মঙ্গলবার, ২২শে জুলাই ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
৬ই শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সর্বশেষ

*** সংসদে সংরক্ষিত আসন চায় দলিত সম্প্রদায় *** উত্তরায় বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় নরেন্দ্র মোদির শোক *** সাগরিকার হ্যাটট্রিকে নেপালকে উড়িয়ে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ *** উত্তরায় বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর শোক *** হাসপাতাল এলাকায় অহেতুক ভিড় না করার অনুরোধ প্রধান উপদেষ্টার *** নিরীহদের হয়রানি না করতে অনুরোধ গোপালগঞ্জ জেলা বিএনপির *** পাইলট বিমানটিকে জনবিরল এলাকায় নেওয়ার চেষ্টা করেন: আইএসপিআর *** বিসিবির সিদ্ধান্ত বদল, স্টেডিয়ামে খাবার নিয়ে ঢুকতে মানা *** বিমান দুর্ঘটনা থেকে অল্পের জন্য বাঁচলেন অভিনেত্রী সানা *** জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের আলোচনা মুলতবি

বাংলাদেশের ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল প্রসঙ্গে যা বলছেন ভারতীয় সাংবাদিক

বিশেষ প্রতিবেদক

🕒 প্রকাশ: ১১:৩৬ অপরাহ্ন, ১০ই এপ্রিল ২০২৫

#

ছবি: সংগৃহীত

বন্দর ব্যবহার করে অন্য দেশে পণ্য রপ্তানির জন্য বাংলাদেশকে দেওয়া ভারতের ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা 'আকস্মিকভাবে' বাতিল করার ঘটনাকে 'অস্বাভাবিক' বলে বর্ণনা করছেন কোনো কোনো অর্থনীতিবিদ। তবে  অন্তর্বর্তী সরকারের বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন সুখবর ডটকমকে বলেছেন, 'ভারত ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করায় বাংলাদেশের বাণিজ্যে এর কোনো প্রভাব পড়বে না।'

বাংলাদেশকে ভারত গত কয়েক বছর ধরে ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা দিয়ে আসছিল। গত ৮ই এপ্রিল ভারতের 'সেন্ট্রাল বোর্ড অব ইনডাইরেক্ট ট্যাক্সেস অ্যান্ড কাস্টমস' (সিবিআইসি) সেই সুবিধা বাতিল করে।

প্রাথমিকভাবে কেউ কেউ আশঙ্কা করেছিলেন, ভারতের এ সিদ্ধান্তে বাংলাদেশ হয়তো বড় কোনো সমস্যায় পড়তে যাচ্ছে। অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন  অন্তর্বর্তীকালীন সরকার থেকে বলা হচ্ছে, এতে কোনো সমস্যা দেখছে না তারা। অনেক বিশ্লেষকও বলছেন, এ ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বন্ধ হলে বাংলাদেশের তেমন কোনো সমস্যা হবে না।

প্রশ্ন উঠছে, তাহলে ভারত কেন ও কোন উদ্দেশ্যে হঠাৎ বাংলাদেশের ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করল? মূল কারণ কি? সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও এ নিয়ে রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে মনগড়া ব্যাখ্যা দিচ্ছেন অনেকে।

কেউ কেউ দাবি করছেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. ইউনূস ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সাম্প্রতিক ব্যাংকক বৈঠক নিয়ে দুই দেশের 'পরস্পরবিরোধী বক্তব্যের প্রতিক্রিয়া' হিসেবে ভারত ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা 'আকস্মিকভাবে' বাতিল করেছে। 

আবার কেউ কেউ ব্যাখ্যা করছেন, প্রধান উপদেষ্টা ও নোবেলজয়ী অধ্যাপক ড. ইউনূস সম্প্রতি চীন সফরের সময় ভারতের উত্তর পূর্বাঞ্চলের সাতটি রাজ্যে ব্যবসায়িক সম্ভাবনা নিয়ে কথা বলেছেন বলে দাবি করছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলো। ড. ইউনূসের ওই মন্তব্য নিয়ে ভারতে তোলপাড় হয়। ড. ইউনূসের ওই বক্তব্যের প্রতিক্রিয়া হিসেবে ভারত ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করেছে। 

