সোমবার, ৯ই জুন ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
২৬শে জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সর্বশেষ

*** ভারতের সঙ্গে সমঝোতার জন্য আন্তর্জাতিক ‘হস্তক্ষেপ’ চায় পাকিস্তান *** এবার বাড়ির একাংশ বিক্রির চেষ্টা ভাইয়ের—বাধা দিল সু চি’র আইনি দল *** ইউনূসকে লেখা চিঠিতে যা বলেছেন টিউলিপ *** মোদি-ইউনূসের ঈদুল আজহার শুভেচ্ছা বিনিময় *** করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট নিয়ে উদ্বেগ, সতর্কতার পরামর্শ সরকারের *** শহীদদের নামে কোরবানি ও মাংস বিতরণ করেছে জুলাই রেভ্যুলেশনারি অ্যালায়েন্স *** সরকার দেশের মাঝারি ও ক্ষুদ্র শিল্পের বিকাশে আন্তরিক: প্রধান উপদেষ্টা *** টিউলিপের কোনো চিঠি পাইনি, প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব *** সীমিত পরিসরে চলছে চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের চিকিৎসাসেবা *** বলিউডে অভিষেক হচ্ছে আমির খানের মা জিনাত হুসেনের

সিটি কর্পোরেশনগুলোতে নাগরিক সেবা নিশ্চিতে পদক্ষেপ নিতে হবে

সম্পাদকীয়

🕒 প্রকাশ: ০১:৪২ অপরাহ্ন, ১১ই নভেম্বর ২০২৪

#

ছবি - সংগৃহীত

ঢাকা একটি মেগা শহর। প্রায় দুই কোটি লোক বসবাস করে এই শহরে। এত বড় একটি শহরের নাগরিক সেবা নিশ্চিত করতে ২০১১ সালের ১৯শে নভেম্বর জাতীয় সংসদে স্থানীয় সরকার (সিটি কর্পোরেশন) সংশোধনী বিল পাসের মাধ্যমে ঢাকা সিটি কর্পোরেশন বিলুপ্ত করা হয়। সেই সঙ্গে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন নামে দুইটি স্বতন্ত্র সিটি কর্পোরেশন গঠন করা হয়। ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন ৩৬টি এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন ৫৬টি ওয়ার্ডের  সমন্বয়ে গঠিত হয়। প্রত্যেকটি সিটি কর্পোরেশনে একজন মেয়র, প্রতিটি ওয়ার্ডে একজন কাউন্সিলর ও তিনটি ওয়ার্ডে একজন মহিলা সংরক্ষিত কাউন্সিলর দায়িত্ব পালন করেন।

সিটি কর্পোরেশন চার্টার অনুযায়ী, ওয়ার্ড কাউন্সিলর কার্যালয় থেকে জন্মনিবন্ধন সনদ, মৃত্যুসনদ, সনদ সংশোধন, নাগরিকত্ব সনদ, চারিত্রিক সনদ, ওয়ারিশ সনদ, ভূমিহীন সনদ, টিসিবি কার্ড, বয়স্ক ও প্রতিবন্ধী ভাতার সত্যায়িত সনদসহ বিভিন্ন ধরনের সনদ দেয়া হয়। এ ছাড়া ওয়ার্ড কাউন্সিলরের কার্যালয় থেকে বিভিন্ন প্রত্যয়নপত্র, অনাপত্তিপত্র, জাতীয় পরিচয়পত্র ও ভোটার তালিকায় যাচাইকারী হিসেবে একজন কাউন্সিলরকে অনুমোদন দিতে হয়। এসব সনদ পেতে হলে সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের সই প্রয়োজন। নিয়মিত কাজের অংশ হিসেবে কাউন্সিলরের কার্যালয় থেকে মশক ও পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের কাজের তদারকি এবং টিসিবির পণ্য বিতরণের কাজও পরিচালিত হয়।

গত ৫ই আগস্ট সরকার পতনের পরপরই ঢাকার দুই সিটির প্রায় সব ওয়ার্ড কার্যালয়ে হামলা, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিতের লক্ষ্যে মেয়র কাউন্সিলরা আত্মগোপনে চলে যান। অনেককে গ্রেফতার করা হয়। এক পর্যায়ে সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ও কাউন্সিলরদের অপসারণ করে সরকার। কাউন্সিলর না থাকায় ঢাকা উত্তর ও ঢাকা দক্ষিণ সিটির আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তাদের কাউন্সিলরের নাগরিক সেবা প্রদানের নির্দেশ দিয়েছে সরকার। একজন আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তাকে ৯টি সাধারণ ও তিনটি সংরক্ষিত ওয়ার্ডের কাগজপত্রে স্বাক্ষর করতে হচ্ছে। এছাড়া অন্যান্য দাপ্তরিক কাজ তো আছেই।

ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের নাগরিক সেবা ঝিমিয়ে পড়েছে। ফলে ভোগান্তিতে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। নিয়মিত ওষুধ না ছিটানোসহ মশক কার্যক্রম তদারকির অভাবে বাড়ছে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা। একই সঙ্গে ওয়ার্ড পর্যায়ে জনপ্রতিনিধি না থাকায় জন্ম-মৃত্যু সনদ, নাগরিক ও ওয়ারিশ সনদপত্র পেতে জনগণকে দিনের পর দিন অপেক্ষা করতে হচ্ছে। যদিও এসব কাজ সম্পাদনের জন্য কর্পোরেশনের আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তারা দায়িত্ব পালন করছেন। কিন্তু কর্মকর্তারা অতিরিক্ত দায়িত্বের চাপে সব কাজ ঠিকমতো করতে পারছেন না। সেবা প্রত্যাশীদের অভিযোগ, জন্মনিবন্ধন,মৃত্যু সনদ, ওয়ারিশ সনদসহ বিভিন্ন ধরনের সেবা পেতে পদে পদে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।

ওয়ার্ড কার্যালয়ে এসে কেউ সনদ চাইলে তা আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে পাঠানো হচ্ছে। আবার সেখানে স্বাক্ষর হয়ে ওয়ার্ড কার্যালয়ে সেই সনদ ফিরে যেতে কয়েক সপ্তাহ লেগে যাচ্ছে। সেবা প্রার্থীদের অভিযোগ, যাকে সেবা প্রদানের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে তিনি একজন প্রশাসনিক কর্মকর্তা, যিনি ওয়ার্ডের জনগণকে চেনেন না। একটি হযবরল অবস্থা তৈরি হয়েছে।

সিটি কর্পোরেশনের ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের অনুপস্থিতিতে মশক নিধন কার্যক্রম মুখ থুবড়ে পড়েছে। জনগণের দাবি, মশককর্মীরা আগের মতো নিয়মিত ওষুধ স্প্রে করছে না। এ কারণে ডেঙ্গুজ্বরবাহী এডিস মশা নিধনে কার্যকর উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে না। যার কারণে কমছে না ডেঙ্গুর দাপট। প্রতিদিনই মশাবাহিত এ রোগে আক্রান্ত হয়ে হাজারো মানুষ হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন। আক্রান্তদের মধ্যে প্রতিদিনই মানুষ মারা যাচ্ছে। আর চলতি বছরে ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন প্রায় সাড়ে তিনশ জন। এই রোগে আক্রান্ত হয়েছেন প্রায় সত্তর হাজার মানুষ।

আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো বাসা-বাড়ি থেকে ময়লা সংগ্রহ। এক্ষেত্রে রাজধানীর বেশ কিছু এলাকার মানুষ বাসাবাড়ি থেকে ময়লা সংগ্রহে গাফিলতির অভিযোগ করছেন। অনেক এলাকায় দুই থেকে তিন দিন ময়লা না নেয়ার অভিযোগ রয়েছে।

বিভিন্ন সড়কের ড্রেনেজ ব্যবস্থা উন্নয়নের কাজ ঠিকাদাররা অর্ধেক করে ফেলে রেখেছেন। আগে এসব কাজ কাউন্সিলররা তদারকি করতেন। এখন তারা না থাকায় সেটির কাজ কোথাও বন্ধ আবার কোথাও ধীর গতিতে চলছে। এর ফলে সড়কে যান চলাচল যেমন বিঘ্নিত হচ্ছে, অন্যদিকে ধুলাবালিতে পরিবেশ দূষিত হচ্ছে।

এমন পরিস্থিতি শুধু ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনেই নয়। এ সমস্যা দেশের প্রতিটি সিটি কর্পোরেশনেই চলছে। মানুষের নাগরিক সেবা নিশ্চিতকরণে সরকারকে যথাযথ কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।  
 
আই.কে.জে/

সিটি কর্পোরেশন

সুখবর এর নিউজ পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

খবরটি শেয়ার করুন