের সঙ্গে তার সর্বশেষ কথা হয় ৩০শে এপ্রিল। সে দিন নজরুল তার স্ত্রীকে বলছিলেন, তিনি ব্যাংকে যাচ্ছেন টাকা পাঠাতে। কিছুক্ষণ পর ফোন করে বলেন, 'টাকা পাঠানো হলো না, দ্রুত যেতে হচ্ছে।' এর পর থেকে তার আর কোনো খোঁজ মেলেনি।
নজরুলের স্ত্রী আইরিন আক্তার বলেন, আমার স্বামী চাকরি থেকে অবসরের পর বাড়িতে থাকতেন। ব্যবসায় লোকসান হওয়ায় ফরিদ নামের এক দালালের মাধ্যমে রাশিয়ায় যান তিনি। আমি বারবার নিষেধ করেছিলাম। বলেছিলাম, সন্তানদের নিয়ে আমরা একসঙ্গে থাকব।
তিনি বলেন, 'কিন্তু তিনি রাশিয়ায় ভালো চাকরি করতে গেলেন, নিরাপত্তা প্রহরীর কাজ। এখন তার মৃত্যুর খবর পেলাম। আমি চার মেয়েকে নিয়ে কীভাবে বাঁচব? আমার এখন একটাই চাওয়া, আমার স্বামীর লাশ অন্তত আমার কাছে এনে দিক সরকার। শেষবার আমি একটু আমার স্বামীকে দেখতে চাই।’
অভিযোগের বিষয়ে ফরিদের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে বলেন, ‘আমি নজরুলকে রাশিয়ায় পাঠাইনি। তিনি বিকন ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলস এজেন্সির মাধ্যমে গেছেন। আমি শুধু যোগাযোগ করিয়ে দিয়েছি। তিনি (নজরুল) সব জেনে-শুনেই রাশিয়ান সেনাবাহিনীর লজিস্টিক হ্যান্ড হিসেবে গেছেন। নো অবজেকশন সার্টিফিকেটে (অনাপত্তি সনদে) স্বাক্ষরও করে গেছেন। আমি গত রাতে শুনেছি, মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়েছে–নজরুল মারা গেছেন। এখানে আমার দোষ দিয়ে লাভ কী।’
এ বিষয়ে রাজবাড়ী সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মারিয়া হক বলেন, ‘বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
জে.এস/
খবরটি শেয়ার করুন