শনিবার, ২রা আগস্ট ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
১৮ই শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সর্বশেষ

*** আমেরিকার বাজারে শুল্ক কমেছে, বাংলাদেশে স্বস্তি *** ফল দেখলেই বুঝবেন, কাজটা ঠিক হয়েছে কী না: খলিলুর রহমান *** ইনার হুইল ক্লাবের উদ্যোগে দরিদ্র ছাত্রীদের জরায়ুমুখের ক্যানসার প্রতিরোধে টিকা দান *** চোরা শিকার রুখতে গন্ডারের শিংয়ে তেজস্ক্রিয় পদার্থ! *** দ্বিজাতিতত্ত্বের কবর দিয়েই বাংলাদেশের জন্ম, এখানে সাম্প্রদায়িকতার জায়গা নেই: জেড আই খান পান্না *** বাংলাদেশের জন্য পাল্টা শুল্ক কমিয়ে ২০ শতাংশ করল আমেরিকা *** জিম্বাবুয়েকে বিধ্বস্ত করে ফাইনালে বাংলাদেশ *** মেসির কারণেই সেদিন চুপ ছিলেন উরুগুয়ের ফুটবলার *** সাংবাদিক হত্যা মামলার আসামি চেয়ারম্যান পদ ফিরে পাওয়ায় বকশীগঞ্জে বিক্ষোভ *** গুচ্ছভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে চূড়ান্ত ভর্তি শুরু ৩রা আগস্ট

গারো পাহাড়ে স্বপ্নের কফি চাষ

নিউজ ডেস্ক

🕒 প্রকাশ: ০৫:৫৯ অপরাহ্ন, ১৯শে সেপ্টেম্বর ২০২৪

#

ছবি: সংগৃহীত

শেরপুরের নালিতাবাড়ী গারো পাহাড়ে কফি চাষ করে নতুন স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে কৃষকরা। এই উপজেলাতে কৃষকরা কফি চাষ করে এখন স্বপ্ন দেখছেন জীবন বদলের।

আশা করা হচ্ছে কাঙ্ক্ষিত ফলন ও বাণিজ্যিক পথ সুগম হলে সুদিনের দুয়ার খুলে যাবে এ অঞ্চলের কৃষকদের। লক্ষ্য করা গেছে গত কয়েকমাস ধরে জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে কৃষকরা এসে চাড়া নিয়ে যাচ্ছেন বিনা মুল্যে।  

উপজেলা কৃষি অফিস, উদ্যোক্তা ও কৃষকরা জানান, পৃথিবীতে ৬০ প্রজাতির কফি থাকলেও বাণিজ্যিকভাবে দুই রকমের কফির চাষ রয়েছে। এই এলাকায় বাণিজ্যিকভাবে চাষের জন্য এরাবিকা ও রোবাস্টা জাতের কফি চাষ শুরু হয়েছে। রোবাস্টা জাতের কফি বাংলাদেশের আবহাওয়ায় বেশি উপযোগী। যে কারণে পাহাড়ী অঞ্চল আবহাওয়ায় এর সম্প্রসারণ সম্ভব।

কফির চারাগুলো দেখতে কিছুটা দেবদারু চারার মতো। মার্চ থেকে এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে প্রতিটি গাছে ফুল ধরা শুরু হয়।

মে থেকে জুন মাসের মধ্যে ফুল থেকে গুটি গুটি ফলে পরিণত হয়। আগস্ট মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যে ফল পরিপূর্ণতা লাভ করে। পরে এগুলো রোদে শুকিয়ে নিতে হয়। বাজারজাত ও কফি পান করার জন্য উপযোগী করতে মেশিনের মাধ্যমে কফিবীজ গুঁড়া করে নিতে হয়। আবার কফির বীজ থেকে চারা উৎপাদন করা যায়।

ফলন ভালো হলে এবং আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে গাছ প্রতি ৫-৭ কেজি কফি পাওয়া সম্ভব বলে জানা গেছে। প্রতি কেজি কফির দাম ৮০-১০০ টাকা। এবং প্রতি একরে ২৫০- ৩০০ টি গাছ লাগানো যায়। সেই হিসেব ধরেই বছরে ২০০ কফি গাছ থেকে এক হাজার ৬০০ কেজি পর্যন্ত কফি ফলন পাওয়া যায়। যার নূন্যতম বাজারমুল্য ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা।

