মঙ্গলবার, ১৮ই ফেব্রুয়ারি ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
৬ই ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শারীরিক-মানসিক বিকাশের জন্য দরকার পার্ক-উদ্যান

উপ-সম্পাদকীয়

🕒 প্রকাশ: ১১:০৫ অপরাহ্ন, ২রা ফেব্রুয়ারি ২০২৫

#

রমনা পার্ক, ঢাকা

দিনকে দিন কমে যাচ্ছে রাজধানী ঢাকায় সবুজ চত্বর,পার্ক-উদ্যানসহ খোলামেলা  পরিবেশ। এই মেগাসিটিতে বিপুল পরিমাণ মানুষের জীবনে একটু স্বস্তির নিশ্বাস নিতে বেগ পেতে হচ্ছে। রাজধানীবাসীর অবসর কাটানো আর বিনোদনের জন্য পর্যাপ্ত কোনো মুক্ত পরিবেশ নেই বললেই চলে। চন্দ্রিমা উদ্যান, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, রমনা পার্ক ও বাহাদুর শাহ পার্ক, ওসমানী উদ্যানসহ হাতে গোনা কয়েকটি পার্ক বা উদ্যান রয়েছে। কিন্তু নানা অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার কারণে সে সব পার্ক বা উদ্যানগুলো থেকে সাধারণ দর্শনার্থীরা মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন।

রাজধানীবাসীর জন্য প্রাকৃতিক আলো-বাতাস গ্রহণ করার পরিসর ক্রমেই সংকুচিত হচ্ছে। খেলার মাঠ, উন্মুক্ত স্থান, উদ্যান এবং প্রাকৃতিক জলাধার সংরক্ষণ আইন-২০০০-এর তোয়াক্কা না করে পার্ক ও উদ্যানগুলোকে উন্নয়নের নামে ধ্বংস করা হচ্ছে। সর্বসাধারণের প্রবেশ সীমিত কিংবা বন্ধ রাখা হচ্ছে। 

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা অনুযায়ী, শিশু-কিশোরদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশের জন্য প্রতিদিন ন্যূনতম ১ ঘণ্টা করে খেলাধুলা ও শারীরিক সক্রিয় কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত থাকা প্রয়োজন। প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য ন্যূনতম ৯ বর্গমিটার সবুজ খোলা জায়গা থাকা দরকার। ঢাকা শহরের মাত্র ১৬ শতাংশ এলাকার মানুষ পার্ক-উদ্যান পরিষেবার মধ্যে বসবাস করেন। বাকি ৮৪ শতাংশ মানুষ এই সেবা থেকে বঞ্চিত।

রাজধানীতে যেখানে ২০ শতাংশ সবুজায়ন দরকার, সেখানে রয়েছে ৭ শতাংশের কম। ফলে মানুষের দম ফেলার জায়গা দিন দিন সংকুচিত হয়ে আসছে। এদিকে ঢাকায় বসবাসকারীর সংখ্যাও দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। যার কারণে সবুজের পরিসর আরও সংকুচিত হচ্ছে।

তথ্য অনুযায়ী, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকায় ৭৫টি ওয়ার্ডের মধ্যে ১১টি ওয়ার্ডে খেলার মাঠ আছে মাত্র ১২টি। বাকি ৬৪টি ওয়ার্ডে কোনো মাঠ নেই। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন এলাকার ৫৪টি ওয়ার্ডের মধ্যে ছয়টি ওয়ার্ডে আটটি খেলার মাঠ আছে। বাকি ৪৮টি ওয়ার্ডে নেই। অর্থাৎ দুই সিটি করপোরেশনের ১১২টি ওয়ার্ডে খেলার মাঠ নেই। যা আছে তা রাজধানীর জনসংখ্যার তুলনায় যৎসামান্যই বলা চলে।

বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে পার্ক-উদ্যান উন্নয়নের নানাবিধ পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছিল। পার্কগুলোকে সুন্দর ও হাঁটার পরিবেশ উপযোগী তৈরি করা হয়েছিল। কিন্তু সঠিক পরিচর্যার অভাবে সেসব  পার্ক বা উদ্যান চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।

অপরিকল্পির নগরায়ণের ফলে বাসযোগ্য মানুষের জন্য খেলাধুলা কিংবা হাঁটার জন্য মাঠ রাখা হয়নি। একটি স্বাস্থ্যসম্মত সুপরিকল্পিত নগরায়ণের জন্য জনপ্রতি ন্যূনতম ৯ বর্গমিটার জায়গার দরকার। তা হলেই কেবল একজন মানুষ প্রকৃতিবান্ধব হয়ে বেড়ে উঠতে পারে। তা না হলে ডায়াবেটিস, হৃদরোগ ও স্ট্রোকের মতো রোগে আক্রান্তের হার বেড়ে যেতে পারে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, বাংলাদেশে অসংক্রামক রোগে ৬১ শতাংশ মানুষ মারা যায়, যার অধিকাংশই রাজধানীর বাসিন্দা। অর্থ্যাৎ যারা  শারীরিক ব্যায়াম চর্চার সুযোগ পান না, তারাই এসব  রোগে আক্রান্ত হন। শিশু-কিশোরদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশের জন্য প্রতিদিন ন্যূনতম ১ ঘণ্টা করে খেলাধুলা ও শারীরিক সক্রিয় কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত থাকা প্রয়োজন। যা ঢাকা শহরের বাস্তবতায় কোনোভাবেই সম্ভব নয়।

পার্ক কিংবা  উদ্যানের অপর্যাপ্ততা একটা জাতীয় সমস্যা। শিশু-কিশোর, তরুণ-বৃদ্ধ সবার সুস্বাস্থ্যের জন্য পার্ক বা মাঠ প্রয়োজন। ঢাকা শহরে নতুন করে মাঠ করা সম্ভব না হলেও দখল হওয়া মাঠগুলো পুনরুদ্ধার করা প্রয়োজন। ব্যবহার অযোগ্য মাঠগুলোকে ব্যবহার উপযোগী করে তোলার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। শিশু-কিশোরদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশের জন্য উপযুক্ত খেলার মাঠ তৈরি করতে হবে। সর্বসাধারণের শারীরিক ও মানসিক বিকাশে প্রয়োজনীয় পার্ক বা মাঠ তৈরির বিকল্প নেই।

আই.কে.জে/  

পার্ক-উদ্যান

সুখবর এর নিউজ পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

খবরটি শেয়ার করুন