ছবি: সংগৃহীত
মুক্তিযোদ্ধাদের নতুন সংজ্ঞা নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। যারা সশস্ত্রভাবে রণাঙ্গনে যুদ্ধ করেছেন, তারা মুক্তিযোদ্ধা হবেন। মুক্তিযুদ্ধকে সফল করার জন্য যারা দেশে এবং দেশের বাইরে থেকে সহযোগিতা করেছেন, কাজ করেছেন, যারা সশস্ত্র ছিলেন না, তারা মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী হিসেবে বিবেচিত হবেন।
বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সংজ্ঞা পরিবর্তন করে ‘জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (সংশোধন) অধ্যাদেশ-২০২৫’ জারি করেছে সরকার। অধ্যাদেশে নতুন সংজ্ঞায় বীর মুক্তিযোদ্ধা সম্পর্কে বলা হয়- ‘যাহারা ১৯৭১ সালের ২৬শে মার্চ থেকে ১৬ই ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশের অভ্যন্তরে গ্রামে-গঞ্জে যুদ্ধের প্রস্তুতি ও অভ্যন্তরীণ প্রশিক্ষণ নিয়েছেন এবং যেসব ব্যক্তি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের লক্ষ্যে বাংলাদেশের সীমানা অতিক্রম করে ভারতের বিভিন্ন প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে তাদের নাম অন্তর্ভুক্ত করেছিলেন এবং বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা অর্জনের লক্ষ্যে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হয়ে হানাদার ও দখলদার পাকিস্তানি সশস্ত্র বাহিনী এবং তাদের এ দেশীয় সহযোগী রাজাকার, আল-বদর, আল-শামস, তৎকালীন মুসলিম লিগ, জামায়াতে ইসলামী, নেজামে ইসলাম এবং দালাল ও শান্তি কমিটির বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেছেন, এরূপ সকল বেসামরিক নাগরিক (ওই সময়ে যাদের বয়স সরকার নির্ধারিত সর্বনিম্ন বয়সের মধ্যে); এবং
‘সশস্ত্র বাহিনী, ইস্ট পাকিস্তান রাইফেল্স (ইপিআর), পুলিশ বাহিনী, মুক্তি বাহিনী, প্রবাসী বাংলাদেশ সরকার (মুজিবনগর সরকার) ও উক্ত সরকার কর্তৃক স্বীকৃত অন্যান্য বাহিনী, নৌ কমান্ডো, কিলো ফোর্স, আনসার সদস্যরা বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হবেন।’
একই সঙ্গে অধ্যাদেশের নতুন সংজ্ঞায় ‘হানাদার ও দখলদার পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের সহযোগীর মাধ্যমে নির্যাতিত সব নারী (বীরাঙ্গনা)’ বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হবেন। পাশাপাশি ‘মুক্তিযুদ্ধকালে আহত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসাসেবা প্রদানকারী ফিল্ড হাসপাতালের সব চিকিৎসক, নার্স ও চিকিৎসা সহকারীরাও’ হবেন বীর মুক্তিযোদ্ধা।
প্রজ্ঞাপন প্রকাশের পর গণমাধ্যম বঙ্গবন্ধুসহ জাতীয় নেতাদের মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি বাতিল করা হয়েছে উল্লেখ করে খবর প্রকাশ করে। এতে বিভ্রান্তি ও বিতর্ক তৈরি হয়। চারদিকে প্রতিবাদ হয়। যার কারণে সরকার অবস্থান পরিস্কার করতে বাধ্য হয়।
প্রজ্ঞাপন নিয়ে বিতর্ক তৈরি হওয়ায় বিষয়টি পরিষ্কার করে মুক্তিযুদ্ধ-বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ জাতীয় চারনেতা মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে বিবেচিত হবেন। শেখ মুজিবুর রহমান, সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, মনসুর আলী ও কামারুজ্জামান মুক্তিযোদ্ধা। মুক্তিযুদ্ধ এ সরকার (মুজিবনগর সরকার) পরিচালনা করেছে, এ সরকারের লেজিটিম্যাসির (বৈধতা) বাইরে কাউকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। এ সরকারটাই ছিল তখন স্বীকৃত সরকার। কারণ, রণাঙ্গন তারা পরিচালনা করেছে।
মহান মুক্তিযুদ্ধে রণাঙ্গণের বাইরেও অনেকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। তাদের অবদানকে খাটো করে দেখার কোনো সুযোগ নেই। কিন্তু নতুন সংজ্ঞায় তারা মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী হয়ে গেলেন। বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। মুক্তিযুদ্ধের ৫৪ বছর পর নতুন করে মুক্তিযোদ্ধার সংজ্ঞা নির্ধারণ করা আসলে কোনো সুবিবেচনার কাজ নয়। আর এটা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাজও নয়। প্রশ্ন উঠেছে, হঠাৎ করে মুক্তিযোদ্ধার নতুনভাবে সংজ্ঞা নির্ধারণ কার স্বার্থে?
এইচ.এস/