সোমবার, ৮ই জুলাই ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
২৪শে আষাঢ় ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

যেভাবে বিকশিত হলো বাংলাদেশের চলচ্চিত্র

বিনোদন ডেস্ক

🕒 প্রকাশ: ০৫:৩৮ অপরাহ্ন, ২৩শে জুন ২০২৪

#

ছবি: সংগৃহীত

চলচ্চিত্র এক প্রকারের দৃশ্যমান বিনোদন মাধ্যম। চলমান চিত্র তথা ‘মোশন পিকচার’ থেকে চলচ্চিত্র শব্দটি এসেছে। এটি একটি বিশেষ শিল্প মাধ্যম। বাস্তব জগতের চলমান ছবি ক্যামেরার মাধ্যমে ধারণ করে বা এনিমেশনের মাধ্যমে কাল্পনিক জগৎ তৈরি করে চলচ্চিত্র নির্মাণ করা হয়।

চলচ্চিত্রের ইতিহাস ঠিক কবে থেকে শুরু তা সঠিকভাবে নির্ণয় করা যায়নি। ১৮৯৫ সালের ২৮শে ডিসেম্বর প্যারিস শহরে লুমিয়ের ভ্রাতৃদ্বয় তাদের তৈরি দশটি ছোট ছোট চলচ্চিত্র প্রথমবারের জন্য বাণিজ্যিকভাবে প্রদর্শন করেন। চলমান ছবিকে প্রজেকশন বা অভিক্ষেপণের মাধ্যমে প্রথম সফলভাবে প্রদর্শনের নিদর্শন হিসাবে এই তারিখটিকেই গণ্য করা হয়। 

তারপর সেই ধারাবাহিকতায় ভারতীয় উপমহাদেশে কলকাতার ব্রাটকপ বায়োস্কপ কোম্পানি কলকাতায় এবং ঢাকায় ক্রাউন থিয়েটারে প্রথম বায়োস্কপ শো শুরু করে। তারই ধারাবাহিকতায় সে সময় ঢাকার আশেপাশের কিছু জেলা শহরে বায়োস্কপ শো এর আয়োজন করা হতো। তবে সে সময় ছোট ছোট কিছু নির্বাক তথ্যচিত্র দেখানো হতো।


গোড়ার দিকের চলচ্চিত্র ছিল সাদা-কালোয় তোলা, দৈর্ঘ্য ছিল এক মিনিটেরও কম, আর ছিল নির্বাক। ১৮৯০ সাল থেকেই একাধিক শট সংবলিত, বেশ কয়েক মিনিট দৈর্ঘ্যের ছবি তৈরি হতে থাকে। ১৮৯৮ সালে তৈরি হয় প্রথম ঘূর্ণায়মান ক্যামেরা যা দিয়ে প্যানিং শট নেওয়া সম্ভব ছিল। ১৮৯৭ সালেই প্রথম ফিল্ম ষ্টুডিও তৈরি হয়ে যায়। ১৯০০ সাল থেকেই কন্টিন্যুইটির মাধ্যমে ধারাবাহিকতা রক্ষা এবং ক্লোজ-আপ শটের ব্যবহার শুরু হয়। 

বাংলা সিনেমার সূচনা হয়েছে যার হাত ধরে :

হীরালাল সেন ছিলেন ভারতীয় উপমহাদেশের প্রথম চলচিত্র পরিচালক। জম্ম ১৮৬৬ সালে বাংলাদেশের মানিকগঞ্জ জেলার বকঝুরি গ্রামে। তার বাবা চন্দ্রমোহন সেন ছিলেন আইনজীবী।

বাংলাদেশের প্রথম সিনেমা :

১৯১৩-১৪ সালে পিকচার হাউস নামে একটি প্রোডাকশন হাউস প্রতিষ্ঠিত হয়। তারপর ১৯২৮ সালে ঢাকার নবাব পরিবারের প্রযোজনায় প্রথম নির্বাক স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘সুকুমারি’ তৈরি হয়, যার পরিচালক ছিলেন অম্ব্রুজ প্রসন্ন গুপ্ত।

সুকুমারির সাফল্যের পর নবাব পরিবার একটি বড় উদ্যোগ নেন পূর্ণদৈঘ্য চলচ্চিত্র নির্মাণের। তারই ধারাবাহিকতায় নবাববাড়ির বাগানে একটি অস্থায়ী স্টুডিও নির্মাণ করেন এবং ১৯৩১ অম্ব্রুজ প্রসন্ন গুপ্ত পরিচালিত The last kiss নামের একটি পূর্ণদৈর্ঘ্য নির্বাক চলচ্চিত্র নির্মাণ করা হয়, যা সে সময় ঢাকার মুকুল হলে প্রদর্শিত হয়।

চলচ্চিত্র নির্মাতারা ঢাকাকে চলচ্চিত্র শিল্পে অনন্য করে তুলতে তৈরি করেছিলেন ইস্ট বেঙ্গল সিনেমাটোগ্রাফ সোসাইটি এবং এটিই ছিল বাংলাদেশের প্রথম চলচ্চিত্রর প্রযোজনা সংস্থা। পরবর্তীতে ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের পর ১৯৫৬ সালে তৈরি হয় বাংলা সিনেমার ইতিহাসে সফল এবং সর্বপ্রথম পূর্ণদৈঘ্য ছায়াছবি মুখ ও মুখোশ।  পরিচালনা করেছিলেন আব্দুল জব্বার খান।

