ছবি: সংগৃহীত
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) নবগঠিত ‘সেন্টার ফর ব্লাড, বোনম্যারো ট্রান্সপ্ল্যান্ট অ্যান্ড স্টেম সেল থেরাপি’তে প্রথমবারের মতো সফলভাবে বোনম্যারো ট্রান্সপ্ল্যান্ট সম্পন্ন হয়েছে। এতে খরচ হয়েছে মাত্র ৩ লাখ ২২ হাজার টাকা। দেশের বেসরকারি হাসপাতালভেদে এ ট্রান্সপ্ল্যান্টেশনের খরচ ৬ লাখ টাকা থেকে ১২ লাখ টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে।
এতে রক্তরোগ মাল্টিপল মাইলোমা রোগে আক্রান্ত ৬৩ বছর বয়সী এনামুল হক স্বাভাবিক জীবনে ফেরার প্রত্যাশায় আছেন।
সোমবার (৫ই জানুয়ারি) বিশ্ববিদ্যালয়ের এফ ব্লকে বিএমটি ইউনিটে প্রথম সফল বোনম্যারো ট্রান্সপ্লান্ট নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়।
এর আগে ২০১৮ সালে বিচ্ছিন্নভাবে হেপাটোলজি বিভাগে এ ট্রান্সপ্ল্যান্ট হলেও স্থায়ী সেন্টারে এটিই প্রথম। এর মাধ্যমে স্বল্প খরচে নিয়মিত সেবা দেওয়া সম্ভব হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
সংবাদ সম্মেলেন হেমাটোলোজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মো. সালাউদ্দিন শাহ এ ট্রান্সপ্ল্যান্টেশনের কারিগরি বিষয় উপস্থাপন করেন।
সংবাদ সম্মেলেনে জানানো হয়, হেমাটোপয়েটিক স্টেম সেল বা বোন ম্যারো ট্রান্সপ্ল্যান্টেশন ৪৭ রোগের আধুনিকতম চিকিৎসা মধ্যে অন্যতম। সারা পৃথিবীতে লিউকেমিয়া, লিম্ফোমা, মায়েসনাসহ রক্তের ক্যানসার আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ক্রমাগত বাড়ছে। লিউকেমিয়াসহ রক্তের ক্যানসার চিকিৎসার ক্ষেত্রে বোনম্যারো ট্রান্সপ্ল্যান্টেশনের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। থ্যালাসেমিয়া রোগীদের ক্ষেত্রেও স্থায়ী চিকিৎসা পদ্ধতি হচ্ছে হেমাটোপয়েটিক স্টেম সেল না বোনম্যারো ট্রান্সপ্ল্যান্টেশন।
রোগীর তথ্য তুলে ধরে জানানো হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের এফ-ব্লকে ক্যানসার রোগীদের চিকিৎসার জন্য স্থায়ীভাবে গত ১লা জানুয়ারি ‘সেন্টার ফর ব্লাড, বোন ম্যারো ট্রান্সপ্ল্যান্টেশন অ্যান্ড স্টেম সেল থেরারি সেন্টার’ স্থাপন করা হয়। এ সেন্টারে প্রথমবারের মতো সফল বোনম্যারো ট্রান্সপ্ল্যান্টেশন করা হয়।
‘নারায়ণগঞ্জের আড়াই হাজারের বাসিন্দা ৬৩ বছরের এনামুল হক গত চার মাস আগে নানা শারীরিক জটিলতা নিয়ে চিকিৎসা নিতে হাসপাতালে আসেন। বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর বিএসএমএমইউর হেমাটোলোজি বিভাগ নিশ্চিত করেন এনামুল হকের শরীর মাল্টিপোল মায়েলোমা বা জটিল রক্তের ক্যানসার রোগে আক্রান্ত। এরপর হেমাটোলোজি বিভাগে তার চিকিৎসা শুরু করা হয়। এক পর্যায়ে চিকিৎসকরা তার বোনম্যারো ট্রান্সপ্ল্যান্টেশনের সিদ্ধান্ত নেন।’
আরও পড়ুন: চিকিৎসকদের ওপর অযাচিত হামলা হলে উপযুক্ত শাস্তি: স্বাস্থ্যমন্ত্রী
এরই ধারাবাহিকতায় নানা প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে গত ৭ই ডিসেম্বর তাকে বিএসএমএমইউতে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসার এক পর্যায়ে তাকে অটোলোগ্যাস বোনম্যারো ট্রান্সপ্ল্যান্টেশন দেওয়ার সিদ্ধান্ত জানানো হয়। গত ১৭ই জানুয়ারি রোগীর শরীর থেকে স্টেম সেল সংগ্রহ করা হয়। ওইদিনই রোগীর কন্ডিশনিং থেরাপি দেওয়া হয়। গত ১৮ই জানুয়ারি হেমাটোলোজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. সালাউদ্দিন শাহ রোগীর শরীরে বোনম্যারো ট্রান্সপ্ল্যান্টেশন করেন। ৩০শে জানুয়ারি রোগীর নিউটোফিল রিকভারি হয়।
ট্রান্সপ্ল্যান্টেশনের ১৮ দিন পরে রোগীর শরীরের কোনো ধরনের জটিলতা দেখা যায়নি। যা চিকিৎসকরা স্বাভাবিক ও ইতিবাচক এবং বোনম্যারো সফলভাবে প্রয়োগ হয়েছে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানান।
সংবাদ সম্মেলনে বিএসএমএমইউ উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর ব্লাড, বোন ম্যারা ট্রান্সপ্লান্টেশন অ্যান্ড স্টেম সেল থেরাপি সেন্টারে প্রথম রোগী হিসেবে মাত্র ৩ লাখ ২২ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। দেশের বেসরকারি হাসপাতালভেদে এ ট্রান্সপ্ল্যান্টেশনের খরচ ৬ লাখ টাকা থেকে ১২ লাখ টাকা পর্যন্ত হয়।
খরচের তথ্য তুলে ধরে তিনি আরও বলেন, দেশে এ ধরণের বোনম্যারো ট্রান্সপ্ল্যান্টেশনের খরচ হাসপাতাল ভেদে ২০ থেকে ৩০ লাখ টাকা হয়ে থাকে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় দেশের রোগীদের যাতে বাইরে গিয়ে চিকিৎসা করাতে না হয় সেই লক্ষ্যে কাজ করছে। সরকারের প্রয়োজনীয় পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এ সেন্টারে মাসে ৩ থেকে ৫টা বোনম্যারো ট্রান্সপ্লান্টেশন করা সম্ভব। আপাতত যে অবকাঠামো রয়েছে তাতে প্রতি মাসে একটি করে বোনম্যারো ট্রান্সপ্ল্যান্ট করা সম্ভব।
এসময় তার অবর্তমানে এ সেন্টারের স্থায়ীত্ব নিশ্চিতে দ্রুত সময়ের মধ্যে সিন্ডিকেটের অনুমোদন নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন অধ্যাপক শারফুদ্দিন আহমেদ।
এসকে/
খবরটি শেয়ার করুন