বেসরকারী একটি কোম্পানীতে চাকুরীর সুবাদে বান্দরবন জেলায় প্রজেক্ট ইনচার্জ হিসেবে কর্মরত ছিলেন কৃষিবিদ সাজ্জাদ হোসেন তুলিপ। কর্মরত অবস্থায় রুমা উপজেলার ডার্জিলিং পাড়ায় কফি চাষ প্রথমে নজরে আসে। সেখান থেকেই কফিচাষ নিয়ে গবেষনা শুরু করেন কৃষিবিদ সাজ্জাদ হোসেন তুলিপ। 

২০২১ সালে লাল লিয়াং বং এর বাগান হতে ৫ কেজি কফি ক্রয়ে চারা উৎপাদন করেন। সেই চারা পরীক্ষামুলক  হালুয়াঘাট, ঝিনাইগাতী ও নালিতাবাড়ী উপজেলায় এবং বান্দরবনের কিছু চাষিদের মধ্যে বিতরন করেন। এরপর আবার ২০২২ সালে আরো কফি কিনে রোপন করে সেই চারা বিতরন করেন। সেই চারা গুলো থেকে পরিপুর্ণ ভাবে এখন ফল দেওয়া শুরু করেছে। ওই সব কফি সংগ্রহ করে অল্প কিছু ফল নিজস্ব মেশিনে রোস্টিং করে বাজার জাত করা হচ্ছে। বাংলাদেশে কৃষি চাষ সম্প্রসারণ ও বানিজ্যিক করনের লক্ষে এই অঞ্চলে গারো পাহাড়ে প্রচুর অব্যবহৃত জমিকে চাষের আওতায় আনতে আগামী দুই বছরে প্রায় দুই লাখ চারা বিনামুল্যে দেওয়ার পরিকল্পনার অংশ হিসেবে এই চাড়া দেওয়া হচ্ছে। এখন পর্যন্ত প্রায় ৬-৭ হাজার চারা বিতরণ করা হয়েছে।

এই চারা গুলো আগামী দুই বছরের মাথায় ফল দেওয়া শুরু করবে। এরমধ্যে কৃষকদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে চারা রোপন ও পরিচর্যা বিষয়ে অবহিত করা হচ্ছে। এবং সহায়ক একটি কফি চাষ বিষয়ক বই দিচ্ছেন কৃষকদের। এ ছাড়াও কফি চাষে বাড়তি কোন জমি লাগে না। বাড়ীর যে কোন বাগানে সাথী ফসল হিসেবে ছায়া যুক্ত যায়গায় চাষ করে বাড়তি আয় করছে। উৎপাদিত কফি বিক্রি করার জন্য কৃষকদের কোথাও যেতে হচ্ছেও না কারন সাজ্জাদ হোসেন তুলিপ ন্যায্যমূল্যে কফি চেরি নিজেই কিনে নিচ্ছেন। এতে কৃষকরা বাজারজাত করন ও সঠিক দাম পেয়ে খুশি। তিনি আশা করছেন দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রপ্তানী করবেন। 

আরও পড়ুন: অল্প খরচে বেশি লাভ : জয়পুরহাটে বেড়েছে করলা চাষ

হালুয়াঘাট কড়ইতলি গ্রামের কৃষক মনির হোসেন বলেন, অ্যারাবিকা ও রোবাস্টা জাতের চারশত কফির চারা রোপণ করেছি। এ বছর প্রায় ২৫০ টি গাছে কফি ফল এসেছে। আশা করছি প্রতিটি গাছ থেকে দুই থেকে তিন কেজি কফি বিক্রি করতে পারবো।

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মো. মওদুদ আহাম্মেদ বলেন, উপজেলার পাহাড়ী এলাকার মাটিতে উর্বরতা শক্তি কফি চাষের উপযোগী। বৃষ্টিপাত ও মাটির গঠন বিন্যাস মিলে কফি চাষের উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে। উদ্যোক্তার সাথেও আমাদের যোগাযোগ আছে। আমরা এ ব্যাপারে কৃষকদের সার্বিক পরামর্শ ও সহযোগিতা করে যাচ্ছি।

এসি/কেবি

কফি চাষ গারো পাহাড়

সুখবর এর নিউজ পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

খবরটি শেয়ার করুন