১৯৫৭ সালে ইস্ট পাকিস্তান ফিল্ম ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন প্রতিষ্ঠিত হয়, যার প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

তারই ধারাবাহিকতায় আরো কিছু চলচ্চিত্র নির্মাণ হয় যেমন : আসিয়া, আকাশ ও মাটি, রাজধানীর বুকে, আগুন নিয়ে খেলা।

১৯৬৭ সালে খান আতাউর রহমান সফল বাংলা সিনেমা “নবাব সিরাজউদ্দৌলা” নির্মাণ করেন, যেখানে অভিনয় করেছিলেন প্রখ্যাত অভিনেতা আনোয়ার হোসেন। এরপর থেকে বাংলা চলচ্চিত্রের সুদিন শুরু হয়।

পরবর্তীতে জহির বায়হান নির্মাণ করেন ১৯৫২ এর ভাষা আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে নির্মিত চলচ্চিত্র “জীবন থেকে নেয়া” যা আজও বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাসে একটি মাইলফলক হয়ে আছে। 

১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের পর জহির রায়হান মুক্তিযুদ্ধের গণহত্যা নিয়ে নির্মাণ করেন “Stop Genocide”.

স্বাধীনতা এবং পর্রবতী সময়ে বাংলাদেশের সিনেমা ইতিহাসের সর্বকালের সেরা কালজয়ী কিছু সিনেমা:

“তিতাস একটি নদীর নাম” -- ১৯৭৩ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত এ সিনেমাটি পরিচালনা করেন ঋত্বিক ঘটক। সিনেমার কাহিনী জেলেদের জীবন নিয়ে এগিয়ে চলে।

আরো পড়ুনএক নম্বরে ‘দুষ্টু কোকিল’!

“সীমানা পেরিয়ে” -- ১৯৭৭ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত এ সিনেমার পরিচালক ছিলেন বিখ্যাত চলচ্চিত্রকার আলমগীর কবির।

“ছুটির ঘণ্টা” -- ১৯৮০ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত একটি বাংলাদেশী শিশুতোষ চলচ্চিত্র। ছবিটি পরিচালনা করেছেন আজিজুর রহমান। সিনেমার কাহিনী শুরু হয় ঈদের স্কুল ছুটিতে ১২ বছরের একটি বালকের বাথরুমে আটকে পড়ার কাহিনী নিয়ে। বালকটি মুক্তির আশায় ১০দিন অমানবিক কষ্ট সহ্য করার পর কিভাবে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে এমনই একটি করুণ দৃশ্য তুলে ধরা হয়েছে এই ছবিতে।

“সাত ভাই চম্পা” -- ১৯৮৭ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত এ সিনেমাটি নির্মাণ করেন মিলন চৌধুরী। সাত ভাই চম্পা হলো বাংলাদেশের একটি জনপ্রিয় রুপকথার গল্প যা ঠাকুরমার ঝুলি নামক বই থেকে নেয়া।

“বেদের মেয়ে জোসনা” -- ১৯৮৯ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ছবিটি পরিচালনা করেন তোজাম্মেল হক বকুল। বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের ইতিহাসে সবচেয়ে ব্যাবসাসফল সিনেমা এটি, যা একসাথে ১২০০টি হলে মুক্তি পেয়েছিল। মাত্র ২০ লক্ষ টাকায় নির্মিত এ সিনেমাটি এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে ব্যবসাসফল সিনেমা। যা আয় করেছিল ২০ কোটি টাকা।


“চিত্রা নদীর পাড়ে” -- ১৯৯৯ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত এ সিনেমাটি নির্মাণ করেন তানভীর মোকাম্মেল। ১৯৪৭ সালের দেশভাগের সময়কে প্লট করে এ সিনেমাটি নির্মিত হয়েছে। ধর্মের পরিচয়ে বিভক্ত বিপুল মানুষের দেশবদল, আবেগ, আশা এবং অনিশ্চিয়তা তুলে ধরা হয়েছে এ সিনেমায়। 

“শ্রাবণ মেঘের দিন” -- ১৯৯৯ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত এ সিনেমাটি নির্মাণ করেন বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ। সিনেমাটি তারই লেখা শ্রাবণ মেঘের দিন উপন্যাস থেকে রচিত।

“মাটির ময়না” -- ২০০২ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত এ সিনেমাটি পরিচালনা করেন তারেক মাসুদ। এটি বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ সম্পর্কিত একটি চলচ্চিত্র।

স্বাধীনতার পর থেকে বাংলা চলচ্চিত্র এখন অনেক আধুনিক এবং এগিয়ে যাচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় যুগের সাথে তাল মিলিয়ে এখন বাংলা সিনেমার অনেক উন্নয়ন হয়েছে। বর্তমানে ইন্টারনেট শুধু তথ্য সমুদ্রই নয়, বিনোদনের সুবিশাল সংগ্রহ নিয়ে বেড়ে উঠছে এই ডিজিটাল দুনিয়া। আপনার ইচ্ছামাফিক যখন, যে কোনো দেশের যে কোনো সিনেমা দেখার সুযোগও তৈরি করেছে ইন্টারনেটের মুভি ক্লাব বা অ্যাপসগুলো।

এসি/  আই.কে.জে/

সিনেমা ইতিহাস

খবরটি শেয়ার করুন