দুটি দাবিকেই উড়িয়ে দিয়েছেন ভারতের দিল্লিস্থ 'প্রেস ক্লাব অব ইন্ডিয়া'র সভাপতি ও বিশিষ্ট সাংবাদিক গৌতম লাহিড়ী। তিনি মনে করেন, 'ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করেছে ভারত নিজের দেশের পোশাক শিল্প খাতের উদ্যোক্তাদের চাপে।' বাংলাদেশকে দেওয়া ওই ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করার চাপ শেখ হাসিনার আমল থেকে ছিল বলে তিনি জানান।

যোগাযোগ করলে গৌতম লাহিড়ী বলেন, 'ভারতের পোশাক শিল্প খাতের উদ্যোক্তারা আগে থেকেই এ সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবি জানিয়ে আসছিলেন। এতোদিন সেটা শেখ হাসিনা সরকারের সঙ্গে ভারতের সম্পর্কের কারণে বাতিলে একধরনের অসুবিধা ছিল বলে হয়তো মনে করেছে দিল্লি।'

তিনি সুখবর ডটকমকে বলেন, 'এখন যেহেতু বাংলাদেশে শেখ হাসিনার সরকার নেই, ভারতের গার্মেন্টস্ ইন্ডাস্ট্রির লোকরাও চাইছিলেন বাংলাদেশের পটপরিবর্তনের অ্যাডভান্টেজ (সুযোগ) নিতে। এমন প্রেক্ষাপটে যেহেতেু বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে সেই ধরনের সমন্বয় নরেন্দ্র মোদির সরকারের নেই, বা এখনো তৈরি হচ্ছে না, ইন্ডিয়া এ সময়েই তাই ব্যবস্থাটা করেছে। অর্থাৎ, বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করেছে।'

ভারতের গণমাধ্যমে চীনে দেওয়া ড. ইউনূসের বক্তব্যের সঙ্গে মিলিয়ে ট্রান্সশিপমেন্ট বাতিলের বিষয়টি উপস্থাপন করার চেষ্টা করা হয়েছে মন্তব্য করে গৌতম লাহিড়ী বলেন, 'এ কাকতালীয় যোগাযোগটা সাম্প্রতিক সময়ে দেখা গেছে।' তিনি দাবি করেন, 'গত কয়েক মাসে বাংলাদেশে অস্থিরতার সুযোগে ভারতের পোশাক রপ্তানির পরিমাণ বেড়েছে। সুযোগটা আরো কাজে লাগাতে ভারত বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করেছে।'

ট্রান্সশিপমেন্ট হলো এমন একটি আন্তর্জাতিক বাণিজ্যিক প্রক্রিয়া, যেখানে একটি দেশ তার পণ্য সরাসরি গন্তব্য দেশে না পাঠিয়ে মাঝপথে অন্য একটি দেশের বন্দর ব্যবহার করার মাধ্যমে রপ্তানি করে। একই প্রক্রিয়া অনুসরণ করে পণ্য আমদানিও করা হয়।

ট্রান্সশিপমেন্টের মাধ্যমে ভারতের ভূখণ্ড ব্যবহার করে বাংলাদেশের পণ্য তৃতীয় দেশে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে ২০২০ সালের ২৯শে জুন আদেশ জারি করেছিল ভারত।

প্রসঙ্গত, গৌতম লাহিড়ীর ‘প্রণব মুখার্জী: রাজনীতির ভেতর বাহির- প্রেক্ষিত বাংলাদেশ’ নামে একটি গবেষণা গ্রন্থ ঢাকার অন্যতম ঐতিহ্যবাহী প্রকাশনা সংস্থা আল হামরা থেকে প্রকাশিত হয়েছে। তিনি দীর্ঘ চার দশক ধরে সাংবাদিকতা পেশায় যুক্ত। প্রথম বাঙালি হিসেবে তিনি ভারতের জাতীয় প্রেস ক্লাবে তিনবার সভাপতিত্ব করার সুযোগ পেয়েছেন।

তিনি বাংলা, ইংরেজি ও হিন্দি ভাষায় সাংবাদিকতা করেন। তিনি ভারতের প্রথম সারির টেলিভিশন বিশেষজ্ঞ। ভাষ্যকার ছিলেন বিবিসি ও ভয়েস অব আমেরিকার। পেয়েছেন ভারতের পার্লামেন্টে বিশিষ্ট সাংবাদিকের মর্যাদা। তিনি ছিলেন ভারত সরকারের প্রেস ইনফরমেশন ব্যুরোর উপদেষ্টা কমিটির সদস্য।

এইচ.এস/

সাংবাদিক

সুখবর এর নিউজ পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

খবরটি শেয়ার করুন